কাশ্মিরে জঙ্গি হামলা

পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি ভারতের

জ্জ যারা এই হামলা চালিয়েছে বড় মূল্য চোকাতে হবে তাদের হুশিয়ারি মোদির

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪৬ জন কেন্দ্রীয় রিজাভর্ পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) সদস্য নিহতের ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটিকে আন্তজাির্তক অঙ্গন থেকে ‘সম্পূণর্ বিচ্ছিন্ন’ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে দিল্লি। শুক্রবার ভারতের কেন্দ্রীয় অথর্মন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, তার দেশ পাকিস্তানকে ‘একলা করে দিতে’ ক‚টনীতিকভাবে যা যা করার দরকার, এর সবই করবে। উল্লেখ্য, গত এক দশকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিরা যত হামলা চালিয়েছে, বৃহস্পতিবারের হামলাটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এবিপি নিউজ, এনডিটিভি ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মিরের গোরিপোরার কাছে সেন্ট্রাল রিজাভর্ পুলিশ ফোসের্র (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে বৃহস্পতিবার বিস্ফোরক-বোঝাই একটি গাড়ি নিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলার সময় পুলওয়ামা জেলার শ্রীনগর-অনন্তনাগ মহাসড়কের ওপর দিয়ে জম্মু থেকে শ্রীনগরে যাচ্ছিল সিআরপিএফের গাড়িবহরটি। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মোহাম্মদ হামলার পর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটি কাশ্মিরে ভারতীয় শাসনের অবসান চায়। মতাদশর্গতভাবে কাশ্মিরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভ‚ত করার পক্ষে অবস্থান তাদের। আর পাকিস্তান তার দেশে ক্রিয়াশীল এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে ব্যথর্ বলে দীঘির্দন ধরেই দাবি করে আসছে দিল্লি। জয়েশ-ই-মোহাম্মদের ওপর আন্তজাির্তক নিষেধাজ্ঞাও চেয়ে আসছে তারা। জঙ্গিগোষ্ঠীটির নেতা মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসীর তালিকায় রাখতেও ভারত অনেক দিন ধরেই নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ দিয়ে আসছে। দিল্লির এ ধরনের চেষ্টায় সব সময়ই বাধা দিয়ে আসছে চীন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞার চেষ্টাতেই সাধারণত বেইজিং ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে। শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অরুণ জেটলি জানান, তারা কাশ্মিরে ভয়াবহ এই হামলার জন্য পাকিস্তানকেই দায়ী মনে করছেন। ইসলামাবাদ কাশ্মিরে হামলার তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানালেও হামলা নিয়ে তাদের ওপর আসা সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এর আগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিল ১৯ সেনাকমীর্। কিন্তু এবারের এই হামলা উরির ভয়াবহতাকেও ছাপিয়ে গেছে। হামলার মূল্য চোকাতেই হবে : মোদি এদিকে, কাশ্মিরের হামলা নিয়ে শুক্রবার সকালে দিল্লিতে জরুরি বৈঠকে বসে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অন্য শীষর্ মন্ত্রীরা বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা এই হামলা চালিয়েছে, বড় মূল্য চোকাতে হবে তাদের। শাস্তি পেতেই হবে। কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না তাদের। প্রতিবেশী দেশ ভারতে চরম অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে, ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তাদের মনস্কামনা পূণর্ হতে দেবে না ভারত। হামলা হলে এর পাল্টা জবাব দেয়া হবেই। নাম না করে পাকিস্তানকেও এদিন কড়া বাতার্ দেন মোদি। বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র করে ছাড় পাবে না।’ এটা একটা সংবেদনশীল মুহ‚তর্। এই সময় রাজনীতি থেকে দূরে থাকাটাই শ্রেয় বলে মনে করেন মোদি। বরং এই সংকটময় মুহ‚তের্ কঁাধে কঁাধ মিলিয়ে লড়াই করা উচিত। মোদি বলেন, ‘এই সংবেদনশীল মুহ‚তের্ রাজনৈতিক বিরোধিতা থেকে দূরে থাকা দরকার। আমাদের একজোট হয়ে মোকাবেলা করতে হবে।’ জওয়ানদের মৃত্যু কোনোভাবেই বিফলে যাবে নাÑ সে কথাও মনে করিয়ে দিয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোর উদ্দেশে মোদির হুশিয়ারি, এই হামলা চালিয়ে তারা চরম ভুল করেছে। আর এই ভুলের মাসুল অনেক বড় আকারে চোকাতে হবে তাদের। তিনি বলেন, ‘দেশকে ভরসা দিচ্ছি, এই হামলার পেছনে যে শক্তি কাজ করছে, তাদের শাস্তি হবেই।’ নিহত জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোদি বলেন, তাদের মৃত্যু বিফলে যাবে না। সেনার ওপর আমাদের সম্পূণর্ আস্থা আছে। হামলার প্রতিশোধ নিতে তাই বাহিনীকে সম্পূণর্ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।’ অন্যদিকে, এই হামলায় কড়া বিবৃতি দিয়েছে সিআরপিএফ। টুইটে তারা জানিয়েছে, ‘আমরা ভুলব না। আমরা ক্ষমা করব না। পুলওয়ামার হামলায় নিহত জওয়ানদের পরিবারের পাশে আছি। এই জঘন্য হামলার বদলা নেবই।’