পাকিস্তানে নিবার্চন ঘিরে অনিশ্চয়তা

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নিহত প্রাথীর্ সিরাজ রাইসানি
এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের সাধারণ নিবার্চন সময়মতো আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার নিবার্চনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে আকরাম দুররানি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। তবে বেলুচিস্তানের মাসতুংয়ে নিবার্চনী প্রচারণায় বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন প্রাথীর্ সিরাজ রাইসানি। একই দিন আফগান সীমান্তবতীর্ বান্নুতে পৃথক বোমা হামলায় নিহত হন আরও পঁাচজন। আর মাত্র তিনদিন আগে ন্যাশনাল আওয়ামী পাটির্র (এএনপি) হারুন বিলোর নিহত হন। গত মঙ্গলবার পেশোয়ার শহরে একটি নিবার্চনী সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২২ জন নিহত হন। এর আগে, চলতি মাসের শুরুর দিকে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পাটির্ প্রাথীর্র কাযার্লয়ে এক হামলায় ১০ জন আহত হন। এসব হামলার পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। মাসতুংয়ে শুক্রবারের হামলায় যত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, পাকিস্তানে গত এক বছরের বেশি সময়ে একক কোনো হামলায় এত ব্যাপক সংখ্যক মানুষের হতাহত হওয়ার ঘটনা আর ঘটেনি। সেদিনের হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বেলুচিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নিবার্চনের একজন প্রাথীর্ সিরাজ রাইসানি। প্রদেশটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নবাব আসলাম রাইসানির ছোট ভাই নবাবজাদা সিরাজ রাইসানি বেলুচিস্তান মুত্তাহিদা মাহাজ (বিএমএম)-এর প্রধান ছিলেন। তিনি প্রদেশ আওয়ামী পাটির্র একজন প্রাথীর্ ছিলেন। সবশেষ এই হামলার ঘটনাটি পাকিস্তানে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। বিবিসির সংবাদিক এম. ইলিয়াস খান বলেন, সেনাবাহিনী একদিকে যেমন দাবি করছে যে, তারা জঙ্গিদের তাড়িয়ে দিয়েছে, তেমনি এ রকম একটি হামলার ব্যাপারে কাছ থেকে কোনো হুমকিও ছিল না। এর আগে, ২০১৩ সালের নিবার্চনের আগে জঙ্গিরা আগাম হুমকি দিয়েছিল। ফলে তখন কিছু রাজনৈতিক দল খুব কমই প্রচারণা চালিয়েছিল। তিনি জানান, ওই দলগুলোই আবার হামলার লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। আর হামলাকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এসব দল যাতে নিবার্চনী প্রচারণা চালাতে না পারে। তাই সবশেষ এই হামলার পর নিবার্চনের আগে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সাধারণ নিবার্চন আগামী ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে, পাকিস্তানের ‘ন্যাশনাল কাউন্টার টেরোরিজম অথরিটি’ সম্প্রতি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনেট প্যানেলে ছয় রাজনীতিকের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছিল। তাদের তালিকা অনুসারে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান, এএনপির প্রধান আফসানদিয়ার ওয়ালি, কওমি ওয়াতান পাটির্র আফতাব আহমেদ খান শেরপাও এবং কয়েকজন পিএমএল-এন নেতা হুমকির মধ্যে আছেন। এক বিবৃতিতে শুক্রবার সিনেটর রেহমান মালিক বলেন, রাজনীতিকদের জীবন এখন বড় ধরনের হুমকির মুখে রয়েছে। এই বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা প্রয়োজন। কোনো বিরতি ছাড়াই চলছে জঙ্গি কমর্কাÐ। সরকারের উচিত রাজনীতিকদের নিরাপত্তা জোরদার করা। এই সিনেটর আরও বলেন, দেশবিরোধী তালেবান, আইএস ও আল-কায়েদা পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার সৈয়দ নাজির মোহমান্দ জানান, দেশে অনেক স্থানেই জঙ্গি কমর্কাÐ বেড়েছে। রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে থাকায় এ ধরনের কমর্কাÐের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মনোযোগ অন্যদিকে সরে যায় এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। মোহমান্দ আরও জানান, আগাম গোয়েন্দা তথ্য নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূণর্ এবং সতকর্তা জারির পর হুমকি নস্যাৎ করা উচিত ছিল। পেশাওয়ারে হারুন বিলোর ও মাসতুংয়ের ঘটনায় একটি মিল ছিল। উভয় হামলার ক্ষেত্রেই নিদির্ষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতির অপেক্ষায় ছিল হামলাকারী। তবে দুররানির সমাবেশে হামলার ধরন ছিল আলাদা। মোহমান্দ বলেন, আরও বড় ধরনের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে। যদি তা ঘটে, তাহলে সময়মতো নিবার্চন আয়োজন পিছিয়ে যেতে পারে। সংবাদসূত্র : দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, বিবিসি