তোশাখানা মামলা

পুলিশ-পিটিআই কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়লেন ইমরান

তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়া তীব্র হবে হুঁশিয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে আবারও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। তোশাখানা মামলায় শনিবার হাজিরা দিতে ইসলামাবাদের দায়রা আদালতে উপস্থিত হন ইমরান। এ সময় তার সমর্থকরা আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। এরপর পুলিশের সঙ্গে পিটিআই কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংবাদসূত্র : ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, রয়টার্স দেশটির সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখে ইমরান খানকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে চলে যাওয়ার সুযোগ দেন বিচারক। ইমরান আদালত কক্ষে প্রবেশ করতে না পারলেও তিনি আদালতে উপস্থিত হয়েছেন এমনটি ধরে নেওয়া হয়। দায়রা আদালতের বিচারক জাফর ইকবাল এ ব্যাপারে বলেন, 'যা পরিস্থিতি, তাতে শুনানি চালানো সম্ভব নয়। এ কারণে এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন, তাদের এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত। টিয়ারগ্যাস ও পাথর ছোড়ার কোনো কারণ নেই। আজ শুনানি হওয়া সম্ভব নয়।' তিনি আরও জানিয়েছেন, আদালতে পিটিআই চেয়ারম্যানের উপস্থিতি যেহেতু রেকর্ড করা হয়েছে, এটি পরে ঠিক করা যাবে, আবার কবে শুনানি হবে। সংঘর্ষ, টিয়ারগ্যাস ও পাথর ছোড়ার কারণে আদালতের কার্যক্রম চালানো বাস্তবিকই অসম্ভব হয়ে পড়ে। এরপর বিচারক সিদ্ধান্ত নেন গাড়ির ভেতর থাকা ইমরান খানের স্বাক্ষর নিয়ে আজকের মতো কার্যক্রম স্থগিত করা হবে। এছাড়া সংঘর্ষের সময় ইমরান খানের 'চিফ অব স্টাফ' শিবলি ফারাজকে আটক করেছিল পুলিশ। ইমরানের আইনজীবীরা দাবি করেন, শিবলিকে মারধর করা হচ্ছে। এমনটি শোনার পর তাকে আদালত কক্ষে হাজির করার নির্দেশ দেন বিচারক জাফর ইকবাল। তার নির্দেশনা অনুযায়ী শিবলিকে উপস্থিত করা হলে তাকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এর আগে ইমরান খান এক অডিও বার্তায় জানান, আদালত প্রাঙ্গণে ১৫ মিনিট ধরে তিনি অপেক্ষা করছেন। কিন্তু পুলিশ তাকে ঢুকতে দিচ্ছে না। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী জানান, বাধা সত্ত্বেও আদালতের ভেতর ঢুকবেন তিনি। তখন আশঙ্কা তৈরি হয় আদালতে প্রবেশের পর ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হবে। কিন্তু তার সমর্থকরা তাকে ঘিরে রাখার কারণে এমন কিছু হয়নি। গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়া তীব্র হবে হুঁশিয়ারি ইমরানের এদিকে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান-তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন। তাকে যদি গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে সেই কমিটি দল পরিচালনা করবে। আর তাকে গ্রেপ্তারের তীব্র প্রতিক্রিয়া পুরো পাকিস্তানজুড়ে দেখা যাবে বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন পাকিস্তানের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী। শনিবার 'রয়টার্স'কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি। তোশাখানা মামলায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারে যে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, শনিবার আদালতে সেই মামলার শুনানিতে অংশ নেওয়ার আগে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। গত বছর ক্ষমতাচু্যত হওয়ার পর দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সাবেক এই ক্রিকেট কিংবদন্তি। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার ব্যর্থ চেষ্টা করে। ওই সময় লাহোরের জামান পার্কের বাসভবনে তাকে গ্রেপ্তার করতে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকদের তীব্র সংঘর্ষ হয়। শনিবার আদালতে যাওয়ার আগে লাহোরে নিজ বাসভবনে রয়টার্সকে ৭০ বছর বয়সি ইমরান খান বলেন, 'আমি একটি কমিটি করেছি, যদি আমি কারাগারে থাকি, তাহলে এই কমিটি স্পষ্টতই সিদ্ধান্ত নেবে।' তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় ৯৪টি মামলা আছে বলে জানিয়েছেন সাবেক এই পাক প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের নভেম্বরে পিটিআইয়ের এক সমাবেশে আততায়ীর গুলিতে আহত হয়েছিলেন ইমরান খান। তিনি বলেছেন, বর্তমানে তার জীবনের জন্য হুমকি আগের চেয়ে বেশি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সামরিক বাহিনী তাকে এই বছরের শেষের দিকের নির্বাচনে দাঁড়ানো থেকে বাধা দিতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে এই বিষয়ে কোনো ধরনের প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং দেশটির সরকার তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।