আকস্মিক সফর

আইসিসিকে 'থোড়াই কেয়ার' পুতিনের

গাড়ি চালিয়ে ঘুরলেন ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করে নেওয়া শহর মারিউপোল ক্রিমিয়া আত্মীকরণের নবম বার্ষিকীতে ওই ভূখন্ডও সফর করেছেন তিনি

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চলার সময়ই শনিবার রাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিউপোল সফর করেন। সেখানে তিনি পৌঁছালে স্থানীয় কর্মকর্তারা তাকে স্বাগত জানান -দ্য হিল
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়াকে 'থোড়াই কেয়ার' করে ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করে নেওয়া অন্যতম শহর মারিউপোল সফর করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। এমনকি সেখানে বিভিন্ন স্থান ঘুরেছেন নিজেই গাড়ি চালিয়ে। পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম যখন বলছে, পুতিন ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছেন না, তখনই তিনি গাড়ি চালালেন মারিউপোলে। এর আগে ক্রিমিয়া সেতুতেও গাড়ি চালিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে এবার বলা হচ্ছে, পুতিন রাতের আঁধারে মারিউপোল সফর করেছেন। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি গত বছরের মে মাসে দোনেৎস্ক অঞ্চলের অন্যতম এই শহরটি দখল করে নেয় রুশ বাহিনী। শনিবার রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি চালিয়ে ঘুরেছেন পুতিন। গত বছর ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর এই প্রথম নতুন দখলকৃত অঞ্চলে প্রকাশ্য সফরে যান। যুদ্ধ শুরুর পর রুশ প্রেসিডেন্ট কখনোই যুদ্ধক্ষেত্রের এতটা কাছে যাননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে অবশ্য একাধিকবার কিয়েভের সেনাদের মনোবল বাড়াতে যুদ্ধ চলছে, এমন এলাকাগুলো সফর করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, পুতিন বেশিরভাগ সময় নিজেকে ক্রেমলিনের ভেতরেই আবদ্ধ রেখেছেন। তবে এবার সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি। রুশ সংবাদ মাধ্যম খবর দিচ্ছে, পুতিন হেলিকপ্টারে চড়ে মারিউপোল শহরে গিয়ে নামেন এবং অন্ধকারের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে শহরটির বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন। তিনি শহরের কিছু বাসিন্দার সঙ্গেও কথা বলেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মারিউপোল মস্কো সরকারের জন্য একটি বিরল সামরিক সাফল্যের প্রতীক এবং রুশ নেতার এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে- ইউক্রেন যুদ্ধে যে তারা সফল হচ্ছে, তা সবাইকে দেখানো। গত শুক্রবার দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলিরা প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে গোটা বিশ্ব যখন সরগরম, তখনই তিনি এই সফর করলেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মনে হচ্ছে, ভস্নাদিমির পুতিন দৃশ্যত অধিকৃত ইউক্রেনে বর্ধিত সফর করেছেন। শনিবার তিনি সফর করেন ক্রিমিয়া, রাতে সফর করেন মারিউপোল শহর। মারিউপোল দক্ষিণ দোনবাস অঞ্চলের একটি শিল্প বন্দর শহর। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে শহরটি ছিল ইউক্রেনীয় প্রতিরোধের প্রতীক। এই শহরের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ বাহিনী কয়েক মাস ধরে রুশ বাহিনীকে ঠেকিয়ে রেখেছিল। মারিউপোল একই সঙ্গে কথিত যুদ্ধাপরাধেরও একটি অকুস্থল, যেখানে রুশ বাহিনী একটি প্রসূতি হাসপাতাল এবং একটি থিয়েটার, যেখানে বেসামরিক লোকজন আশ্রয় নিচ্ছিল, তার ওপর বোমা বর্ষণ করেছিল বলে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে। রুশ নিউজ চ্যানেল 'রোসিয়া-২৪' ক্রেমলিনের প্রেস-সার্ভিসের উদ্ধৃতি দিয়ে জানাচ্ছে, মারিউপোল সফরের সময় তার সঙ্গে ছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুলিন, যিনি তাকে শহরের পুনর্র্নির্মাণ সম্পর্কে অবহিত করেন। সফরের সময় পুতিন স্থানীয় এক পরিবারের আমন্ত্রণে তাদের বাড়িতেও গিয়েছিলেন বলে বলা হয়েছে। তবে টিভি প্রতিবেদনে পরিবারটির সঙ্গে দেখা করার ওপর কোনো ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি। ভস্নাদিমির পুতিন একই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়ার রস্তভ-অন-দন শহরে 'বিশেষ সামরিক অভিযান'র কমান্ড পোস্টে একটি বৈঠকও করেন। রুশ সশস্ত্র বাহিনীর স্টাফ প্রধান ও ইউক্রেনে রাশিয়ার শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভসহ রুশ সামরিক কমান্ডাররা পুতিনকে তাদের সামরিক অভিযানের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন। ভিডিওটিতে দেখা গেছে, জেনারেল গেরাসিমভ ও পুতিন একসঙ্গে একটি সিঁড়ি বেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং জেনারেল প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞাসা করছেন, তার হাতে কতটা সময় আছে? এর জবাবে পুতিন বলেন, 'যতটা প্রয়োজন ততটা।' মারিউপোল সফরের আগে পুতিন শনিবার ক্রিমিয়া সফর করেন। ক্রিমিয়া আত্মীকরণের নবম বার্ষিকীতে পুতিন রুশ অধিকৃত ওই ভূখন্ডটি সফর করলেন। এরপরই তিনি মারিউপোল যান। পুতিন ক্রিমিয়া পৌঁছালে সেভাস্তোপলের রাশিয়া সমর্থিত গভর্নর মিখাইল রাজভোজায়েভ রুশ প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর একটি নতুন শিশুকেন্দ্র ও আর্ট স্কুলও ঘুরে দেখান পুতিনকে। রাশিয়ার কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই সফরকে 'আকস্মিক' বলে উলেস্নখ করেছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তার সফরের কোনো অনুষ্ঠান তাৎক্ষণিকভাবে সম্প্রচার করেনি। আর পুতিন যে মারিউপোল যাবেন, এমন কোনো কিছু আগে জানানো হয়নি। হঠাৎ করেই রোববার 'তাস নিউজ' তার এ সফরের কথা জানায়। মেসেজিং অ্যাপ 'টেলিগ্রামে' গভর্নর মিখাইল রাজভোজায়েভ বলেছেন, 'আমাদের প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন জানেন কীভাবে সারপ্রাইজ দিতে হয়। তিনি এটি বেশ ভালো উপায়েই পারেন।' মস্কো-নিযুক্ত এই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, 'ভস্নাদিমির ভস্নাদিমিরোভিচ ব্যক্তিগতভাবে এখানে এসেছিলেন। নিজেই গাড়ি চালিয়ে। এমন একটি ঐতিহাসিক দিনে, রুশ প্রেসিডেন্ট সর্বদা সেভাস্তোপল ও সেভাস্তোপলের জনগণের সঙ্গেই আছে।' উলেস্নখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার এবং তাকে ইউক্রেন থেকে শত শত শিশুকে অবৈধভাবে নির্বাসনের জন্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করার একদিন পর এই সফরটি অনুষ্ঠিত হলো। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র এটিকে 'অকার্যকর' বলে অভিহিত করে বলেছেন, আইসিসির উত্থাপিত বিষয়গুলোকে 'আপত্তিকর এবং অগ্রহণযোগ্য' বলে মনে করছে রাশিয়া।