কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী
যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিনেই সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির কথা উলেস্নখ করতে গিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ভারতে এখন মধ্যমেধার রাজত্ব চলছে। একদল মানুষ নিজেদের সবজান্তা মনে করেন। তারা বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞান বোঝান। ইতিহাসবিদদের ইতিহাস। সেনানিদের বুঝিয়ে দেন, কীভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করা উচিত। বৈমানিকদের বোঝান কী করে বিমান ওড়াতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও যে তেমন এক 'সবজান্তা', তা বুঝিয়ে কটাক্ষ করে রাহুল বলেন, 'উনিও ঠিক তেমন। মোদিজিকে ভগবানের সামনে বসিয়ে দিন। উনি ঈশ্বরকে বুঝিয়ে দেবেন, দুনিয়াদারি কীভাবে করা উচিত। ঈশ্বরও তা শুনে বিভ্রান্ত হয়ে ভাববেন, তা হলে আমি কী সৃষ্টি করলাম?'
রাহুল বলেন, 'আমাদের দেশে এখন এটাই চলছে। এসব মানুষ মনে করেন, তারা সবকিছু জানেন ও বোঝেন। এটা হচ্ছে ওই মধ্যমেধার কারণে।'
কেন তা হয়, রাহুল তারও ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, 'জীবনে জানার জন্য শোনার প্রয়োজন হয়। আপনি কিছু যদি না শুনতে চান, তা হলে জানতেও পারবেন না। ভারত জোড়ো যাত্রা থেকে এই শিক্ষা আমি পেয়েছি।'
বুধবার রাহুল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পৌঁছান। সান ফ্রানসিসকোয় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী, চিন্তাবিদ, সমাজকর্মী, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সামনে সমকালীন ভারতের রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থা ব্যাখ্যা করেন। কেন তারা ভারত জোড়ো যাত্রায় শামিল হয়েছিলেন, তা জানিয়ে তিনি বলেন, বিরোধীদের মতপ্রকাশের সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার তার প্রতিষ্ঠান দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। বিজেপি-আরএসএস সবকিছু দখল করে ফেলেছে। এ অবস্থায় মানুষের কাছে পৌঁছাতে আর কোনো উপায় ছিল না।
রাহুল বলেন, গণমাধ্যমে দেশের যে ছবি তুলে ধরা হচ্ছে, সেটা আসল ভারত নয়। সরকার যা দেখাতে চায়, গণমাধ্যম সেটাই দেখায় এবং তার মধ্য দিয়ে একটা আখ্যান তুলে ধরতে চায় তারা। প্রকৃত ভারতের চেয়ে তা অনেক আলাদা।
বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসি ভাবনার পার্থক্য কী, রাহুল সমাবেশে তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন। তিনি বলেন, 'যদি আপনি রাগী হন, ঘৃণা ও ঔদ্ধত্য পছন্দ করেন, বিশ্বাস করুন, তাহলে আপনি নিজেকে বিজেপির মধ্যে খুঁজে পাবেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে মন কি বাত শুনবেন।'
এরপরই এই কংগ্রেস নেতা বলেন, 'আমাকে বলা হয়েছে আপনাদের প্রশ্নের জবাব দিতে। আমি অবশ্যই প্রশ্ন শুনব ও জবাব দেব। বিজেপিতে কিন্তু তা পাবেন না। সেখানে কোনো প্রশ্নের বালাই নেই। আছে শুধু গাদা গাদা উত্তর।'
এর আগে রাহুল যুক্তরাজ্যে গিয়ে সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছিলেন। সে সময় তিনি ছিলেন সংসদ সদস্য। তা নিয়ে দেশে ব্যাপক হইচই বেঁধেছিল। বিদেশে গিয়ে দেশের 'বদনাম' করার অভিযোগ এনে বিজেপি রাহুলকে বিদ্ধ করেছিল, দেশদ্রোহী বলেছিল। তারপর মোদি পদবি মামলায় সংসদ সদস্য পদ হারিয়ে এখন রাহুল সাধারণ নাগরিক।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেও রাহুল যে সরকারের কড়া সমালোচনা করে যাবেন, প্রথম দিনেই তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রাহুল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মতবিনিময় করবেন। সংবাদ সম্মেলন করবেন। নিউইয়র্কে জনসভায় ভাষণ দেবেন। রাহুলের এ সফর আরও গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে জুনেই প্রধানমন্ত্রী মোদি সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।
প্রথম দিনের মন্তব্যের পরই রাহুলকে বিজেপির কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন, 'বারবার বিদেশে গিয়ে দেশের বদনাম করে রাহুল কী পান, সেটাই বোধগম্য হয় না। সারা পৃথিবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সম্মান দেখায়, সমীহ করে। অন্য দেশের রাষ্ট্রনায়ক মোদিজির পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোদিজিকে 'বস' বলে স্বীকার করে নেন। সবাই তাকে জনপ্রিয়তম প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। কংগ্রেস এটা হজম করতে পারে না। তাই তারা বিদেশে গিয়ে দেশের বদনাম করে। নিজের দেশকে ছোট করে।'