শনির চাঁদে 'ভুতুড়ে' বৃষ্টি!

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
kwb MÖ‡ni Puv` UvBUvb
আকাশে মেঘ না জমলে কখনো বৃষ্টি হতে পারে? শরতের কয়েক পশলা বৃষ্টির জন্যও লাগে পেঁজা পেঁজা মেঘ। কিন্তু শনির চাঁদ টাইটান সেই নিয়মের ধারই ধারে না। সেখানে মেঘ ছাড়াই আকাশ ঝেঁপে নামে বৃষ্টি। একেবারে ভুতুড়ে বৃষ্টি! টাইটানের উত্তর মেরুতে, গ্রীষ্মে। এই প্রথম এই সৌরমন্ডলের কোনো চাঁদে দেখা গেল, বৃষ্টি নামে গরম কালেও। আর সেই বৃষ্টিতে আকাশ থেকে পানি নেমে আসে না। আসে তরল মিথেন। তবে তা আকাশের ঠিক কোথা থেকে নামছে, কেন নেমে আসছে, জানা যায়নি। আমাদের বৃষ্টির জলের ফোঁটার থেকে অনেক ধীরে ধীরে সেই মিথেন বৃষ্টির ফোঁটা নামে শনির চাঁদে। নাসার 'ক্যাসিনি' মহাকাশযানের পাঠানো ছবি ও তথ্য এই খবর দিয়েছে। ওই বৃষ্টির পরই ঠান্ডার মৌসুম চলে গিয়ে পুরোপুরি গরম পড়ে শনির বৃহত্তম চাঁদ টাইটানের উত্তর মেরুতে। 'ক্যাসিনি'র পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে 'আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন'র আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল 'জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স'-এ। যার মূল গবেষক ইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অনাবাসী ভারতীয় রজনী ধিংড়া। মেঘ ছাড়াই কীভাবে সেই বৃষ্টি হচ্ছে টাইটানের উত্তর মেরুতে, তা নিয়ে যথেষ্টই ধন্দে পড়ে গেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কারণ, এই সৌরমন্ডলের আর কোনো চাঁদেই এর আগে গরমকালে বৃষ্টি পড়তে দেখা যায়নি। এমনকি, শনির চাঁদ টাইটানের দক্ষিণ মেরুতেও এর আগে যে বৃষ্টি পড়তে দেখা গিয়েছিল, তা কিন্তু গরমকালে হয়নি। জ্যোতির্বিজ্ঞানী রজনী বলেন, এমন কোনো ক্লাইমেট মডেল নেই, যেখানে বলা আছে মেঘ ছাড়াও বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির জন্য সব সময়েই মেঘের প্রয়োজন। কিন্তু কেন, কীভাবে টাইটানের উত্তর মেরুতে গরমকালে কোনো মেঘ ছাড়াই বৃষ্টি হয়, তা এখনো আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। এটাও জানতে পারিনি, কেন সেই বৃষ্টি হয় গরমকালে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সঙ্গে শনির চাঁদ টাইটানের বায়ুমন্ডলের মিল রয়েছে অনেকটাই। পৃথিবীর মতোই টাইটান পাথুরে। পৃথিবীর শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষার মতো নানা ঋতু রয়েছে টাইটানেও। তবে সেগুলোর মেয়াদ কিন্তু অনেকটাই। পৃথিবীর কয়েকটা বছর সেখানে একটা ঋতু। পৃথিবীর স্বাভাবিক জল-চক্রের মতো একটা চক্র বা সাইকেলও রয়েছে টাইটানে। তবে সেটা পানির নয়, মিথেনের মতো তরল হাইড্রোকার্বনের। তারা দেখেছেন, পৃথিবীর চেয়ে অনেক কম পরিমাণে বৃষ্টি হয় টাইটানে। টানা ১৩ বছর শনি আর তার চাঁদ টাইটানের ওপর নজর রেখেছিল ক্যাসিনি মহাকাশযান। কিন্তু ওই ১৩ বছরে বড়জোর ৭-৮ বার তার নজরে পড়েছিল টাইটানের বৃষ্টি। পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের সাত ভাগের এক ভাগ টাইটানের অভিকর্ষ বল। তাই পৃথিবীর আকাশ থেকে যে গতিতে নেমে আসে বৃষ্টির ধারা, টাইটানে নেমে আসা সেই ধারা এর চেয়ে নামে অনেক ধীরে ধীরে। সেই ঘটনাকে দেখতে লাগে আমাদের তুষারপাতের মতো। তিনি আরও বলেন, এটা এখনো আমাদের কাছে একটি জটিল রহস্য। আলোর দুই-একটা তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে সেই মেঘের মতো একটা কিছুর আভাস পেলেও, সব তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে সেই মেঘ দেখা যায়নি। আমাদের আরও অবাক করেছে টাইটানের দক্ষিণ মেরু। সেখানে কিন্তু মেঘ ছাড়া বৃষ্টি হয় না কখনো। তা হলে, কেন উত্তর মেরুতে মেঘ ছাড়া বৃষ্টি হয়, এখনো বোঝা যাচ্ছে না। সংবাদসূত্র : নাসা, এবিপি নিউজ