লুহানস্কে জড়ো হচ্ছে রুশ সেনারা

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দোনবাসের লুহানস্কে সেনা ও যুদ্ধ সরঞ্জাম জড়ো করছে রাশিয়া। লুহানস্কে ইউক্রেনের নিযুক্ত গভর্নর সের্হি হাইদাই এমন তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, যে কোনো সময় হামলা শুরু করতে পারে রুশ বাহিনী। সোমবার ইউক্রেনীয় টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা দেখছি আমাদের দিকে আরও রিজার্ভ সেনা মোতায়েন করছে রাশিয়া। আরও যুদ্ধ সরঞ্জাম আনা হচ্ছে।' সংবাদসূত্র : গার্ডিয়ান, পার্স টুডে, রয়টার্স, এএফপি গভর্নর সের্হি হাইদাই বলেন, 'তারা যেসব অস্ত্র আনছে, সেগুলো আগে অন্যভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তারা এখন দিন-রাত টানা গোলা ছুড়ছে না। গোলাবারুদ জমিয়ে রাখছে বড় হামলার জন্য। রিজার্ভ সেনা মোতায়েন করতে তাদের ১০ দিন সময় লাগবে। ১৫ ফেব্রম্নয়ারির পর আমরা ধারণা করছি, যে কোনো মুহূর্তে হামলা শুরু হবে।' এদিকে, সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম 'নিউইয়র্ক টাইমস' এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউক্রেনের পূর্বদিকে যুদ্ধরত ইউক্রেনীয় সেনারা জানিয়েছে, রুশ সেনাদের তুলনায় তাদের সেনা সংখ্যা এখন কম। এ ছাড়া পর্যাপ্ত অস্ত্রও নেই। পাশাপাশি সেখানকার বেসামরিক বাসিন্দারাও চিন্তায় আছেন, তারা কি অন্য কোথাও চলে যাবেন, নাকি থেকে যাবেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ার নতুন হামলা কবে শুরু হবে, সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। যদিও এর আগে রুশ বাহিনীর রাজধানী কিয়েভ দখল করার পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু রাশিয়া এখন নতুন সেনা জড়ো করেছে। যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনের পূর্ব দিকে যে সংখ্যক সেনা প্রবেশ করেছিল, বর্তমানে সেই সংখ্যক সেনা নিয়েই এগিয়ে আসছে তারা। এদিকে, গত কয়েক মাস দোনবাসের দোনেৎস্কের বাখমুত শহর দখল করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। বলা হচ্ছে, শহরটিতে অবস্থানরত ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলছে তারা। আর তাই যে কোনো সময় বাখমুত থেকে নিজ সেনাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যদিও কয়েক দিন আগে তিনি বলেছিলেন, যতক্ষণ সম্ভব বাখমুতের দখল ধরে রাখবেন তারা। 'বিশ্ব একটি বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে' রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাত আরও বেড়ে গেলে তা গোটা বিশ্বকে একটি 'বৃহত্তর যুদ্ধের' দিকে নিয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি সোমবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার প্রায় এক বছরের মাথায় এই ভাষণ দিলেন গুতেরেস। তিনি বলেন, 'আমাদের জীবনের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় আমরা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০২৩ সাল শুরু করছি। ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা স্তিমিত হয়ে আসছে। বিশ্ব একটি বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় রুশ ভাষাভাষি অধু্যষিত দোনবাস অঞ্চলকে বেসামরিকীকরণের লক্ষ্যে গত বছরের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করেন। আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো এই অভিযানকে 'পুতিনের ভূমি দখল' বলে উলেস্নখ করেছে। এসব পশ্চিমা দেশ মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে রাশিয়া বলছে, ইউক্রেন মস্কোর একগুচ্ছ দাবি মেনে নিলে সামরিক অভিযান বন্ধ হবে। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে, ইউক্রেনকে এই অঙ্গীকার করতে হবে, সে কখনো ন্যাটো জোটে যোগ দেবে না। তবে ইউক্রেনকে এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো অঙ্গীকার করতে শোনা যায়নি।