বাতাসে লাশের গন্ধ :স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কায় ডাবিস্নওএইচও

লিবিয়ায় ঝড়-বন্যা

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ঘূর্ণিঝড় 'ড্যানিয়েল'র প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস-বন্যায় লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় নিহতদের গণকবর দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাবিস্নওএইচও)-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। তারা বলেছে, এটা নিহতদের পরিবারগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক যন্ত্রণার পাশাপাশি বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা জাতিসংঘ বলছে, এক দশকের সংঘাত ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় বিভক্ত এক জাতির দেশ লিবিয়া। গত রোববার তীব্র বৃষ্টির ফলে দুটি বাঁধ ফেটে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মানুষকে গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে। গত সাত দিনে উদ্ধার হয়েছে ১১ হাজার ৩০০ মরদেহ। নিখোঁজ আছেন কয়েক হাজার মানুষ। রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির বিলাল সাবলুহ বলেন, 'ধসে পড়া ভবন ও ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে অনেক মানুষ। আমার এক সহকর্মী দেরনার কাছে সমুদ্র সৈকতে ২০০টির বেশি মরদেহ গণনা করেছেন মাত্র দুই ঘণ্টায়।' লিবিয়ার ত্রিপোলি-ভিত্তিক সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইব্রাহিম আল-আরাবি বলেন, 'মরদেহ, মৃত প্রাণি, আবর্জনা এবং রাসায়নিক পদার্থের কারণে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হচ্ছে। আমরা জনগণকে দেরনার কূপের কাছে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।' দেরনার ওয়াহদা হাসপাতালের প্রধান মোহাম্মদ আল-কাবিসি বলেন, 'পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কলেরা রোগীর সন্ধান মেলেনি।' লিবিয়ায় অভিবাসন মিশনের আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, হাসপাতালে তিন হাজার ৯২২ জনের মৃতু্য নিবন্ধিত হয়েছে। বন্যাকবলিত অঞ্চলে ৩৮ হাজার ৬৪০ জনের বেশি মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছে। দেরনার এক দোকানদার ৬০ বছরের নুরি মোহাম্মদ বলেন, 'ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো মৃতদেহ আছে... এখন সেখানে লাশের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।' গাফিলতির দায় নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ এদিকে, জলোচ্ছ্বাস-বন্যায় হাজার হাজার মানুষ নিহতের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে লিবিয়ার বিদ্রোহী সরকারের কর্মকর্তাদের ওপর। দেশটির অভ্যন্তর, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের মতে, কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই ঘটেছে এই বিপুল প্রাণহানি। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে পূর্ব লিবিয়ায় ক্ষমতাসীন সরকারের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যরা ঝড়ের আগে দেরনা শহরের বাসিন্দাদের ঝড় সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, নিরাপদ স্থানে সরেও যেতে বলেছিলেন। কিন্তু সাধারণ লোকজনের অনেকেই এই সতর্কবার্তাকে 'অতিরঞ্জিত' মনে করে আমল দিতে চাননি। জনগণের উদাসীনতার কারণেই নিহতের সংখ্যা এত বেড়েছে বলে মনে করছেন তারা। উলেস্নখ্য, গত ১০ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর দেরনায় আছড়ে পড়ে ভূমধ্যসাগরে সৃষ্ট প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল। ঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও শহরটি ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ওয়াদি দেরনা নদীর বাঁধ ভেঙে লাখ লাখ গ্যালন পানি শহরের ভেতরে প্রবেশ করায় আক্ষরিক অর্থেই ভেসে যায় শহরটি। বস্তুত, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যায় দেরনার অধিকাংশ আবাসিক ভবন ভেঙে পড়েছে এবং সেসব ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এখনো উদ্ধার হচ্ছে শত শত মরদেহ। সরকারি সতর্কবার্তা নিয়ে বিভ্রান্তি ২০১১ সালে বিদ্রোহী সামরিক গোষ্ঠির হাতে প্রেসিডেন্ট ?মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হওয়ার পর গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া। বর্তমানে ১৭ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটি পূর্ব ও পশ্চিম- দুই ভাগে বিভক্ত। দুটি আলাদা সরকার দেশের দুই অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। বেনগাজি শহরকে পূর্ব লিবিয়ার রাজধানী ঘোষণা করেছে বিদ্রোহী সরকার। তবে এই সরকার এখন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বা বৈশ্বিক কোনো স্বীকৃতি পায়নি। দেশটির মূল রাজধানী ত্রিপোলিতে আসীন সরকারই এখনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।