শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বেলারুশে পরমাণু অস্ত্র

পুতিনের সিদ্ধান্ত বিপজ্জনক :ন্যাটো

পরমাণু বোমা মোতায়েন করলে ইউরোপীয় ইউনিয়নও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে রাশিয়ার ৪০০ কিলোমিটার ভেতরে ইউক্রেনের ড্রোন ভূপাতিত
যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন তার মিত্র দেশ বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার কঠোর সমালোচনা করেছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। পুতিনের এমন সিদ্ধান্তকে 'বিপজ্জনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন' উলেস্নখ করে বিবৃতিতে সমালোচনা করেছে সামরিক জোটটি। এদিকে, রাশিয়া যদি প্রতিবেশী বেলারুশে পরমাণু বোমা মোতায়েন করে, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে বলে জানিয়েছে। জোটটির শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রোববার একথা বলেন। পাশাপাশি তিনি রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্তকে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন উত্তেজনা বৃদ্ধি' বলে বর্ণনা করেছেন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আরটি, বিবিসি, আল-জাজিরা ভস্নাদিমির পুতিন শনিবার বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনটি আমেরিকার পদক্ষেপের অনুরূপ, যা বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস এবং তুরস্কে ঘাঁটি রয়েছে। পুতিন আরও জানান, অল্পসংখ্যক ইস্কান্দার ট্যাক্টিক্যাল মিসাইল সিস্টেম বেলারুশে স্থানান্তর করা হয়েছে। উলেস্নখ্য, গত তিন দশক পর এই প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করবে মস্কো। কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বলতে, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত পারমাণবিক অস্ত্রকে বোঝানো হয়ে থাকে। আমেরিকা অনেক আগে থেকেই মিত্র দেশগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করে আসছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণে যাওয়ার পর পশ্চিমা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন, পুতিন ইউক্রেনে ছোট আকারে পারমাণবিক হামলা চালাতে পারেন। উলেস্নখ্য, ইউক্রেন ছাড়াও ন্যাটোভুক্ত তিনটি দেশ পোল্যান্ড, লিথুনিয়া ও লাটভিয়ার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে বেলারুশের। ৯০-এর দশকের পর এই প্রথম কোনো মিত্র দেশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে চলেছে রাশিয়া। চলতি গ্রীষ্মেই বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে চান পুতিন। যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে ডিপেস্নটেড ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ অস্ত্র দেওয়ার ঘোষণা দেয়ার জবাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো বলে জানানো হয়েছে। লন্ডন যদিও রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তকে 'বেপরোয়া' বলে আখ্যায়িত করেছে। বেলারুশ যদিও এখনই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত হয়ে আছে। গত ফেব্রম্নয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনকে 'নাৎসিমুক্ত' করতে 'বিশেষ সামরিক অভিযান' শুরু করে। সে সময় এই অভিযানে সমর্থন এবং রাশিয়াকে নিজের ভূমি ব্যবহার করতে দিয়েছিল বেলারুশ। এর ফলেই পশ্চিমাদের রোষের শিকার হয়েছে মিনস্ক। ন্যাটোর মুখপাত্র ওনা লুঙ্গেস্কু বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের পারমাণবিক অস্ত্র সম্প্রসারণের ঘোষণা এবং দেশের বাইরে আমেরিকার অস্ত্র মোতায়েনের উদাহরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ন্যাটোয় পারমাণবিক অস্ত্রের অংশীদারত্বের বিষয়ে রাশিয়া বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ন্যাটো জোট আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রম্নতির ওপর পূর্ণ আস্থা রাখে। রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্তে ওয়াশিংটনের নিজস্ব পারমাণবিক কৌশলে কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে মনে করছে ন্যাটো। এমনকি পুতিনের এই ঘোষণার পর দেশটি পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমনটাও তারা বিশ্বাস করে না বলেও মনে করা হচ্ছে। আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা আমাদের নিজস্ব কৌশলগত পারমাণবিক অবস্থানের মধ্যে সামঞ্জস্য আনার কোনো কারণ দেখিনি। আমরা ন্যাটো জোটের সম্মিলিত প্রতিরক্ষায় প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ।' ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান অলেক্সি দানিলভ টুইটারে বলেন, রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্ত বেলারুশের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার একটি পদক্ষেপ, যা জনগণকে নেতিবাচক ধারণা দেয়। ক্রেমলিন বেলারুশকে জিম্মি করে পারমাণবিক অস্ত্রের ঘাঁটি স্থাপন করছে। রাশিয়ার ৪০০ কিলোমিটার ভেতরে ইউক্রেনের ড্রোন টানা ১৩ মাসের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই অভিযানে ইউক্রেনে হামলা পরিচালনায় রুশ বাহিনী ড্রোন ব্যবহার করেছে অসংখ্যবার। অন্যদিকে, রাশিয়ার ভেতরে হামলার কাজেও সক্ষমতা অনুযায়ী ড্রোন ব্যবহার করছে ইউক্রেনও। তেমনই এক অভিযান চালাতে রাশিয়ায় ঢোকার পর ইউক্রেনীয় ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় ওই ড্রোনটি সীমান্ত থেকে রাশিয়ার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষার মাধ্যমে ইউক্রেনীয় একটি ড্রোনকে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে মস্কো জানিয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার রাশিয়ার কিরেয়েভস্ক শহরে ড্রোনটিকে ভূপাতিত করা হয়। ইউক্রেনীয় সীমান্ত থেকে রাশিয়ার এই শহরটি প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে