সভ্যতার কোপে বদলে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীর জীবনধারা

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সভ্যতার কোপ পড়েছে জঙ্গলে। মানুষের উপদ্রবে রীতিমতো বিরক্ত জঙ্গলের বাসিন্দারা। তাই মানুষকে এড়িয়ে চলতে তারা বদলে ফেলছে খাওয়া-ঘুমের সময়। বদলে যাচ্ছে তাদের শিকারও। এমনটাই দাবি করা হয়েছে ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে। এতে বলা হয়েছে, হাতি, বাঘ কিংবা বুনো কুকুরের মতো প্রাণীদের রোজকার রুটিনে বদল দেখা যাচ্ছে গোটা বিশ্বেই। তারা দিনের বেলায় ঘুমাচ্ছে এবং আরও বেশি করে নিশাচর হয়ে উঠছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এর একমাত্র কারণ হলো মানুষ। জনসংখ্যা বাড়ছে, চাহিদা বাড়ছে; সেটা মেটাতে অল্প জায়গায় বেশি উৎপাদনের পরিকল্পনা নিচ্ছেন সরকারপ্রধানরা। এ ক্ষেত্রে টাগের্ট হচ্ছে বন-জঙ্গল। ফলে সেখানে এখন মানুষের বিচরণ বাড়ছে। তাদের নানা মাত্রিক কমর্কাÐের পরিসীমাও বাড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জঙ্গলের বাসিন্দাদের ওপর। এরই মধ্যে অসংখ্য প্রাণী বিলুপ্তির খাতায় নাম লিখিয়েছে। ফলে টনক নড়েছে উন্নত দেশগুলোর। তারা প্রকৃতি বঁাচাতে চুক্তি করছে। কিন্তু কাযর্কর হচ্ছে নিতান্তই কম। ক্যালিফোনির্য়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি বিজ্ঞানের স্নাতকস্তরের ছাত্রী ও বাস্তুসংস্থানবিদ (ইকোলজিস্ট) কেটলিন গেনরের কথায়, ‘পশুদের আচার-আচরণের পরিবতের্ন বাস্তুতন্ত্রের ওপর কী প্রভাব পড়ছে, আমরা সেটা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছি।’ আগের গবেষণাগুলোতে দেখা গিয়েছিল, কোটি কোটি বছর আগে এই পশুরা নিশাচরই ছিল। এরপর এক সময় শিকার-খাওয়া-ঘুমকে দিন-রাতে ভাগ করে নেয় তারা। কেটলিন বলেন, ‘লাখ লাখ বছর আগে দিন-রাতের জীবনে যে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল পশুরা, আমরা আবার তাদের পুরনো অভ্যাসে ঠেলে ফেরত পাঠাচ্ছি। আবার নিশাচর করে তুলছি। গোটাটাই হচ্ছে প্রাকৃতিক নিবার্চনের নীতি মেনে।’ ছয় মহাদেশের ৬২ প্রজাতির প্রাণীকে নিয়ে করা ৭৬টি গবেষণাপত্র ত‚ল্যমূল্য বিচার করে গবেষকরা এই সিদ্ধন্তে পেঁৗছেছেন। ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত রিপোটের্ বলা হয়েছে, ‘যে প্রাণী তার দৈনন্দিন কাজকমর্ দিন-রাতের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিল, সে এখন মানুষের সঙ্গ এড়াতে ৬৮ শতাংশ কাজই সারছে রাতের অন্ধকারে।’ ক্যালিফোনির্য়ার সান্তা ক্রুজ পাবর্ত্য এলাকায় নেকড়ের মতো দেখতে এক ধরনের বুনো কুকুরের বাস রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, লোকজনের হাইকিং কিংবা বাইসাইক্লিংয়ের চোটে বিরক্ত হয়ে তারা দিনের বেলা ঘুমাচ্ছে। ফলে, তাদের শিকারও বদলে যাচ্ছে। রাতে তারা যে সময় জেগে থাকছে, ওই সময় যেসব ছোট প্রাণীরা জেগে থাকে, শিকার হচ্ছে তারাই। সহ-গবেষক নেল কাটার্র জানান, একই ছবি ধরা পড়েছে হিমালয়ের কোলে নেপালেও। লোকজন এড়িয়ে চলতে শিকারের জন্য বারবার একই জায়গা বেছে নিচ্ছে বাঘ। বয়েজি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কাটার্র বলেন, ‘আমি আশাবাদী, যতই চ্যালেঞ্জিং হোক না কেন, মানুষ ও বন্যপ্রাণিদের সহাবস্থানের একটা পথ ঠিকই বেরোবে। তবে যেটা নিয়ে চিন্তা সেটা হলো, এতে বাঘেদের ওপর কী প্রভাব পড়বে।’ একই সঙ্গে তিনি জানান, সহাবস্থানের পথ বেরোলেও হয়তো এসব প্রাণীর খাবার, প্রজননতন্ত্র, সঙ্গমের আচরণও বদলে যাবে। আর সেটা ধরা পড়বে, ভবিষ্যৎ গবেষণায়। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ