বিক্ষোভে ফের উত্তাল ফ্রান্সের রাজপথ

গ্রেপ্তার ২০ জন

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন স্থানে শনিবার দশম সপ্তাহের মতো রাজপথে নেমেছেন দেশটির ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীরা। এদিন বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখেঁা এবং পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে Ñএএফপি
ফ্রান্সজুড়ে শনিবার রাজপথে নেমেছেন দেশটির ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীরা। এ নিয়ে দাবি আদায়ে টানা দশম সপ্তাহের মতো রাস্তায় নামলেন তারা। রাজপথে নামা হাজারো বিক্ষোভকারীর প্রতিবাদ এক পযাের্য় সহিংসতায় রূপ নেয়। রাজধানী প্যারিসসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখেঁার বিরুদ্ধে ¯েøাগান দেয়। একই সঙ্গে পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধেও আওয়াজ তোলে তারা। সংবাদসূত্র : এএফপি বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ ওয়াটার ক্যানন ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করলে এক পযাের্য় শান্তিপূণর্ বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ও বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এদিনের বিক্ষোভে শুধু প্যারিস থেকেই অন্তত ২০ বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, প্যারিসের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন প্রায় সাত হাজার বিক্ষোভকারী। আর ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা ২৭ হাজার। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফ্রান্সজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ৮০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। ফ্রান্সের রাস্তায় চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ১০ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ম্যাখেঁা জ্বালানি তেলের কর বৃদ্ধি বাতিল এবং অবসরভাতা ও ওভারটাইমের আয়ের ওপর থেকে কর প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। নূন্যতম মজুরিও সাত শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, আন্দোলনকারীদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে দেশজুড়ে তিন মাস ধরে আলোচনা চলবে। কিন্তু দীঘির্দন ধরে অথৈর্নতিকভাবে উপেক্ষিত ফ্রান্সের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জনগণ আশ্বস্ত হয়নি। তারা রাষ্ট্রের নীতি নিধার্রণী প্রক্রিয়ায় কাঠামোগত পরিবতর্ন চায়। ফরাসি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি লাখ লাখ মানুষের দাবিকে অগ্রাহ্য করছেন। অন্যদিকে, ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্দোলনকারীদের দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। ফ্রান্সের মোটরযান আইন অনুযায়ী, বেশি আলো প্রতিফলিত করে এমন এক ধরনের বিশেষ নিরাপত্তামূলক জ্যাকেট গাড়িতে রাখতে হয় চালকদের। এর রঙ সবুজাভ হলুদ (ইয়োলো)। আন্দোলনকারীরা এই জ্যাকেট (ভেস্ট) পরে বিক্ষোভের সূচনা করেছিল বলে আন্দোলনটি পরিচিতি পায় ‘ইয়েলো ভেস্ট’ নামে। এই আন্দোলনের কোনও ঘোষিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেই। গত নভেম্বরে শুরু হওয়া তাদের কমর্সূচিতে উত্তাল হতে শুরু করে প্যারিসসহ ফ্রান্সের বড় বড় সব শহর। জ্বালানি তেলের ওপর কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে সেইসব মানুষ, অথৈর্নতিক চাপে যারা এমনিতেই পযুর্দস্ত। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে উঠে এসেছে যে, ফ্রান্সের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখেঁা ও তার সরকারের ওপর অখুশি। বেশির ভাগ লোকজন পরিবারের আয় ব্যাপক হারে বাড়াতে সরকারের আরও পদক্ষেপ চায়। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদুক্সা অ্যান্ড দেন্তসু কনসাল্টিং ফর ফ্রান্সইনফো এবং সংবাদপত্র ফিগাহো পরিচালিত যৌথ জরিপে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মাত্র ২৫ শতাংশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষমতায় আসেন এমানুয়েল মাখেঁা। দুই মাস ধরে হলুদ জ্যাকেট পরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রদশর্ন চলে ফ্রান্সের সড়কজুড়ে। এই বিক্ষোভ ‘ইয়েলো ভেস্ট’ নামে ব্যাপক প্রচারও পেয়েছে। এই ‘ইয়েলো ভেস্ট’ বিক্ষোভ ম্যাখেঁা সরকারকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। জ্বালানি খাতে কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তসহ বেশকিছু নীতির ব্যাপারে নমনীয় হতে বাধ্য হন ম্যাখেঁা।