পূণার্ঙ্গ বাজেট দিয়ে প্রথা ভাঙল ভারতের মোদি সরকার

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আর মাস তিনেক পর লোকসভা ভোট, তার আগে প্রথা ভেঙে অন্তবর্র্তীর্কালীন বাজেটের বদলে ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার তাই প্রায় পূণার্ঙ্গ বাজেটই পেশ করেছে। শুক্রবার কেন্দ্রীয় যে বাজেট পেশ হয়েছে, তাতে প্রান্তিক কৃষক, অসংগঠিত ক্ষেত্রে দরিদ্র শ্রমিক ও চাকরিজীবী মধ্যবিত্তের মন জয়ের চেষ্টা হয়েছে গত পঁাচ বছরে ক্রমেই যারা সরকারের ওপর বিশ্বাস ও ভরসা হারিয়েছে। ভারতের অথর্মন্ত্রী অরুণ জেটলি অসুস্থ হয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে। তার জায়গায় বাজেট পেশ করেন অথর্ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের বিধানসভা ভোটে। কংগ্রেসের কাছে তিন রাজ্যই হারিয়েছে বিজেপি। এরই মধ্যে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ঘোষণা করেছেন, কেন্দ্রে ক্ষমতায় গেলে দরিদ্রদের জন্য ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করবেন। কংগ্রেসের প্রতিশ্রæতি ও কৃষক-ক্ষোভ মোকাবেলায় বাজেটে গোয়েল যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে বছরে বাড়তি খরচ হবে ৭৫ হাজার কোটি রুপি। প্রস্তাব অনুযায়ী, দুই হেক্টর; অথার্ৎ পঁাচ একরের (১৫ বিঘা) কৃষি জমির মালিকদের ব্যাংক হিসাবে বছরে ছয় হাজার রুপি সরকার জমা দেবে। এই রুপি জমা পড়বে দুই হাজার করে তিন দফায়। সরকারের দাবি, এতে উপকৃত হবে ভারতের ১২ কোটি প্রান্তিক কৃষিজীবী। ভারতের শিক্ষিত চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত শ্রেণি চিরকালই জনমত গঠনে প্রধান ভ‚মিকা নিয়ে থাকে। পঁাচ বছর আগের ভোটে এই শ্রেণিই ছিল প্রধানমন্ত্রী পদপ্রাথীর্ নরেন্দ্র মোদির প্রধান সমথর্ক। কমর্সংস্থান সংকুচিত হওয়া, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং কমর্হীন প্রবৃদ্ধির ফলে এই শ্রেণি ক্রমেই সরকারের কট্টর সমালোচক হয়ে উঠেছে। পীযূষ গোয়েল তার বাজেটে এই চাকরিজীবী মধ্যবিত্তদের মন জিততে কর ছাড়ে বিশেষ নজর দিয়েছেন। আয়করের ঊধ্বর্সীমা যা এত দিন পযর্ন্ত ছিল আড়াই লাখ, তা বাড়িয়ে পঁাচ লাখ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর বাইরে দেড় লাখ রুপি পযর্ন্ত বিনিয়োগে কর ছাড় ছিল। ফলে প্রস্তাব কাযর্কর হলে চাকরিজীবী মধ্যবিত্তকে সাড়ে ছয় লাখ রুপি রোজগারের ওপর কোনো আয়কর দিতে হবে না। এই বাবদ সরকারের আয় কমবে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি রুপি। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্যও একটি পেনশন প্রকল্পের কথা ঘোষিত হয়েছে। এই প্রকল্প অনুযায়ী কোনো শ্রমিক, যার মাসিক আয় ১৫ হাজার রুপির কম, ৬০ বছর বয়সের পর অবসর নিলে তিনি মাসে তিন হাজার রুপি করে পেনশন পাবেন। অস্থায়ী অথর্মন্ত্রীর দাবি, বাজেটে ঘোষিত সব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে কোষাগার ঘাটতি দঁাড়াবে মোট জাতীয় আয়ের তিন দশমিক চার শতাংশ। কৃষি, শ্রমিক ও চাকরিজীবী মধ্যবিত্তর মন পেতে তৈরি এই বাজেটকে বিরোধীরা ‘পূণার্ঙ্গ বাজেট’ বলেই অভিহিত করেছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের বছর ক্ষমতাসীন দল বরাবরই ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’ পেশ করে, যাতে দু-তিন মাসের জন্য সরকারি খরচ অব্যাহত থাকে। আথির্ক বছরের বাকি সময়ের জন্য পূণার্ঙ্গ বাজেট পেশ করে নতুন সরকার। এ ক্ষেত্রে মোদি-সরকার প্রথা ভেঙে পূণার্ঙ্গ বাজেটই পেশ করল। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই বাজেটকে ‘ভোটের বাজেট’ বলে কটাক্ষ করেছেন। সাবেক অথর্মন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেন, ‘এটা ভোট অন অ্যাকাউন্ট নয়, অ্যাকাউন্ট ফর ভোট।’ কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের প্রশ্ন, ‘ঋণ জজির্রত কৃষক বছরে ছয় হাজার রুপি (মাসে ৫০০) নিয়ে কী করবে, ভেবে পাচ্ছি না।’ বিরোধী অভিমত, এই বিপুল ছাড়ের টাকা কোথা থেকে আসবে, বাজেটে তার কোনো দিশা নেই।