ভেনিজুয়েলার সংকট বিশ্ব সমস্যা হয়ে উঠতে পারে

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভেনিজুয়েলাকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাধর দেশগুলো। এ পরিস্থিতি অনেকটাই যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবতীর্ ‘কোল্ড ওয়ার’ বা স্নায়ুযুদ্ধের ছায়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। চলমান আন্দোলনের মধ্যে, বুধবার দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা জুয়ান গুইদো নিজেকে নিজেই রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন। আত্ম-স্বীকৃত রাষ্ট্রপতি গুইদোকে এরই মধ্য রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সমথর্ন করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সমথর্নপুষ্ট গুইদোকে কালবিলম্ব না করেই সমথর্ন দিয়েছে কানাডা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও আজেির্ন্টনা। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন করে নিবার্চনের দাবি জানিয়েছে। তবে তাদের সমথর্নও গুইদোর দিকেই গেছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অদ্ভুত ঘোলাটে হয়েছে। ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক সংকটের ষোলোকলা পূণর্ হয়েছে রাশিয়া ও চীনের অংশগ্রহণে। ক্ষমতাধর এই দুই দেশ প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে অকুণ্ঠ সমথর্ন জানিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের মতই মাদুরোকে সমথর্ন দিয়েছে তুরস্ক, ইরান, মেক্সিকো, কিউবা ও অন্যান্য আরো কয়েকটি দেশ। একদিকে, গুইদো দেশটির আত্ম-স্বীকৃত রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আবিভূর্ত হয়েছেন। অন্যদিকে তাকে প্রকাশ্যে নিরঙ্কুশ সমথর্ন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবারে এলো রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া। আত্ম-স্বীকৃত রাষ্ট্রপ্রধানের দিকে ইঙ্গিত করে রাশিয়া বলেছে, এর ফলে ভেনিজুয়েলা অরাজকতা ও রক্তক্ষয়ের দিকে যাবে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এই ঘটনার পরিণতি হবে সবর্নাশা। একই দিনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ‘অনধিকার হস্তক্ষেপ’বা নাক গলানোর বিষয়ে তারা ঘোরবিরোধী। ভেনিজুয়েলার জাতীয় সাবের্ভৗমত্ব, স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতাকে সুরক্ষা দিতে চীন ভেনিজুয়েলার পাশে আছে বলেও জানানো হয়েছে। নিকোলাস মাদুরোকে দ্ব্যথর্হীন ভাষায় সমথর্ন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়েপ এরদোয়ান। তিনি তাকে ‘ভাই মাদুরো’ বলে সম্বোধন করে তার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন। ভেনিজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের অফিসিয়াল কতার্ব্যক্তিদের মধ্যে একে অপরকে দোষ চাপানো চলছে। গুইদোকে অন্তবর্র্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকৃতি দেয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সকল প্রকার কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পকর্ ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাদুরো। সম্পকর্ ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়ে মাকির্ন সকল ক‚টনৈতিককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভেনিজুয়েলা ছেড়ে যাওয়ার নিদের্শ দিয়েছেন তিনি। এই নিদেের্শর জবাবে মাকির্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ভেনিজুয়েলার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পকর্ রক্ষাথের্ তারা আর মাদুরো সরকারের সঙ্গে নয়, বরং গুইদোর মাধ্যমে যোগাযোগ করবে। ভেনিজুয়েলার সামরিক উপায় গ্রহণের বিষয়ে ২০১৭ সালে প্রথমবার উল্লেখ করেছিলেন ট্রাম্প। এবার এই চলমান সংকট কালে আবারো একইরকম বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, এখনি কোনো কিছুর পাকা সিদ্ধান্ত আমরা নিইনি কিন্তু সম্ভাব্য সকল উপায়ের কথাই ভেবে দেখা হচ্ছে। মাকির্ন গণমাধ্যমগুলোতে এই মমের্ খবর প্রকাশ হচ্ছে যে, ট্রাম্প হয়তো ভেনিজুয়েলার উপরে তেল নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছেন। কারণ ভেনিজুয়েলার রাজস্বের প্রধান উৎস তেল ক্ষেত্র। গত মাসেই রাশিয়ার সঙ্গে বড় অঙ্কের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভেনিজুয়েলা। এই চুক্তিতে রাশিয়া থেকে গম রপ্তানি এবং ভেনিজুয়েলার তেল ও মাইনিং খাতের উপরে জোর দেয়া হয়েছে। ভেনিজুয়েলাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর ক্ষমতাধর দুই পরাশক্তি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। তবে, ভেনিজুয়েলার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো ভূমিকা নিলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সরাসরি দ্ব›দ্ব এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গুইদোকে আঞ্চলিক নেতারা যেভাবে সমথর্ন জানিয়েছেন তাতে করে এটিকে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। চলমান রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার বেশ আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়ার দিকে সন্দেহের আঙ্গুল তুলেছিলেন মাদুরো। তাকে সরাতে এই দুই দেশের প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি প্রকাশ্যেই অভিযোগ আনেন। এমনকি সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়াল্ডর্ ইকনোমিক ফোরামের বৈঠকেও কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান ডিকিউ মাদুরোকে সরিয়ে ভেনিজুয়েলার মানুষকে মুক্ত করার কথা উল্লেখ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার মাদুরো সরকারকে অথার্য়ন বন্ধ করছে বলে জানিয়েছেন মাকির্ন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পকর্ ছিন্ন করার একদিন পর এই মন্তব্য করলেন জন বোল্টন। গত বুধবার ভেনিজুয়েলার অন্তবর্র্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদোকে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পকর্ ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মাদুরো। বৃহস্পতিবার জন বোল্টন হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, ইস্যুটি ‘জটিল’ হয়ে উঠেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোর পরিবতের্ গুইদোকে অথার্য়ন করার পরিকল্পনা করছেন। ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনীর সমথর্ন নিয়ে মাদুরো ক্ষমতায় আসেন। তিনি রাশিয়ার মিত্র। বুধবার হুয়ান গুয়াইদো নিজেকে ভেনিজুয়েলার অন্তবর্তীর্কালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে স্বীকৃতি দেন। ট্রাম্প বলেন, ভেনিজুয়েলার জনগণ মাদুরোর বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা আইনের শাসন ও স্বাধীনতা দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আরও জানায়, মাদুরো যদি বিরোধী দলের ঘোষণা বাতিলের চেষ্টা করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। মাদুরোর প্রতি সমথর্ন দেয়ার ক্ষেত্রে আন্তজাির্তক সম্প্রদায় এখনো দ্বিধাবিভক্ত। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কতার্ব্যক্তিরা মাদুরোর বিরুদ্ধে চাপ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছেন। বিদেশি শক্তিগুলোর গুইদোকে সমথর্ন দেয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। এটা আন্তজাির্তক আইনের লঙ্ঘন এবং রক্তক্ষয়ী সংঘষের্র দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়া। মাকির্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে এ ইস্যুতে আজ শনিবার বৈঠক করার আহŸান জানিয়েছেন। সংবাদসূত্র: বিবিসি