শীষর্ ২৬ জন ধনীর সম্পত্তি বিশ্বের অধের্ক দরিদ্র মানুষের সমান

অক্সফামের প্রতিবেদন

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বের সম্পত্তি কেন্দ্রীভূত হওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছে দাতব্য প্রতিষ্ঠান অক্সফাম। বিশ্ব অথৈর্নতিক সম্মলনকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অক্সফাম জানিয়েছে, বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধেের্কর (৩.৮ বিলিয়ন) মানুষের মোট সম্পত্তির সমান সম্পদ রয়েছে বিশ্বের ২৬ জন শীষর্ ধনীর কাছে। প্রতিবেদনটিতে তারা আরও জানিয়েছে, ২০১৮ সালের বিশ্বের ধনীরা আরও ধনী হয়েছে এবং দরিদ্ররা হয়েছে আরও দরিদ্রতর। সম্পত্তির এই বিশাল ব্যবধানের কারণে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদি শীষর্ ধনীদের আয়ে ১ শতাংশ সম্পদ কর আরোপ করা হয় তাহলে বছরে ৪১৮ বিলিয়ন ডলার অথর্ আসবে। এই অথর্ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে না এমন শিশুদের শিক্ষা দেয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে ৩০ লাখ মৃত্যু এড়ানো যাবে। অক্সফামের মতে, বিশ্বের ২২০০ বিলিওনিয়ারের সম্পত্তির মূল্য ২০১৮ সালে বেড়েছে ৯০০ বিলিয়ন ডলার, প্রতিদিন বেড়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের ধনকুবেরদের সম্পত্তি বৃদ্ধির হার ১২ শতাংশ। বিপরীতে বিশ্বের দরিদ্র অধের্ক মানুষের সম্পত্তি কমেছে ১১ শতাংশ। এর ফলে বিশ্বের অধের্ক মানুষের সমান সম্পত্তি জমা হয়েছে বিলিওনিয়ারদের হাতে। প্রতিবেদনটিতে আরও উঠে এসেছে, আথির্ক মন্দার পর গত দশ বছরের বিলিওনিয়ারদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের প্রতি দুই দিন অন্তর নতুন একজন বিলিওনিয়ার হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ধনীদের ১০ শতাংশের তুলনায় দরিদ্রতম ১০ শতাংশ মানুষ উচ্চহারে কর দিচ্ছেন। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জেফ বোজেসের সম্পত্তি বেড়েছে ১১২ বিলিয়ন ডলারে। তার এই সম্পত্তির মাত্র ১ শতাংশ ১০৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ ইথিওপিয়ার পুরো স্বাস্থ্য বাজেটের সমান। অক্সফামের প্রচারণা ও নীতিবিষয়ক পরিচালক ম্যাথিউ স্পেনসার বলেন, চরম দারিদ্র্যে বাস করা মানুষের সংখ্যা কমে আসা গত শতকের শেষাধের্র বড় অজর্ন। কিন্তু ক্রমবধর্মান অসমতা ভবিষ্যতে এই খাতের অগ্রগতিকে জটিল করে তুলেছে। আমাদের অথর্নীতি যে পথে চলছে তাতে সম্পত্তি ক্রমবধর্মানভাবে এবং অন্যায্যভাবে কয়েকজনের কাছে জমা হচ্ছে। স্পেনসার আরও বলেন, এটা এমন হওয়া উচিত নয়। সবাইকে বেঁচে থাকার সুযোগ দেয়ার পযার্প্ত সম্পদ রয়েছে পৃথিবীতে। সরকারগুলোর উচিত সম্পদ ও ব্যবসায়ীদের কর বাড়ানো। যাতে করে তারা জনগণের জীবন পরিবতের্নর জন্য উন্নত মানের সরকারি সেবা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, অনেক দেশ সরকারি সেবাখাতে বিনিয়োগ করতে ব্যথর্ হওয়ায় অসাম্যকে তীব্রতর করে তুলছে। স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২৬২ মিলিয়ন শিশু এখনও স্কুলে যেতে পারছে না, কারণ তাদের পিতা-মাতারা স্কুলের ফি, পোশাক ও বই কিনে দিতে পারছে না। এদিকে, বিশ্ব অসাম্য প্রতিবেদন ২০১৮-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৬ সাল পযর্ন্ত বিশ্বের অথৈর্নতিক প্রবৃদ্ধির প্রতি ডলারের মধ্যে মাত্র ১২ সেন্ট অজর্ন করেছে পৃথিবীর অধের্ক দরিদ্র মানুষ। বিপরীতে শীষর্ ধনী ১ শতাংশ প্রতি ডলারের ২৭ সেন্ট পেয়েছে। ধনী ও দরিদ্রের সম্পদের এই বৈষম্য অথৈর্নতিক ক্ষতির পাশাপাশি জন অসন্তোষকেও উসকে দিচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এর উদাহরণ হিসেবে ফ্রান্সের চলমান ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এই আন্দোলনের শুরু হলেও শেষ পযর্ন্ত তা সামাজিক জীবনের নানা অসংগতির প্রতিবাদ হয়ে উঠেছে। এই ক্ষোভের বড় একটি কারণ, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখেঁা ধনীদের কর রেয়াদের একটি সুযোগ দিয়েছেন। মূল্যস্ফীতির কারণে গরিবেরা জীবনধারণ করতে হিমশিম খাচ্ছে আর ধনীদের আরও ধন বাড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার এটা মেনে না নিয়ে রাস্তায় এসে বিক্ষোাভে শামিল হয়েছেন হাজারো বিক্ষোভকারী। বিশ্বব্যাপী মানুষ এখন ক্ষুদ্ধ ও হতাশ। এর অন্যতম কারণ যে সম্পদের বৈষম্য, তা তাদের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে। অক্সফামের ১০৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতি ধনী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কয়েক দশক ধরেই কম হারে কর দিচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পেরে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। ধনীদের কাছে তাই অক্সফামের আবেদন, তারা যেন তাদের সম্পদের ওপর অতিরিক্ত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কর প্রদান করেন।