ভেনিজুয়েলায় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা চরমে

বিরোধী নেতা গুইদোকে প্রেসিডেন্টের ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছেন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে সমথর্ন তুরস্ক মেক্সিকো ও বলিভিয়ার

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নিকোলাস মাদুরো
লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলার বামপন্থি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের নেতা হুয়ান গুইদোকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে বুধবার সড়কে লাখো মানুষের বিক্ষোভের মধ্যে ট্রাম্পের এই ঘোষণা আসে। সংবাদসূত্র: রয়টাসর্ অন্যদিকে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরোর প্রতি সমথর্ন জানিয়েছে তুরস্ক, মেক্সিকো ও বলিভিয়া। মাদুরোর সঙ্গে এক ফোনালাপে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘ভাই মাদুরো, আত্মবিশ্বাস রাখুন, তুরস্ক আপনার সঙ্গে আছে।’ প্রেসিডেন্ট মাদুরোর প্রতি সমথর্ন জানিয়েছেন বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট জুয়ান ইভো মোরালেস। তিনি বলেন, ‘ভেনিজুয়েলার জনগণ এবং মাদুরোর প্রতি আমরা সংহতি প্রকাশ করছি।’ ভেনিজুয়েলা ‘সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ’ মোকাবেলা করছে উল্লেখ করে ইভো মোরালেস বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকার জনগণ আর যুক্তরাষ্ট্রের আঙ্গিনায় পরিণত হবে না। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জেসাস রামিরেজ কিউভাস জানিয়েছেন, মাদুরোর প্রতি তার দেশের স্বীকৃতি অব্যাহত থাকবে।’ এর আগে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে যুক্তরাষ্ট্র্রের সমথর্ন নিয়ে নিজেকে ভেনিজুয়েলার অন্তবর্র্তীর্কালীন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন ৩৫ বছরের জুয়ান গুইদো। জুয়ান গুইদো প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের নাম ঘোষণার কয়েক মিনিটের মাথায় তাকে ‘স্বীকৃতি’ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দেশগুলোকেও একই পথ অনুসরণের পরামশর্ দিয়েছে ওয়াশিংটন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পকর্ ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশটিতে অবস্থানরত মাকির্ন কূটনীতিকদের ভেনিজুয়েলা ছাড়ার নিদের্শ দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জুয়ান গুইদোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় তিনি এই ঘোষণা দেন। নিকোলাস মাদুরো বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পকর্ ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এদিকে, এক বিবৃতিতে মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ভেনিজুয়েলার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুইদোকে আমি দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছি।’ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ভেনিজুয়েলার সাধারণ নিবার্চনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন নিকোলাস মাদুরো। তবে দেশটির বিরোধী দলসহ আন্তজাির্তক সম্প্রদায় এ নিবার্চনে কারচুপির অভিযোগ তুলে নতুন করে নিবার্চনের দাবি জানিয়ে আসছে। বিরোধীদের এমন দাবির সঙ্গে যুক্ত হয় অথৈর্নতিক মন্দা। অথৈর্নতিক সংকটে জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ শেষ পযর্ন্ত পরিণত হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে। আর ব্যাপক এই বিক্ষোভের জেরেই নিজেকে প্রেসিডেন্ট দাবি করেন বিরোধীদলীয় নেতা জুয়ান গুইদো। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই ধরনের বিবৃতি দিয়ে কানাডাও তাকে স্বীকৃতি দেয়। ভেনিজুয়েলার প্রতিবেশী ব্রাজিল ও কলম্বিয়াসহ লাতিন আমেরিকার ডানপন্থি সরকারগুলোও তাদের অনুসরণ করে। বুধবার রাজধানী কারাকাসের পূবর্ দিকে এক সমাবেশে দেয়া ভাষণে গুইদো অভিযোগ করে বলেন, মাদুরো ভেনিজুয়েলার ক্ষমতা দখল করে আছেন। লাখ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ভেনিজুয়েলার বিরোধীদল নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের প্রধান ৩৫ বছর বয়সী গুইদো বলেন, ‘এই দখলদারিত্ব শেষ করার জন্য আমি রাষ্ট্রপতির সব ক্ষমতা গ্রহণ করার শপথ নিলাম।’ এ সময় তিনি একটি অন্তবর্র্তীর্ সরকার গঠন করারও প্রতিশ্রæতি দেন। তার এই ঘোষণার পর ভেনিজুয়েলায় এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশটির বিরোধীদল এখন সমান্তরাল সরকার গঠন করতে পারবে, বিদেশি অনেক রাষ্ট্রের কাছে তারা বৈধ সরকার হিসেবে বিবেচিত হলেও রাষ্ট্রীয় কাযর্ক্রমের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। ভেনিজুয়েলার সরকার পরিবতির্ত হবে কি না, তা সশস্ত্র বাহিনীর আনুগত্যের ওপর নিভর্র করছে। এখন পযর্ন্ত তারা মাদুরোর পাশেই আছে, কারণ এ পযর্ন্ত তারা মাদুরোবিরোধী দুটি প্রতিবাদ দমন করেছে ও ভেনিজুয়েলার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকাযর্কর করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে গেছে।