দুনীির্তবিরোধী শতর্ই বাদ দেয়া হয়েছিল চুক্তি থেকে!

রাফায়েল যুদ্ধবিমান নিয়ে ফের বিপাকে মোদি সরকার

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতে আগামী লোকসভা নিবার্চনের আগে রাফায়েল যুদ্ধবিমান নিয়ে নতুন করে অস্বস্তিতে পড়েছে মোদি সরকার। রাফায়েল চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির দপ্তরের হস্তক্ষেপের কথা সামনে এসেছে আগেই। এবার চুক্তি থেকে দুনীির্তবিরোধী জরিমানার শতর্ বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে এরই মধ্যে সরব হয়েছে কংগ্রেস। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, এনডিটিভি, দ্য হিন্দু রাফায়েল চুক্তি সংক্রান্ত নথি তুলে ধরে সোমবার ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, প্রতিরক্ষা সামগ্রী কেনাবেচা প্রক্রিয়া (ডিপিপি) সংক্রন্ত নিয়মাবলি মানেনি মোদি সরকার। মোটা অঙ্কের চুক্তির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্ন জড়ি থাকে। সে সবকে গুরুত্বই দেয়া হয়নি। ভারতসহ বিশ্বের সব দেশে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু শতর্ থাকে, যার মধ্যে অন্যতম হলো দুনীির্তবিরোধী জরিমানা শতর্। যাতে দুই দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তিতে কোনো দালাল, সংস্থা বা প্রভাবশালীর ভ‚মিকা না থাকে। শতর্ ভঙ্গ হলে জরিমানার সংস্থানও থাকে। আবার অনেক সময় টাকা-পয়সা মিটিয়ে দেয়া হলেও, নিধাির্রত সময়ে জিনিসপত্র সরবরাহ করতে পারে না বিক্রেতা। জিনিসপত্র হাতে পেয়েও ক্রেতা টাকা মেটায়নি, এমন ঘটনাও ঘটে থাকে। তাই ক্রেতা ও বিক্রেতার নিরাপত্তা ও স্বাথের্র কথা মাথায় রেখে বড় ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন হয়। আইনি ভাষায় যাকে বলা হয় ‘এস্ক্রো অ্যাকাউন্ট’। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ওই অ্যাকাউন্টে পুরো টাকা জমা করে দেন ক্রেতা। দুই পক্ষের সম্মতিতে একজন এজেন্ট নিয়োগ করা হয়। জিনিসপত্র সরবরাহ হয়ে গেলে এবং তা নিয়ে ক্রেতার কোনো অভিযোগ না থাকলে, এস্ক্রো অ্যাকাউন্ট থেকে পুরো অথর্ বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেন ওই এজেন্ট। কিন্তু ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ফরাসি সংস্থা ‘দাসেঁা এভিয়েশন’ এবং ‘এমবিডিএ ফ্রান্স’র সঙ্গে ৫৮ হাজার ৮৯১ কোটি রুপির বিনিময়ে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তার ঠিক একমাস আগে, আগস্টে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। সেখানে দুনীির্তবিরোধী জরিমানা শতর্ এবং এসক্রো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেনের প্রক্রিয়া চুক্তিপত্র থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে বিমান সরবরাহ প্রক্রিয়া, অফসেট বরাত এবং সময়সূচি সংক্রান্ত মোট ৮টি বদলের প্রস্তাব দেয়া হয়। সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিক্করের নেতৃত্বে ‘ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিল’র (ডিএসি) বৈঠক বসে। সেখানে সব বদলে অনুমোদন দেয়া হয়। তাতে সই করেন তৎকালীন ভাইস অ্যাডমিরাল। সেই সময় ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিলের সদস্য তথা সচিব ছিলেন তিনি। দ্য হিন্দু’র দাবি, ফ্রান্সের সঙ্গে রাফায়েল নিয়ে দরদামে নিযুক্ত থাকা উপদেষ্টা, বিমান বাহিনীর ফিনান্সিয়াল ম্যানেজার এবং বিমান বাহিনীর যুগ্ম সচিব ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়সংক্রান্ত ম্যানেজার এই বদলে আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বিমান সরবরাহে ব্যথর্ হলে ভারত সরকারকে টাকা ফেরত দেয়ার কথা ফ্রান্সের। সেই মতো ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাও মানা হয়নি। শুধু ফরাসি প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে চিঠি মারফত আশ্বস্ত করা হয়েছিল। যার কোনো আইনি গুরুত্ব নেই।