পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা

কাশ্মিরে যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান, ব্যাপক ধরপাকড়

ম বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোর বিরুদ্ধে এই প্রথম এত বড় অভিযান ম কাশ্মিরের জন্য লড়াই, কাশ্মিরিদের বিরুদ্ধে নয় জানালেন মোদি

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের নিরাপত্তা তুলে নেয়া হয়েছিল আগেই। এবার শুরু হলো যৌথবাহিনীর নেতৃত্বে সাঁড়াশি অভিযান। কাশ্মিরে সরাসরি বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামল দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। শুক্রবার রাতে অতিরিক্ত বাহিনী নামানো হয় সেখানে। গ্রেপ্তার করা হয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জম্মু-কাশ্মির লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) নেতা ইয়াসিন মালিককে। বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও অনেক নেতাকে। দক্ষিণ ও মধ্য কাশ্মিরের আরও অনেক এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সংবাদসূত্র : টাইমস অব ইনডিয়া শুক্রবার সন্ধ্যায় দিলিস্নতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এরপরই অতিরিক্ত ১০০ কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনী পাঠানো হয় কাশ্মিরে। আধা-সামরিক বাহিনীর একেকটি কোম্পানিতে সাধারণত ৮০-১৫০ জন সেনাকর্মী থাকে। সেই হিসাবে গত শুক্রবার রাতে কাশ্মিরে প্রায় ১০ হাজার সেনাকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, সিআরপিএফের ৪৫টি কোম্পানি, সীমান্তবর্তী ৩৫ এবং সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) ও ইন্দো-তিব্বত সীমা পুলিশের (আইটিবিপি) ১০টি করে কোম্পানি। জম্মু-কাশ্মির পুলিশের পক্ষ থেকে এই অভিযানকে রুটিন তলস্নাশি বলে চালানোর চেষ্টা করা হলেও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন 'তেহরিক-ই-হুরিয়ত' এবং এর শাখা সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে এত বড় অভিযান এই প্রথম। শুক্রবার রাতে শ্রীনগরে মইসুমার বাড়ি থেকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় ইয়াসিন মালিককে। এরপর হানা দেয়া হয় সামাজিক তথা রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াত-ই-ইসলামীর বাকি নেতাদের আস্তানায়। এই মুহূর্তে জামায়াতের নেতৃত্বে রয়েছেন আবদুল হামিদ ফায়াজ। পেশায় আইনজীবী জাহিদ আলি সংগঠনের মুখপাত্র। গভীর রাতে বাড়ি থেকে আটক করা হয় তাদের। আটক করা হয়েছে সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম কাদির লোনকেও। এ ছাড়া রাজ্য পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন জেলা ইসলামাবাদের জামায়াত নেতা আবদুর রউফ, পহেলগাঁও তেহসিলের নেতা মুদাসির আহমেদ, দিলগাঁওয়ের বখতিয়ার আহমেদ, ত্রালের মোহাম্মদ হায়াত, চাদুরার বিলাল আহমেদ, চক সাংরানের মোহাম্মদ দারসহ আরও অনেকে। অনন্তনাগ, পহেলগাঁও, দিলগাঁও, ত্রালসহ দক্ষিণ কাশ্মিরের নানা জায়গায় হানা দিয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গত সপ্তাহে দক্ষিণ কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হামলা চালায় পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন 'জইশ-ই-মোহম্মদ'। উপত্যকার বাসিন্দা ২০ বছরের আদিল আহমেদ দারের মাধ্যমে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। এতে ৪৯ জন জওয়ান প্রাণ হারায়। সেই ঘটনার পর জম্মু-কাশ্মিরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কাশ্মির উপত্যকার একাধিক জায়গায় মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীকে। শুরু হয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানও। যার জেরে চলতি সপ্তাহের শুরুতেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মৃতু্য হয় পুলওয়ামার ষড়যন্ত্রকারী তিন জঙ্গির। এদিকে, গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্ব। তাদের দাবি, ৩৫-এ ধারা নিয়ে এখন পর্যন্ত রায় শোনায়নি সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে উপত্যকায় গণগ্রেপ্তারি শুরু করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। নিশ্চয়ই এর পেছনে অন্য অভিসন্ধি রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। যাতে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের অনুপস্থিতিতে ওই ধারাটিকে ইচ্ছামতো বিকৃত করতে পারে। চলতি সপ্তাহের বুধবার সেই রায় শোনানোর কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টের। তবে বিশেষ কারণে বাতিল হয়ে যায় সেটি। আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানির দিন স্থির করা হয়েছে। এর আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে কাশ্মিরে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলো। লড়াই কাশ্মিরিদের বিরুদ্ধে নয় : মোদি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী কাশ্মিরিদের ওপর হামলা ও রুটিন মাফিক অভিযানের নামে রাজ্যজুড়ে হয়রানি নিয়ে এবার মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজস্থানের টঙ্কে শনিবার এক জনসভায় তিনি স্পষ্ট জানালেন, কাশ্মিরিদের ওপর হামলার ঘটনা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। একই সঙ্গে তিনি বললেন, 'আমাদের লড়াই কাশ্মিরের জন্য, কাশ্মিরিদের বিরুদ্ধে নয়।' সন্ত্রাসের জন্য সব থেকে বেশি শিকার কাশ্মিরিরাই। তাদের পাশে আছে গোটা দেশ। উলেস্নখ্য, পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার পর থেকেই কাশ্মিরিদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কাশ্মিরিদের বয়কট করার দাবিও তোলা হচ্ছিল বিভিন্ন মহলে। এতে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপির অনেক নেতা। দলটির শীর্ষপর্যায়ের অনেকেই কাশ্মিরিদের বয়কট করার দাবি তুলেছিলেন।