মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
আমেরিকার উদ্বেগ

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরখাস্ত, বিক্ষোভে লাখো মানুষ ইসরাইলে

যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
বিচার বিভাগ সংস্কারের বিষয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে সাধারণ ইসরাইলিরা। তারা বিচার ব্যবস্থা সংশোধনের জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে এই বিক্ষোভের মাধ্যমে। বিক্ষোভের ছবিটি সোমবার ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে তোলা -রয়টার্স অনলাইন

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে জেরুজালেম ও তেল আবিবে কয়েক লাখ মানুষ সোমবার রাত থেকে রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন। বরখাস্ত হওয়া ইয়োভ গ্যালান্ত দেশটির বিতর্কিত বিচার ব্যবস্থা সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনে বিক্ষোভকারীদের দমনে পুলিশ ও সেনাবাহিনী জলকামান ব্যবহার করে। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে উভয়পক্ষকে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে আমেরিকা। সংবাদসূত্র : বিবিসি

এর আগে নতুন আইন নিয়ে এক সপ্তাহের প্রতিবাদ কর্মসূচির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল বিক্ষোভকারীরা। সংস্কার পরিকল্পনার মধ্যে সরকারকে বিচারক নিয়োগকারী কমিটির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আইনপ্রণেতাদের কেউ দায়িত্ব পালনের জন্য অযোগ্য হলে, তাকে অপসারণ করাটা আদালতের জন্য আগের চেয়ে কঠিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা মনে করে, এই বিধানটি ক্ষমতাসীন নেতা নেতানিয়াহুর স্বার্থ বিবেচনা করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উলেস্নখ্য, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে দুর্নীতির একটি মামলা চলমান রয়েছে। তবে নেতানিয়াহু বলেছেন, সংস্কারের প্রস্তাব এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে তা আদালতের ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করতে পারে। এবং এজন্য জনগণ গত নির্বাচনে ভোট দিয়ে তাদের নির্বাচিত করেছে।

নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভকারীদের অনেকে, যারা ইসরাইলের পতাকা উড়িয়ে এবং হাঁড়ি-কড়াই পিটিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন, তারা পুলিশকে এড়িয়ে ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে পৌঁছায়। একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, তিনি মনে করেন, 'একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যেসব নিয়মনীতি থাকা উচিত, নেতানিয়াহু এমন সব সীমা অতিক্রম করেছেন।' তিনি আরও বলেন, 'আমাদের যতটুকু গণতন্ত্র আছে, সেটুকু রক্ষার চেষ্টা করছি আমরা এবং এভাবে আমি রাতে ঘুমাতে যেতে পারি না। এই পাগলামি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমি কিছু করতে পারছি না।'

বরখাস্ত হওয়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা, যিনি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রিজার্ভ বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে শুনে আসছেন যে, তারা আইন পরিবর্তনে অসন্তুষ্ট। মার্চের শুরুতে সরকারের প্রতি নজিরবিহীন এক বিক্ষোভে দেশটির একদল যুদ্ধবিমানের পাইলট প্রশিক্ষণে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তারা তাদের কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রশিক্ষণে যেতে রাজি হন। শনিবার রাতে প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন গ্যালান্ত। তিনি বলেন, এর ফলে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ।

টেলিভিশনে গ্যালান্তের ওই বক্তব্যের সময় নেতানিয়াহু দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। তিনি বলেন যে, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ওপর তার আর কোনো আস্থা নেই। নেতানিয়াহু চলতি সপ্তাহের শেষে নতুন আইন পার্লামেন্টে উপস্থাপন করতে চান। লক্ষ্যণীয় দিক হলো- গ্যালান্ত ও নেতানিয়াহু দুইজনই লিকুদ পার্টির সদস্য।

সদ্য বরখাস্ত হওয়া গ্যালান্ত যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান সহকর্মীদের অনেকে তখন তাকে সমর্থন করেছেন, তবে ডানপন্থী অনেকেই তাকে ঠিক পছন্দ করেনি। বরখাস্ত হওয়ার পর, গ্যালান্ত টুইটারে লিখেছেন, 'ইসরাইলের নিরাপত্তা সব সময় আমার জীবনের লক্ষ্য বা মিশন ছিল এবং থাকবে।'

ইসরাইলের বিরোধী নেতা ইয়ার ল্যাপিদ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে গ্যালান্তের বরখাস্ত হওয়াকে সরকারের 'আ নিউ লো' মানে ব্যর্থতার নতুন রূপ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, 'নেতানিয়াহু গ্যালান্তকে বরখাস্ত করতে পারেন, কিন্তু তিনি বাস্তবতা বা ইসরাইলের জনগণকে বাতিল করতে পারবেন না, যারা এই জোটের পাগলামিকে প্রতিহত করতে মাঠে নেমেছেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে