'মোদি' নাম নিয়ে কটূক্তি

রাহুল গান্ধীর দুই বছরের কারাদন্ড

জামিন পেয়েছেন ৩০ দিনের জন্য এই সময়ের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন এমপি পদ থাকা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের গুজরাট রাজ্যের সুরাটের একটি আদালত মানহানি মামলায় রায়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সেই আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার আগে দিলিস্নর ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কংগ্রেসের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়েন তিনি -আউটলুক ইনডিয়া
ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীকে ফৌজদারি মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে এক নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদবি নিয়ে মন্তব্য করার কারণে বৃহস্পতিবার রাহুলের বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছে গুজরাটের সুরাটের একটি আদালত। তবে এখনই জেলে যেতে হবে না তাকে। এরই মধ্যে তিনি ৩০ দিনের জন্য জামিন পেয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন। কংগ্রেস দলের এই এমপি রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ভারতের সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে এই ঘটনা ঘটল। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এনডিটিভি, টাইমস অব ইনডিয়া গত সাধারণ নির্বাচনের আগে ২০১৯ সালে কর্ণাটক রাজ্যে এক নির্বাচনী প্রচারণায় রাহুল বলেছিলেন, 'সব চোররা কেন তাদের পদবিতে মোদি ব্যবহার করে? নিরাভ মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদি।' উলেস্নখ্য, নিরাভ মোদি হচ্ছেন ভারতের পলাতক হীরা ব্যবসায়ী। আর ললিত মোদি হচ্ছেন ইনডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সাবেক প্রধান, যার ওপর আজীবনের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। রাহুলের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছিল পুর্ণেশ মোদি নামে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক আইনপ্রণেতার অভিযোগের ভিত্তিতে, যিনি বলেছিলেন- রাহুলের মন্তব্য পুরো মোদি সম্প্রদায়ের জন্য মানহানিকর। কিন্তু অনেকেই বলছেন, তারা আসলে এই আদেশের বিষয়টি বুঝতে পারছেন না। ভারতের আইন বিশেষজ্ঞ গৌতম ভাটিয়া এক টুইটে বলেছেন, "কোনো সাধারণ একটি শ্রেণির ব্যক্তিদের নিয়ে উদ্ধৃতি'- এক্ষেত্রে পদবী- 'শাস্তিযোগ্য নয়, যদি কোনো এক বিশেষ ব্যক্তি এটা প্রমাণ করতে না পারেন যে, সেটি আসলে তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। যদি কেউ বলেন যে, 'সব আইনজীবীই চোর', তাহলে আমি একজন আইনজীবী হিসেবে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারব না, যদি এটা প্রমাণ করতে না পারি যে, এটি আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে।" এদিকে, কংগ্রেস এক টুইটে বলেছে, 'রাহুল গান্ধী আপিল করবেন এবং আমরা লড়ব ও জিতব।' রাহুল এখনো জনসম্মুখে কোনো মন্তব্য করেননি। কিন্তু তিনি হিন্দিতে মহাত্মা গান্ধীর একটি উক্তি নিয়ে টুইট করেছেন। যেখানে বলেছেন- 'আমার ধর্ম সত্য এবং অহিংসার ওপর প্রতিষ্ঠিত। সত্য আমার ঈশ্বর, আর অহিংসা হচ্ছে তাকে পাওয়ার উপায়।' তার আইনজীবী কিরিত পানওয়ালা বলেছেন, রায়ের সময় রাহুল বিচারকদের বলেছেন 'গণতন্ত্রের স্বার্থেই' তিনি এই মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, রাহুলের আত্মপক্ষে চারটি যুক্তি রয়েছে : 'প্রথমত, রাহুল গুজরাটের বাসিন্দা নন এবং সে কারণে অভিযোগ দায়েরের আগে একটি তদন্ত অনুষ্ঠানের দরকার ছিল। দ্বিতীয়ত, মোদি নামে কোনো সম্প্রদায় নেই। তৃতীয়ত, মোদি পদবী রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং চতুর্থত, রাহুলের মন্তব্যের পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নেই।' ভারতের ফৌজদারি মানহানি আইন ব্রিটিশ আমলে প্রণীত একটি আইন, যার অধীনে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে দুই বছরের কারাদন্ড বা জরিমানা বা দুটোই হতে পারে। মুক্ত মতের পক্ষে যারা কাজ করেন, প্রায়ই তারা অভিযোগ করেন, এই আইন স্বাধীনতার মূলনীতির পরিপন্থি এবং এটি রাজনীতিকরা তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করেন। ২০১৬ সালে রাহুল গান্ধীসহ শীর্ষ রাজনীতিকরা মানহানিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে একটি আইনি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আইনের বৈধতা ধরে রাখেন এই যুক্তিতে, 'মুক্ত মতের স্বাধীনতার মানে এই নয় যে, একজন নাগরিক আরেক নাগরিকের মানহানি করতে পারেন।' এই রায়ের পর রাহুলের পার্লামেন্ট সদস্য পদ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। বলা যায়, ভারতজুড়ে এই বিতর্ক এখন তুঙ্গে। ভারতে শুধু মানহানির কারণে কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করা যায় না। একজন এমপিকে তার পদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা যায়, বিরোধিতামূলক প্রচারণা থেকে শুরু করে নির্বাচনে জালিয়াতিসহ বিভিন্ন কারণে। কিন্তু যদি কোনো অপরাধের দায়ে দুই বছর বা তার বেশি কারাদন্ডে তিনি দন্ডিত হন তাহলেও তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে। নেহেরু-গান্ধী বংশের উত্তরাধিকারী হচ্ছেন রাহুল গান্ধী; যে বংশ থেকে ভারত এ পর্যন্ত মোট তিনজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। তার প্র-পিতামহ জওহরলাল নেহেরু ছিলেন ভারতের প্রথম এবং সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী। রাহুলের দাদি ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং তার বাবা রাজীব গান্ধী ছিলেন ভারতের সবচেয়ে কম বয়সি প্রধানমন্ত্রী। তাদের দল কংগ্রেস ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় পুরোটা সময় টানা শাসন করেছে। শুধু মাঝখানে কয়েকটি বছর যখন নরেন্দ্র মোদির বিজেপি বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে, সেই সময়টা ছাড়া। এরপর থেকে কংগ্রেস শুধু পুরনো দলের ছায়ায় পরিণত হয়েছে এবং ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে দলটিকে আবারও পরাজিত করে বিজেপি সরকার।