মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা

প্রস্তাবে টিকে গেলেও কোন দল কার জোটসঙ্গী হবে, সেই সমীকরণ স্পষ্ট হবে

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’ (এনডিএ) তথা বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধী দলগুলো। পালাের্মন্টের বষার্কালীন (বাদল) অধিবেশনের প্রথম দিনই তেলেগু দেশম পাটির্ (টিডিপি) অনাস্থা প্রস্তাব আনে। আর এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। এই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা ও ভোটাভুটি হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে দেড় দশক পর আবারও কোনো সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় পালাের্মন্টে গৃহীত হয় অনাস্থা প্রস্তাব। সংবাদসূত্র : এবিপি, এনডিটিভি যদিও এই অনাস্থা প্রস্তাবে মোদি সরকারের পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, বিজেপির হাতে পযার্প্ত এমপি রয়েছে। তবু ২০১৯ সালে লোকসভা নিবার্চনের আগে বিরোধী ও শাসক দল উভয়েরই শক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই অনাস্থা প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্ বলেই মনে করছে ভারতের রাজনৈতিক মহল। বুধবার থেকে শুরু হয়েছে পালাের্মন্টের বষার্কালীন অধিবেশন। এদিনই একাধিক বিরোধী দল এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে। স্পিকার সুমিত্রা মহাজন জানান, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পাটির্-এনসিপি, টিডিপি, কংগ্রেসসহ অনেক দলই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। এরপর হয় লটারি। এতে টিডিপি এমপি কাশিনেনি শ্রীনিবাসনের নাম ওঠে। তার আনা প্রস্তাবের ওপরই এরপর আলোচনা হবে। উল্লেখ্য, তেলেগু দেশম পাটির্-টিডিপি আগে এনডিএ জোটে থাকলেও চলতি বছরের মাচের্ জোট সরকারের ওপর থেকে সমথর্ন তুলে নেয়। টিপিডির অভিযোগ ছিল, বিশেষ প্যাকেজ থেকে বঞ্চিত অন্ধ্রপ্রদেশ। ভারতে কোনো সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হলে ন্যূনতম ৫০ জন এমপির সমথর্ন লাগে। দেশটির পালাের্মন্ট-বিষয়কমন্ত্রী অনন্ত কুমার বলেন, ‘বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর আস্থা নেই। কিন্তু এটা পরিষ্কার করে বলতে চাই, দেশবাসীর পূণর্ আস্থা রয়েছে তার ওপর।’ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধীদের ছুড়ে দেয়া এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। তার দাবি, যেহেতু পালাের্মন্টের নিম্নকক্ষে (লোকসভা) কেন্দ্রীয় সরকারের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাই তারাই জিতবেন। এর আগে শেষবার লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয় ২০০৩ সালে। তখন সামনেই ছিল রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও দিল্লির ভোট। তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী সোনিয়া গান্ধী অটল বিহারি বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব আনেন। কিন্তু সেই সময় অনাস্থা ভোটে সরকার পড়ার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ভোটাভুটিতে সরকার পক্ষেরই জয় হয়। এরপর ২০০৮ সালে ইন্দো-মাকির্ন পরমাণু চুক্তির বিরুদ্ধে ‘ইউনাইটেড পিপলস অ্যালায়েন্স’ বা ইউপিএ সরকারের ওপর থেকে সমথর্ন তুলে নেয়। এরই জের ধরে আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হয় কংগ্রেস তথা ইউপিএ জোটকে। তখন শাসকবিরোধী দুইপক্ষই অসুস্থ বা জেলে থাকা এমপিদেরও তখন ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণের জন্য ‘হুইপ’ জারি করে। সে সময় ১৯ ভোটে জিতে সরকার পক্ষ। ফলে টিকে যায় মনমোহন সিং সরকার। এর আগে অবশ্য, ১৯৯৯ সালে এই অনাস্থা ভোটেই ১৩ মাসের মাথায় সরকার পড়ে যায়। সে সময় জয়ললিতা বিজেপির ওপর থেকে সমথর্ন তুলে নেয়ায় আস্থা ভোটের মুখে পড়ে বাজপেয়ী সরকার। তখন মাত্র এক ভোটের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় সরকার। এটাই এখন পযর্ন্ত ভারতীয় পালাের্মন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোটের ব্যবধানে অনাস্থা ভোটের ফল নিধার্রণের নজির। তবে, এবার ফল যাই হোক, রাজনীতিতে অনাস্থা ভোট সব সময়ই গুরুত্বপূণর্। এর ওপর লোকসভা নিবার্চনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। বিধানসভা ভোটের মুখে বেশ কয়েকটি রাজ্য। কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ও লোকসভা ভোট একসঙ্গে করার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, টিডিপির চন্দ্রবাবু নাইডু, আম আদমি পাটির্র (আপ) অরবিন্দ কেজরিওয়াল ‘ফেডেরাল ফ্রন্ট’ নিয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। কংগ্রেসও আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে জোটের তোড়জোড় চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনাস্থা ভোটে কে কোন্ দিকে ঝেঁাকে, কোন্ দল কার জোটসঙ্গী হবেÑ সেই সমীকরণই এবার অনেকটা স্পষ্ট হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।