শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
রাশিয়ার সেনা অভিযান

বাখমুতে আত্মসমর্পণ করবে না কিয়েভ :জেলেনস্কি

ম ইউক্রেনীয় 'দুর্গে' তুমুল আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে রুশ সেনারা ম দূরপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্রসহ ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকা
যাযাদি ডেস্ক
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি

ইউক্রেনের পূর্ব দিকের দোনবাস অঞ্চলের বাখমুত শহরে কোনোভাবেই তারা আত্মসমর্পণ করবেন না বলে জানিয়েছেন, দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মস্কোর সেনারা ইউক্রেনীয় ওই 'দুর্গে' তুমুল আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, গত দুই মাস সর্বশক্তি প্রয়োগ করে গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ সেনারা। তিনি বলেছেন, 'যতক্ষণ সম্ভব, ততক্ষণ বাখমুতের জন্য লড়াই করা হবে।' গত কয়েক মাস ধরেই দুই পক্ষের লড়াইয়ের কেন্দ্রে অবস্থান করছে এই শহর। সংবাদসূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা

শুক্রবার রাজধানী কিয়েভে এক সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ইউক্রেনকে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্ত করে নিতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ইইউর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। সেখানেই এমন হুঁশিয়ারি দেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, 'কেউ বাখমুতে আত্মসমর্পণ করবে না। যতক্ষণ সম্ভব আমরা লড়াই করব।' জেলেনস্কি আরও বলেছেন, 'যদি অস্ত্র সরবরাহ ত্বরান্বিত করা হয়, বিশেষ করে দূরপালস্নার অস্ত্র, আমরা বাখমুত থেকে সরে যাব না, আমরা দোনবাসকে দখলমুক্ত করা শুরু করব।'

রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে চারদিক থেকে বাখমুত ঘিরে ফেলছে তাদের সেনারা। বিশেষ করে একটি মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে রুশ বাহিনী। যে সড়ক দিয়ে ইউক্রেনের সেনাদের কাছে রসদ সরবরাহ করা হয়।

এদিকে, ইইউর কর্মকর্তাদের কাছে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি চান দ্রম্নত সময়ের মধ্যে ইউক্রেনকে যেন এই জোটের সদস্য করে নেওয়া হয় এবং চলতি বছরেই এ নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন তিনি। উলেস্নখ্য, রাশিয়া হামলা করার পর ২০২২ সালের জুনে ইউক্রেনকে ইইউর 'সদস্য প্রার্থী' করা হয়। তবে পূর্ণ সদস্য হতে কিয়েভকে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।

তবে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লায়েন ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল উভয়েই কিয়েভের সম্মেলনে ইউক্রেইনের প্রতি ইইউর অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জোটে কিয়েভকে নিয়ে নেওয়ার কথা জোর দিয়ে বলতে গিয়ে মিশেল বলেছেন, 'ইউক্রেনই ইইউ, ইইউ ইউক্রেন। আপনাদের ভবিষ্যৎ আমাদের সঙ্গে। আপনাদের ভাগ্যই আমাদের ভাগ্য।' শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে সদস্যপদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেন 'উলেস্নখ করার মতো প্রচেষ্টা' চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে ইইউ। কিন্তু কিয়েভকে আরও সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে বলেছেন তারা।

দূরপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্রসহ ইউক্রেনকে

আরও অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকা

আমেরিকা, ফ্রান্স ও ইতালি ইউক্রেনে আরও অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকার হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র এবং গ্রাউন্ড লঞ্চড স্মল ডায়ামিটার বোম্বস থাকবে। শুক্রবার মার্কিন সেনা সদর দপ্তর পেন্টাগন ঘোষণা করেছে, তারা ইউক্রেনকে নতুন করে ২২০ কোটি ডলারের অস্ত্রের প্যাকেজ সরবরাহ করবে। এই প্যাকেজের মধ্যে রকেট প্রপেল চালিত বোমা থাকবে।

ইউক্রেনের সেনারা বর্তমানে এই ধরনের রকেট চালিত বোমা ব্যবহার করছে, তবে তার চেয়ে নতুন চালানের বোমার পালস্না হবে দ্বিগুণ। পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট রাইডার এই বোমা সম্পর্কে বলেছেন, নতুন চালানের বোমা পাওয়ার পর ইউক্রেনের সেনাদের দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সক্ষমতা বাড়বে। এই ধরনের বোমা ১৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যে নির্ভুল আঘাত হানতে পারে বলে তিনি জানান।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার সাংবাদিকদের বলেছেন, 'যখন কোনো সামরিক অভিযানের বিষয়ে ইউক্রেনের পরিকল্পনার কথা আসে, তখন এটা বলা যায় যে, এসব সামরিক অভিযান মূলত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু বলার নেই।'

গত বছরের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আমেরিকা কিয়েভ সরকারকে দুই হাজার ৯০০ কোটি ডলারের অস্ত্র দিয়েছে।

এদিকে, ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার ঘোষণা করেছে, ফ্রান্স ও ইতালি ইউক্রেনকে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র দিতে একমত হয়েছে। মধ্যম পালস্নার এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে আসা ক্ষেপণাস্ত্র অথবা যুদ্ধবিমান কিংবা ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম। রাশিয়া বারবার হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও আমেরিকা ও তার মিত্ররা এসব অস্ত্র দেওয়ার কথা ঘোষণা করল।

রাশিয়া বলছে, পশ্চিমাদের এসব অস্ত্র ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না, বরং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে। এছাড়া গত মাসে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রম্নশেভ বলেছিলেন, ন্যাটো জোটের বিভিন্ন সদস্যের ইউক্রেন সংঘাতে জড়িত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে এই যুদ্ধ এখন মস্কো ও পশ্চিমা সামরিক জোটের মধ্যকার যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।

ইউক্রেনকে ট্যাংক দেওয়া পশ্চিমাদের

'সব থেকে বড়' ভুল :সার্বিয়া

এদিকে, ইউক্রেনকে ট্যাংক দেওয়ার সিদ্ধান্তকে পশ্চিমাদের বড় ভুল বলে মন্তব্য করেছেন সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচ। শুক্রবার তিনি বলেন, পশ্চিমাদের এভাবে প্রধান যুদ্ধ ট্যাংক দেওয়ার বিষয়টি বড় পর্যায়ের 'ভুল গণনা'। মস্কো এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এসব ট্যাংক ইউক্রেনে প্রবেশ করা মাত্রই এগুলোকে ধ্বংস করা হবে এবং পশ্চিমাদের এমন পদক্ষেপের জবাব শুধু যুদ্ধযানের মাধ্যমেই দেওয়া হবে না।

সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনকে লিওপার্ড-২ এর মতো ট্যাংক সরবরাহ করা ছিল পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ভুল। কারণ এই পদক্ষেপের কারণে রাশিয়ানরা আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, যা ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি।

গত মাসে জার্মানি ও আমেরিকা ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক এসব ট্যাংক সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে। এর অধীনে ইউক্রেন ৩১টি আব্রামস এবং ১৪টি লিওপার্ড-২ ট্যাংক পাবে। এছাড়া শতাধিক পুরোনো ট্যাংকও পাঠানো হবে ইউক্রেনে। এছাড়া অন্য যেসব ন্যাটো দেশ ইউক্রেনকে লিওপার্ড দিতে চাইবে, তাদেরকেও সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছে বার্লিন। পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, স্পেন এবং নেদারল্যান্ডসও ইউক্রেনকে ট্যাংক দিতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তারাও এক ডজনের বেশি চ্যালেঞ্জার ট্যাংক দেবে ইউক্রেনকে। ট্যাংক না দিলেও ভারী যুদ্ধযান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা।

ট্যাংক দেওয়ার এই ঘোষণার কঠিন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটি বলছে, এমন পদক্ষেপ এই যুদ্ধকে অন্য মাত্রায় বিস্তৃত করবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নাৎসি জার্মানির ট্যাংক পাঠানোর ইতিহাস এবং তার পরিণতির কথা তুলে ধরে হুমকি দিয়েছেন। তবে মস্কো এবার শুধু অস্ত্রের মধ্যেই জবাব দেয়া সীমিত রাখবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তবে শুধু রাশিয়া নয়, অন্য অনেক দেশও ট্যাংক পাঠানোর এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। ন্যাটো সদস্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোগান বলেন, ট্যাংক পাঠানোর এই ঘোষণা যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করবে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান জার্মানির এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান। বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমশ ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের অংশ হয়ে উঠছে। কিয়েভকে অস্ত্র দেওয়ার পরিবর্তে পশ্চিমাদের উচিত শান্তি আলোচনা শুরু করা। একই কথা বলেছেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্টও। এবার সার্বিয়ার প্রেসিডেন্টও পশ্চিমাদের ট্যাংক দেয়ার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে