রাশিয়ার পক্ষে কথা বলে বিপাকে ট্রাম্প

রাশিয়া আমাদের মিত্র নয় আমাদের মধ্যে কোনো নৈতিক সামঞ্জস্য নেই: পল রায়ান জ্জ তিনি পুরোপুরি পুতিনের পকেটে চলে গেছেন: জন ব্রেনান

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে সোমবার অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার পক্ষে কথা বলে বিপাকে পড়েছেন ট্রাম্প। তার নিজ দেশেই তাকে নিয়ে হচ্ছে কড়া সমালোচনা। এমনকি নিজ দল রিপাবলিকান পাটির্র রোষানল থেকেও বাদ পড়ছেন না তিনি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্, এবিসি নিউজ ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নিবার্চনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে বলে মাকির্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বরাবরই অভিযোগ করে আসছে। তবে সোমবার ফিনল্যান্ডে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বরং নিজ গোয়েন্দা সংস্থারই সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট নিবার্চনে রাশিয়ার মাথা ঘামানোর কোনো কারণ নেই।’ তার এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্যের বিপরীত। দুই প্রেসিডেন্ট হেলসিংকিতে প্রায় দুই ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কি মনে করেন ২০১৬ সালের মাকির্ন প্রেসিডেন্ট নিবার্চনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ আছে? এ বিষয়ে আপনি আপনার গোয়েন্দা সংস্থা, না-কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট, কাকে বিশ্বাস করেন?’ জবাবে ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এফবিআইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং এর জন্য এফবিআই ও নিজ দেশের বিচার বিভাগকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন তাকে জানিয়েছেন, রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেনি। আমিও এটি হওয়ার কোনো কারণ দেখি না।’ রুশ-মাকির্ন সম্পকের্র টানাপড়েনের জন্য ট্রাম্প রাশিয়ার চেয়ে সাবেক মাকির্ন প্রশাসনকেই বেশি দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমি দুই দেশকেই দায়ী করব। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র বোকা ছিল। আমরা সবাই বোকা ছিলাম।’ এমন সব বক্তব্যের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রে নিজ দলসহ সবার কড়া সমালোচনার মুখে পড়ছেন ট্রাম্প। কংগ্রেসে উচ্চপযাের্য়র রিপাবলিকান নেতা হাউস স্পিকার পল রায়ান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা করে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ট্রাম্পকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, রাশিয়া আমাদের মিত্র নয়। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো নৈতিক সামঞ্জস্য নেই। রাশিয়া আমাদের মৌলিক নীতি ও আদশের্র প্রতি শত্রæভাবাপন্ন।’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়া যে মাকির্ন নিবার্চনে হস্তক্ষেপ করেছে সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’ রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন-ও বলেন, ‘বৈঠক ও এর পরবতীর্ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের পারফরম্যান্স ছিল একজন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কলঙ্কজনক।’ সিনেট আমর্ড সাভির্স কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এর আগে কোনো প্রেসিডেন্ট একজন স্বৈরশাসকের কাছে এর চেয়ে হীনভাবে নিজেকে ছোট করে উপস্থাপন করেনি।’ অপর রিপাবলিকান সিনেটর সেন লিন্ডসে গ্রাহাম টুইট করেন, ‘সুযোগ হাতছাড়া হলো... ২০১৬ সালের নিবার্চনে হস্তক্ষেপে রাশিয়াকে দায় স্বীকার করানোর।’ ডেমোক্রেটিক সিনেটের নেতা চাক শুমার বলেন, ‘ট্রাম্পের কাযর্ক্রম আমাদের প্রতিপক্ষদের শক্তিশালী করেছে। অন্যদিকে, আমাদের নিজস্ব ও মৈত্রীদের প্রতিরক্ষাকে দুবর্ল করেছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ড্যান কোয়াটস এ বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরুদ্ধে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মাকির্ন গণতন্ত্রকে ছোট করার জন্য এর নিবার্চনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের চলমান, পরিব্যাপ্ত প্রচেষ্টা সম্পকের্ গোয়েন্দা সম্প্রদায় স্পষ্ট হয়েছে।’ সিআইয়ের সাবেক পরিচালক জন ব্রেনান আরও এক হাত বাড়িয়ে বলেন, ‘ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলন ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। তার বক্তব্য শুধু জড়বুদ্ধিরই নয়, তিনি পুরোপুরি পুতিনের পকেটে চলে গেছেন। রিপাবলিকান দেশপ্রেমিকরা- আপনারা কোথায়?’ তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক ভাষণে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠককে সমথর্ন ও প্রশংসা করেছেন। এদিকে, নিজের বিপাক অবস্থান বুঝতে পেরে পরে এক টুইটার বাতার্য় নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থার প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। তিনি লেখেন, ‘আমাদের গোয়েন্দাদের ওপর বিশাল আস্থা রয়েছে আমার।’ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট নিবার্চনের সমথের্নর পাল্লা হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে নেয়ার একটি উদ্যোগের পেছনে রাশিয়ার ভ‚মিকা ছিল। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চালানো সাইবার হামলা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে এ কাজ করেছিল তারা।