শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১
শস্যচুক্তি নিয়ে বিবাদ

ইউক্রেনকে আর অস্ত্র দেবে না পোল্যান্ড

আমরা এখন পোল্যান্ডকেই অস্ত্র দিয়ে সাজাব : ওয়ারশ কিয়েভসহ ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা রাশিয়ার
যাযাদি ডেস্ক
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
রুশ হামলায় ধ্বংস ইউক্রেনের একটি অবকাঠামো

ইউক্রেনকে আর অস্ত্র সহায়তা দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে অন্যতম প্রধান মিত্র পোল্যান্ড। পরিবর্তে নিজেদের অস্ত্রভান্ডার সমৃদ্ধ করবে ওয়ারশ। শস্যচুক্তি নিয়ে বিবাদের জেরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের চরম টানাপড়েনের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিল পোল্যান্ড। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

টানা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই হামলা মোকাবিলায় এবং একইসঙ্গে মস্কোর সেনাদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালাতে কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে আমেরিকাসহ মিত্র ইউরোপীয় দেশগুলো। এমনকি প্রতিবেশী পোল্যান্ডও ছিল ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহকারী দেশের তালিকায়। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পরপরই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিল যেসব দেশ, তাদের মধ্যে প্রতিবেশী পোল্যান্ড অন্যতম। এই দুঃসময়ে ইউক্রেনকে বহুভাবে সাহায্য করেছে পোলিশরা। কিন্তু সেই পোল্যান্ডের সঙ্গে চরম বিবাদে জড়িয়েছে ইউক্রেন।

চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, কিছু দেশ তাদের সঙ্গে 'প্রতারণা' করেছে। জেলেনস্কির এই মন্তব্যে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয় 'যুদ্ধের প্রথম দিন থেকে ইউক্রেনকে সাহায্য করা' পোল্যান্ড। এটিকে পোল্যান্ডের ব্যাপারে 'অযৌক্তিক নিন্দা' বলে প্রতিবাদ জানায় ওয়ারশ। জেলেনস্কির ওই মন্তব্যের কারণে গত মঙ্গলবার ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল পোলিশ সরকার। সবশেষ গত বুধবার পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি ঘোষণা দিয়েছেন, ইউক্রেনকে তারা আর অস্ত্র সরবরাহ করবেন না। তিনি বলেন, 'আমরা ইউক্রেনে আর অস্ত্র হস্তান্তর করছি না। আমরা এখন পোল্যান্ডকেই আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সাজাব।'

বিবাদের সূত্রপাত হয়েছিল ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পরপরই। রাশিয়ার আক্রমণে কৃষ্ণসাগরের রুটগুলো বন্ধ হয়ে গেলে শস্য রপ্তানির জন্য স্থলপথে বিকল্প রুট খুঁজতে বাধ্য হয় ইউক্রেন। এর ফলে মধ্য ইউরোপে বিপুল পরিমাণ ইউক্রেনীয় শস্য জমা হতে থাকে। ঘটনাক্রমে বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও সেস্নাভাকিয়ায় ইউক্রেনীয় শস্য আমদানি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই পাঁচটি দেশের ভয় ছিল, ইউক্রেনীয় শস্যের কারণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শস্যের দাম কমে যাবে, আর তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশীয় কৃষকরা। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলে ইইউ আর সেটি নবায়নের আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু হাঙ্গেরি, সেস্নাভাকিয়া ও পোল্যান্ড নিষেধাজ্ঞাটি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউরোপীয় কমিশন বারবার বলেছে, পৃথকভাবে কোনো সদস্য দেশ জোটের বাণিজ্য নীতি নির্ধারণ করতে পারে না।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থায় (ডাবিস্নউটিও) ইউরোপের ওই তিন দেশের বিরুদ্ধে মামলা করে ইউক্রেন। দেশগুলোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে কিয়েভ। ইউক্রেনীয় অর্থনীতি মন্ত্রী ইউলিয়া সিভরিদেনকো বলেছেন, 'আমাদের জন্য এটি প্রমাণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, পৃথক সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউক্রেনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে পারে না।' কিন্তু পোল্যান্ড বলেছে, তারা ইউক্রেনীয় শস্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখবে এবং ডাবিস্নউটিওতে নালিশ জানানোয় তারা মোটেও খুশি নয়।

পোলিশ প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দ্বন্দ্ব বাড়ালে ইউক্রেন থেকে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের সংখ্যা আরও বাড়াবে পোল্যান্ড। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বহুপক্ষীয় ফোরামে পোল্যান্ডের ওপর চাপ দেওয়া বা আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ জানানো দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের কোনো উপযুক্ত পদ্ধতি নয়।

ওয়ারশতে ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূতকে তলবের পর কিয়েভ বলেছে, পোল্যান্ড যেন 'আবেগ একপাশে রেখে' সমস্যা সমাধানে গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয়। অবশ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, সেস্নাভাকিয়া- তিন দেশই বলেছে, তাদের ভূখন্ড ব্যবহার করে অন্যান্য বাজারে ইউক্রেনীয় শস্য পাঠানোয় কোনো বাধা নেই।

কিয়েভসহ ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক

বিমান হামলা রাশিয়ার

এদিকে, ইউক্রেনে আকাশপথে আবারও ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার ভোরে চালানো এই হামলায় রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে বহু অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এছাড়া রুশ এই হামলায় ১৮ জন আহত হয়েছেন।

বিমান হামলার সতর্কতার পর কিয়েভ ও আশপাশের অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন স্থানে উদ্ধারকারী দল পাঠানোর কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লাইমেনকো বলেছেন, বৃহস্পতিবার ভোরে হওয়া এই হামলায় কিয়েভ ও চেরকাসি অঞ্চলে এবং পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে কিছু মানুষ আহত হয়েছেন। 'টেলিগ্রাম' মেসেজিং অ্যাপে তিনি লিখেছেন, 'এটি অস্থির সকাল। ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।'

কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো বলেছেন, রাশিয়ার এই হামলায় কিয়েভে ৯ বছর বয়সি এক মেয়েসহ সাতজন আহত হয়েছেন। মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ পড়ে একটি অবকাঠামো ও বেশ কয়েকটি অনাবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এর ফলে সেখানে আগুনও লেগে যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লাইমেনকো বলেছেন, মধ্য ইউক্রেনের চেরকাসিতে রুশ হামলায় একটি হোটেল এবং বেশ কয়েকটি ছোট দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে, ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা টেলিগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। সেখানে উদ্ধারকারীরা আহত এক ব্যক্তিকে স্ট্রেচারে করে অগ্নিকান্ডের স্থান থেকে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আঞ্চলিক কর্মকর্তারা চেরকাসি, খারকিভ, খমেলনিতস্কি, রিভনে, ভিন্নিতসিয়া, লভিভ ও ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক অঞ্চলে বিস্ফোরণের কথা জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে