ভেনেজুয়েলা সংকট

সেনার মাদুরোপ্রীতি নিরাপত্তা নিশ্চিতে!

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সেনা কমর্কতাের্দর সঙ্গে নিকোলাস মাদুরো
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা এখন রাজনৈতিকভাবে অস্থির সময় পার করছে। দেশটির এই রাজনৈতিক সংকটে খোলাখুলিই নাক গলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশ ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা জুয়ান গুইদোকে দেশটির অন্তবর্র্তীর্ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বতর্মান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর জন্য আরও খারাপ খবর হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভেনেজুয়েলার একজন শীষর্ সামরিক কমর্কতার্ তার পক্ষ ত্যাগ করেছেন এবং অন্য সামরিক কমর্কতাের্দরও একই কাজ করার আহŸান জানিয়েছেন তিনি। মাদুরোর ক্ষমতার এই নড়বড়ে সময়েও সেনাবাহিনী তার পাশে থাকছে। চাকরির সুবিধা মাদুরোর পূবর্সূরি হুগো শ্যাভেজ যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন বামপন্থি মতাদশের্ বিশ্বাসী সেনাবাহিনীর সিনিয়র কমর্কতাের্দর সরিয়ে দেন। শ্যাাভেজ নিজেও একসময় সেনা কমর্কতার্ ছিলেন। সেনাবাহিনীর ঊধ্বর্তন কমর্কতাের্দর সরিয়ে দিয়ে তিনি নিজেই সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। এর বিনিময়ে তিনি সেনা অফিসারদের নানা পদ-পদবির মাধ্যমে পুরস্কৃত করেন। শ্যাভেজ ক্ষমতা গ্রহণের আগে সেনাবাহিনী ব্যারাকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীকে ব্যারাক থেকে বাইরে নিয়ে আসেন। মন্ত্রিপরিষদে তাদের স্থান দেয়া হয়। এছাড়া ব্যাংক এবং নানা আথির্ক খাতের নিয়ন্ত্রণও দেয়া হয় সেনা সদস্যদের হাতে। হুগো শ্যাভেজের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তারই অনুসারী নিকোলাস মাদুরো। যিনি একসময় বাসচালক ছিলেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার কোনো সম্পকর্ ছিল না। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর মাদুরো তার পূবর্সূরি হুগো শ্যাভেজের দেখিয়ে পথ অনুসরণ করেন। সেনা সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা তিনি আগের মতোই বহাল রাখেন। সেনাবাহিনীও সরকারের প্রতি সমথর্ন অব্যাহত রাখে। সেনা কমর্কতার্রা মন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রভাবশালী পদে থাকেন। ভেনেজুয়েলার গুরুত্বপূণর্ খাতগুলো সেনা কমর্কতাের্দর হাতে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য বিতরণ সেবা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস কোম্পানি। শীষর্ সেনা কমর্কতার্রা এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে সেনা কমর্কতার্রা যাতে দুনীির্ত করতে পারেন, সে সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। অন্তত সমালোচকরা তাই বলে থাকে। মানবাধিকার লঙ্ঘন মাদুরোকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার বিনিময়ে সেনা কমর্কতার্রা যদি লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা পান, তাহলে তাদের কাঠগড়ায় দঁাড়ানোর ভয়ও রয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি অংশ, বিশেষ করে সিনিয়র কমর্কতার্রা প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে চান। কারণ এর বিনিময়ে তারা অথর্-বিত্তের মালিক হচ্ছেন। একই সঙ্গে তারা মাদুরো সরকারের সঙ্গে আপস করছেন। এমনটাই মনে করেন ব্রাসেলসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপের বিশ্লেষক ফিল গানসন। তিনি বলেন, কমর্কতার্ যদি দুনীির্তবাজ হয় এবং একইসঙ্গে গোয়েন্দারা যদি সেসব দুনীির্তর রেকডর্ ফাইল-বন্দি করে রাখে, তখন কমর্কতাের্দর জন্য মত পাল্টানো বেশ কঠিন হয়ে যায়। অপরাধ দমনের নামে ভেনেজুয়েলার নিরাপত্তা বাহিনীগুলো শত শত হত্যাকাÐ ঘটিয়েছে বলে জাতিসংঘ অভিযোগ করেছে। সেনাবাহিনীর অনেক সিনিয়র কমর্কতার্ চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত। তাদের আশঙ্কা হচ্ছে, সরকারের পতন হলে বাকি জীবন তাদের কারাগারে কাটাতে হতে পারে। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বেশ সাফল্যের সঙ্গে তার সরকারের টিকে থাকার সঙ্গে সেনা কমর্কতাের্দর স্বাথের্ক জড়িত করেছেন। সেনা কমর্কতাের্দর দুনীির্তর সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে সেটি হয়েছে বলে মনে করেন ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিির্টর নিরাপত্তা বিষয়ে বিশ্লেষক ব্রায়ান ফনসেকা। এদিকে মাকির্ন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনীতে নিচের দিকে অনেক কমর্কতার্ এবং সদস্যরা বিরোধী নেতাকে সমথের্নর উপায় খঁুজছেন। বিরোধীদের সঙ্গে অনেক সেনা সদস্যের যোগাযোগ আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ফনসেকা মনে করেন, ক্ষমা ঘোষণার বিষয়টি হয়তো কিছু সেনা সদস্যদের মনোভাব পরিবতর্ন করতে পারে। কিন্তু অন্যরা বিষয়টিতে আশ্বস্ত হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। মাদুরো ক্ষমতা থেকে সরে গেলে সেনাবাহিনী অনেক কিছুই হারাবে। সাধারণ ক্ষমার কথা বলা হলেও সেটি আদৌ কাযর্কর হবে কিনা, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ বিরোধীরা ক্ষমতায় গেলে নিপীড়ন, দুনীির্ত এবং মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত সেনা কমর্কতার্রা রেহাই পাবেন এমন নিশ্চয়তাও নেই। ফলে মাদুরোকে সমথর্ন করাকেই তারা বেশি নিরাপদ ভাবছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ