ভেনেজুয়েলা সংকট

সামরিক হস্তক্ষেপের কথা বলেননি ট্রাম্প!

আন্তজাির্তক সম্প্রদায়কে পাশে চাইলেন প্রেসিডেন্ট মাদুরো

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ল্যাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার বতর্মান পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিকল্প সব উপায় নিয়ে ভাবছেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি নাকি সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের কথা কখনো বলেননি। বুধবার হোয়াইট হাউসে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দুকু মারকোয়েজের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ট্রাম্প। সেখানেই ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা, সে ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি। তবে তা একেবারে উড়িয়েও দেননি তিনি। এদিকে, আন্তজাির্তক সম্প্রদায়কে ভেনেজুয়েলার পাশে দঁাড়ানোর আহŸান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। বুধবার রাজধানী কারাকাসের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আহŸান জানান। সংবাদসূত্র : রয়টাসর্, বিবিসি, আনাদলু গত বছর অনুষ্ঠিত নিবার্চনে জালিয়াতির অভিযোগে সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি নিজেকে ভেনেজুয়েলার অন্তবর্র্তীর্কালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন দেশটির বিরোধী নেতা হুয়ান গুইদো। বিরোধী নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পরিষদ মাদুরোকে দ্বিতীয় মেয়াদে ‘অবৈধ ঘোষণা’র পরই ওই পদক্ষেপ নেন তিনি। গুইদোর দাবি, প্রেসিডেন্ট অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পর জাতীয় পরিষদ প্রধান হিসেবে সাময়িকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের সাংবিধানিক এখতিয়ার তার আছে। কয়েক মিনিটের মাথায় তাকে ‘স্বীকৃতি’ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কানাডা, ল্যাতিন আমেরিকার বেশিরভাগ দেশ ও ২০টির বেশি ইউরোপীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করেছে। তবে দুই শক্তিধর দেশ রাশিয়া ও চীনের সমথর্ন রয়েছে মাদুরোর প্রতি। সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও সমথর্ন পেয়েছেন তিনি। হুয়ান গুইদোর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যখন মাদুরো সরকারকে ক‚টনৈতিক ও অথৈর্নতিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে তখনই হোয়াইট হাউসে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দুকু মারকোয়েজের সঙ্গে বৈঠক করলেন ট্রাম্প। বুধবারের ওই বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সেখানে ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সংকট সমাধানের কয়েকটি পথ আছে, ভিন্ন ভিন্ন পথ সেগুলো এবং আমরা সবগুলোকেই বিবেচনায় রাখছি।’ যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপ চালানোর কথা ভাবছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কখনোই এ প্রসঙ্গে কিছু বলিনি।’ ট্রাম্পের এ বক্তব্যকে পূবর্বতীর্ বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘষির্ক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর আগে ‘সিবিএস নিউজ’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ল্যাতিন আমেরিকার ওই দেশটির সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়টিও বিবেচনায় আছে। দীঘের্ময়াদি অথৈর্নতিক যুদ্ধের কবলে পড়ে খাদের কিনারে এসে দঁাড়িয়েছে ভেনেজুয়েলার অথর্নীতি। মাকির্ন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে বছরে হাজার হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে তাদের। কানাডাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গেøাবাল রিসাচর্’র সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ওই অথৈর্নতিক ক্ষতির কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকটকে সামনে এনেই যুদ্ধের পথ সুগম করতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে সাহায্য করছে তাদের মিত্র কলম্বিয়া ও ব্রাজিল। বিশ্লেষণে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, মানবিক সহায়তা দিতে সেনা পাঠিয়ে সেখানে সংঘাত উসকে দেয়ার চেষ্টা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকেই ভেনেজুয়েলায় সামরিক আগ্রাসনের বাসনার কথা প্রকাশ্যে বলছেন ট্রাম্প। গেøাবাল রিসাচর্ দাবি করেছে, সে কারণেই পেন্টাগন, হোয়াইট হাউস থেকে আগ্রাসন-বিরোধীদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন ট্রাম্পের চারপাশে যারা আছেন, তারা সবাই তার মতোই মাদুরোকে হটাতে চান। দখলে নিতে চান ওই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের। ‘টাইম’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা জানানো হয়েছে, গুইদোকে সমথর্ন না দেয়া সামরিক বাহিনীতে বিভক্তি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আগ্রাসন বাসনা সফল করার প্রচেষ্টা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়, যেন মাদুরো সরকারের ঐক্য ভেঙে পড়ে। আন্তজাির্তক সমথর্ন চাইলেন মাদুরো এদিকে, ভেনেজুয়েলার পাশে দঁাড়াতে আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তিনি বলেন, মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অব্যাহতভাবে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বিশ্বের সব দেশের প্রতি তার আহŸান, তারা যেন ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে। মাদুরো বলেন, এরই মধ্যে ভেনেজুয়েলায় একটি বিকল্প হিসেবে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা কারও গোলাম, ভিক্ষুক বা কমর্চারী নই। আমরা মুক্ত নারী-পুরুষ। এটাই মাদের ভেতরের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ও পরিতৃপ্তির জায়গা।’ এদিকে, ভেনেজুয়েলা ইসু্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র সঙ্গে কথা বলেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেগের্ই ল্যাভরভ। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে দুই নেতার ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় মাকির্ন হস্তক্ষেপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতকর্ করে দিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ চাটাের্রর ফ্রেমওয়াকের্র আওতায় থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় রাশিয়া প্রস্তুত রয়েছে।