যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট হুমকি

ক্ষেপণাস্ত্রের গতি বাড়াবে রাশিয়া

কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের ঝুঁকি হিসাব করা উচিত হবে

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
'ফেডারেল অ্যাসেমবিস্ন'তে বক্তব্য রাখছেন ভস্নাদিমির পুতিন
যাযাদি ডেস্ক যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছাকাছি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করলে রাশিয়াও দেশটির কাছাকাছি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে। অথবা দ্রম্নতগতির ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে। অথবা দুটিই করবে বলে হুশিয়ার করেছেন প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। বুধবার মস্কোয় রাশিয়ার 'ফেডারেল অ্যাসেমবিস্ন'তে শীর্ষ রাজনীতিকদের উদ্দেশে দেয়া এক বক্তৃতায় পুতিন এসব কথা বলেন। একই দিন জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে পুতিন বলেছিলেন, ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্র পাঠালে রাশিয়াও ইউরোপ তাক করে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স ফেডারেল অ্যাসেমবিস্নতে পুতিন বলেন, রাশিয়া সংঘাত চায় না এবং শীতল যুদ্ধকালীন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি থেকে চলতি মাসে ওয়াশিংটনের বের হয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পদক্ষেপ আগেই নেবে না। কিন্তু নতুনভাবে শুরু হতে যাওয়া সম্ভাব্য অস্ত্র প্রতিযোগিতার বিষয়ে সবচেয়ে কঠোর মন্তব্যে পুতিন বলেছেন, মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের প্রতিক্রিয়া 'স্থিরসংকল্পের' হবে এবং কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের ঝুঁকি হিসাব করা উচিত হবে। তিনি বলেন, 'তারা কীভাবে চান, তা চিন্তা করার অধিকার তাদের আছে। কিন্তু তারা হিসাব করতে পারবেন? আমি নিশ্চিত তারা পারবেন। আমরা যে অস্ত্র ব্যবস্থা তৈরি করছি, তার গতি ও পালস্না তাদের হিসাব করতে দিন।' ব্যাপক করতালিতে পুতিনের এ বক্তব্যকে স্বাগত জানান দেশটির শীর্ষ রাজনীতিকরা। পুতিন বলেন, 'চাপে পড়ে রাশিয়াকে এমন ধরনের অস্ত্র তৈরি ও মোতায়েন করতে হতে পারে, যেগুলো শুধু সরাসরি হুমকি হিসেবে কাজ করছে, এমন অঞ্চলের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হতে পারে এমন নয়, যে অঞ্চলগুলোতে সিদ্ধান্ত নেয়ার কেন্দ্রগুলো আছে, সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবহার হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পদক্ষেপ নিলে তাতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রের মস্কোতে পৌঁছানোর সময় ১০-১২ মিনিট কমে যাবে জানিয়ে এটিকে গুরুতর হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন পুতিন। এ অবস্থায় পাল্টা ব্যবস্থা না নেয়া হলে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর আগেই মার্কিন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রে রাশিয়ার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়ে যায়। তবে এ ধরনের অবস্থায় রাশিয়া কী পাল্টা ব্যবস্থা নেবে, কিংবা কোন্‌ কৌশলে তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের যুক্তরাষ্ট্রের পৌঁছানোর সময় সংক্ষিপ্ত করবে, তা পরিষ্কার করেননি পুতিন। সম্ভাব্য বিকল্প হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিকটবর্তী কোনো মিত্র দেশের অঞ্চলে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা। যেমনটা করা হয়েছিল ১৯৬২ সালে সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র কিউবায় মোতায়েন করে। তুরস্কে মার্কিন 'ব্যালিস্টিক' ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কিউবায় একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। পাল্টাপাল্টি এ পদক্ষেপে বিশ্ব একটি পারমাণবিক যুদ্ধের প্রান্তে চলে গিয়েছিল। ওই ঘটনা 'কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট' নামে ইতিহাস খ্যাত হয়ে আছে। আরেকটি বিকল্প হতে পারে, সাবমেরিনে দ্রম্নতগামী ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন অথবা মস্কো যে ধরনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে বলে জানিয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করা। বুধবারের ভাষণে পুতিনও এ ধরনের অস্ত্রের কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সাবমেরিন বহনে সক্ষম পারমাণবিক হামলা চালানোর ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ডুবোড্রোন; যার নাম 'পোসাইডন' এই বসন্তে চালু করা হতে পারে। রাশিয়া 'শেরকোন' নামের নতুন একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে সফল হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বুধবার প্রথমবারের মতো পোসাইডন পরীক্ষার ফুটেজ সম্প্রচার করেছে বলে বার্তা সংস্থা 'আরআইএ'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এদিকে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুতিনের এসব বক্তব্যকে 'প্রোপাগান্ডা' দাবি করে বাতিল করে দিয়েছে।