পাকিস্তানে বিদু্যৎ বিভ্রাট কেন

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে গত সোমবার সকাল থেকে পাকিস্তানের বেশির ভাগ এলাকার লাখ লাখ মানুষ বিদু্যৎবিহীন অবস্থায় ছিল। পাকিস্তানে তাদের এই অভিজ্ঞতা প্রথম নয়। তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় পাকিস্তানের জনগণকে। ডনের খবর বলছে, পাকিস্তানের করাচি, কোয়েটা, লাহোরসহ বড় বড় অনেক শহরে বিদু্যৎ দিনভর নেই। দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী খুররাম দস্তগীর টুইটে বলেছেন, মঙ্গলবার পাকিস্তানে ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে বিদু্যৎ ব্যবস্থা সচল হয়েছে। তবে আগামী দুই দিন বিদু্যতের ঘাটতি থাকবে বলেন তিনি। পাকিস্তানে বিদু্যতের কেন এমন অবস্থা হচ্ছে, বিদু্যৎ গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণ কী, এসব তুলে ধরা হয়েছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে। কী ঘটেছে : পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী গত সোমবার বলেছেন, জাতীয় গ্রিডের সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি পাকিস্তানের সময় সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বিকল হয়। এরপর দেশটির বিদু্যৎ ব্যবস্থায় বড় বিপর্যয় হয়। মন্ত্রী খুররাম দস্তগীর রয়টার্সকে বলেন, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ভোল্টেজ অনেক বেড়ে যাওয়ায় পুরো বিদু্যৎ নেটওয়ার্কের ওপর প্রভাব পড়েছে। বিপর্যয়ের কারণ :পাকিস্তান আমদানি করা প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে এক-তৃতীয়াংশের বেশি বার্ষিক বিদু্যৎ চাহিদা মেটায়। তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে এই খরচ বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্মসূচির অধীন তহবিল পেতে সাম্প্রতিক দেরির কারণে বিদেশ থেকে জ্বালানি কিনতে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে পাকিস্তান। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যা আছে, তাতে মাত্র এক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। পাকিস্তানের সরকার বিদু্যৎ বাঁচাতে মল, রেস্তোরাঁ, বাজার প্রতিদিন রাত সাড়ে আটটার মধ্যে বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে। স্কুল, হাসপাতাল ও কারখানায় বিদু্যৎ সরবরাহ রাখতে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়াতে চেষ্টা করছে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদু্যৎ থাকে না। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বিদু্যৎ বেশি যায়। শীতকালে বিদু্যতের আসা-যাওয়ার হার কমে। তবে জ্বালানির খরচ বাঁচাতে শীতেও দেশটির অনেক এলাকায় বিদু্যৎ থাকছে না। গত বছর গরমে পাকিস্তানে তীব্র দাবদাহ ছিল। গ্যাসের ঘাটতি ও বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পাকিস্তানে প্রায়ই বিদু্যৎ থাকে না। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ যখন থাকে না, তখন বৈদু্যতিক গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। অনেক সময় বিদু্যৎ ব্যবহারের ধরন বা বদলের কারণেও এমন বিপর্যয় হয়। এই পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয় তখন, গ্রিড থেকে যখন সব বিদু্যৎ উৎপাদন স্টেশনগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ফলে বস্ন্যাকআউটের মতো পরিস্থিতি হয়। পাকিস্তানে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণ আসলে কী, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে চাহিদার তুলনায় জোগান কমে গেলে বিদু্যৎ গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি কমে যায়। জ্বালানিমন্ত্রী জিয়ো টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, শীতে বিদু্যতের চাহিদা কম থাকায় রাতে কিছু বিদু্যৎ জেনারেটর গ্রিড থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বিদু্যৎ বাঁচাতেই এমন করা হয়। তবে সোমবার সকালে যখন বিদু্যৎ জেনারেটরগুলো গ্রিডে সংযুক্ত করা হয়, তখন হঠাৎই ভোল্টেজের ওঠানামা হয়। এরপর বিদু্যৎ উৎপাদন ইউনিটগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যায়। কী ধরনের বিদু্যৎ জেনারেটরগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, তা দস্তগীর বলেননি। তবে গ্যাসের ঘাটতির কারণে গ্রিডের সক্ষমতায় প্রভাব পড়তে পারে। গ্যাস-চালিত ও হাইড্রো পাওয়ার কেন্দ্রগুলো ভোল্টেজের ওঠানামা সামাল দিতে পারে। তবে কয়লা, পরমাণু জ্বালানিচালিত কেন্দ্রগুলো তা পারে না। দস্তগীর রয়টার্সকে বলেছেন, বিদু্যৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। জাতীয় গ্রিডের ১ হাজার ১১২টি স্টেশন সচল করা হয়েছে। তবে আরও দুদিন বিদু্যতের সংকটে ভুগতে হবে পাকিস্তানবাসীকে।