ঐতিহাসিক ভারত সফর

সন্ত্রাসবাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে চাপ বাড়াতে সম্মত সৌদি আরব

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুবরাজ সালমানকে বুকে জড়িয়ে নিলেন মোদি
দুইদিনের পাকিস্তান সফর শেষে ভারতে পৌঁছেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিলিস্ন বিমানবন্দরে পৌঁছলে যুবরাজকে সরকারি প্রটোকল ভেঙে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 'এমবিএস' নামে খ্যাত সৌদি যুবরাজ সন্ত্রাসবাদের মদদ দাতা দেশগুলোর বিরুদ্ধে চাপ বাড়াতে সম্মত হয়েছেন বলে বুধবার বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন মোদি। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, রয়টার্স এ ছাড়া বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা নবায়নযোগ জ্বালানির ব্যবহার এবং নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানা গেছে। এদিকে 'দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়' টুইটারে দুই নেতার করমর্দনের একটি ছবি দিয়ে এ মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভীশ কুমার। 'প্রটোকল ভাঙার' জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রশংসাও করেছেন তিনি। এর আগে পাকিস্তান সফরেও উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স। দেশটিতে দুই দিনের সফর শেষ তিনি ভারতে যান। গত বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভয়াবহ এক প্রাণঘাতী হামলার পর পাকিস্তানকে দায় দেয় ভারত। এ ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা চলার মধ্যেই প্রতিবেশী দেশ দুটি সফরে এলেন সৌদি যুবরাজ। এই আঞ্চলিক উত্তেজনা তার এ সফরটিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। নিজেদের মধ্যে উত্তেজনা চললেও দুটি দেশই সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য মুখিয়ে আছে। এরই মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ২০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি করেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ। ভারতও বিনিয়োগ চুক্তির আশায় আছে। সৌদি আরব, ভারতে অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ যোগানদাতা দেশ। জ্বালানি খাত ছাড়াও দেশ দুটির সম্পর্ক আরও বিভিন্ন দিকে বিস্তৃত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় দুই সরকার একমতও হয়েছে বলে সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ভারতীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সফরে সৌদি যুবরাজ তাদের জাতীয় বিনিয়োগ ও অবকাঠামো তহবিলে প্রাথমিক বিনিয়োগের ঘোষণা দিবেন বলে প্রত্যাশা করছে ভারত। আপাতত সার্বভৌম এই তহবিল ভারতের বন্দর ও মহাসড়ক নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হবে। বিগত দুই দশকে ভারতের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রায় ২৭ লাখ ভারতীয় প্রবাসী সৌদি আরবে অবস্থান করছে। ভারতের চতুর্থ শীর্ষ বাণিজ্য সহযোগী সৌদি আরব। দেশ দুটির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। রিয়াদের জ্বালানির অন্যতম ক্রেতা ভারত। সৌদি আরবের অপরিশোধিত তেল রপ্তানির ২০ শতাংশ কিনে থাকে ভারত। সৌদি যুবরাজ ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় সৌদি আরবের শীর্ষ তেল কোম্পানি আরামকো ভারতে শোধণাগার স্থাপনে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার আশা করা হচ্ছে। এই আলোচনার মধ্যে থাকবে ভারতের মহারাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে ৪৪০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে আরামকোর বিনিয়োগ। সোমবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাদনাভিস জানিয়েছেন ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে কৃষকদের প্রতিবাদের মুখে সৌদি-ভারত প্রজেক্ট নতুন জায়গায় সরিয়ে নেয়া হবে। দিলিস্নভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এর কর্মকর্তা মনোজ জোসি বলেন, তেলের বড় ক্রেতা ভারত আর শীর্ষ তেল উৎপাদক সৌদি আরবের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, দক্ষ জনবল ও ব্যবস্থাপনা ইতিমধ্যে সৌদি আরবে বড় ভূমিকা রাখছে। এর পরিবর্তে সৌদি আরব জাতীয় বিনিয়োগ ও অবকাঠামো তহবিলে দ্রম্নত বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। ভারতের তেলবিহীন খাতে বিনিয়োগও সৌদি আরবের অর্থনৈতিক কৌশলের অংশ। ভারতে সফর শেষে সৌদি যুবরাজের চীন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। অক্টোবরে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসু্যলেটে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশেগি খুন হন।