ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলা

বন্দুক আইন সংস্কার করছে নিউজিল্যান্ড

নতুন আইন মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, মন্ত্রিপরিষদের মতৈক্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত জানালেন জেসিন্ডা

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ভয়াবহ হামলার পর সে দেশের মন্ত্রিসভা বন্দুক আইন পরিবর্তনে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা আরডার্ন। তিনি বন্দুক আইন দ্রম্নত সংস্কার হবে বলে উলেস্নখ করেছেন। আরডার্ন জানান, ২৫ মার্চ নাগাদ অস্ত্র আইন সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত জানাবেন। সংবাদসূত্র: বিবিসি গত ১৫ মার্চ জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে হামলায় ৫০ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হন। হামলাকারী ব্রেনটন ট্যারেন্টকে গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে হাজির করে তার বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। নৃশংস ওই হত্যাকান্ডের পর অবাধ বন্দুক ব্যবহারের সুযোগের সমালোচনা এবং বন্দুক আইন সংস্কারের দাবি ওঠে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন তখন শিগগিরই ওই আইনের পরিবর্তন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে আরডার্ন আশা প্রকাশ করেন, অস্ত্র আইন সংস্কারের বিস্তারিত ২৫ মার্চের মধ্যে প্রকাশ করতে পারবেন তিনি। আরডার্ন আরও বলেন, এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, 'ওই সন্ত্রাসী ঘটনার ১০ দিনের মধ্যে আমরা অস্ত্র আইন পরিবর্তনের ঘোষণা করব, যা নিউজিল্যান্ডের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। মন্ত্রিপরিষদের মতৈক্যের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।' ক্রাইস্টচার্চের হামলার পর জেসিন্ডা জানিয়েছিলেন, সন্দেহভাজন হামলাকারীর অস্ত্রের লাইসেন্স আছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে লাইসেন্সটি পেয়েছিল সে এবং তার কাছে পাঁচটি বন্দুক ছিল। সোমবার সকালে খুচরা বন্দুক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান গান সিটি জানায়, হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির কাছে তারা অস্ত্র বিক্রি করেছিল। তবে মসজিদে হামলার ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের ক্ষমতাসম্পন্ন যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা তারা বিক্রি করেনি। এদিকে নিউজিল্যান্ডের পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন এরই মধ্যে সেমি-অটোম্যাটিক অস্ত্রের বৈধতা বাতিলের দাবি তুলেছে বলে রেডিও নিউজিল্যান্ডের খবরে বলা হচ্ছে। এর আগে নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইনে কড়াকড়ি আরোপ করার চেষ্টা করা হলেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীদের শক্ত অবস্থান এবং এবং নিউজিল্যান্ডে শিকার করার সংস্কৃতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। এছাড়া অতীতে অস্ত্র আইন পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন পিটার্স। তবে ক্রাইস্টচার্চের হামলার পর পাল্টে গেছে পরিস্থিতি। সোমবারের সংবাদ সম্মেলনের সময় জেসিন্ডার পাশেই ছিলেন উইন্সটন পিটার্স। জাসিন্ডাকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, 'বাস্তবতা হলো, শুক্রবার দুপুর ১টার পর আমাদের পৃথিবী চিরতরে পাল্টে গেছে এবং আমাদের আইনও পাল্টে যাবে।' নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইন নিউজিল্যান্ডের বিদ্যমান আইনে অস্ত্রের মালিকানা পাওয়ার আইনি বৈধ বয়স ১৬। মিলিটারি স্টাইল সেমি-অটোমেটিক বন্দুকের মালিকানার জন্য বৈধ বয়স ১৮। দেশটির প্রায় ১৫ লাখ ব্যক্তি মালিকানাধীন আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। সব অস্ত্রের মালিকের লাইসেন্স প্রয়োজন হলেও প্রতিটি অস্ত্রই যে নিবন্ধনকৃত হতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যক্তির অতীত কার্যকলাপ এবং স্বাস্থ্য যাচাই করতে হবে। একবার লাইসেন্স পাওয়ার পর অস্ত্রের মালিক যতগুলো ইচ্ছা ততগুলো অস্ত্র কিনতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ায় দুই বাড়িতে পুলিশের হানা ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার দুটি বাড়ি ঘেরাও করে তলস্নাশি চালিয়েছে পুলিশ। সন্দেহভাজন এই উগ্র সন্ত্রাসীর বাড়ি সিডনির ৬০০ কিলোমিটার উত্তরে গ্রাফটন শহরে। সোমবার সকালে নিউ সাউথ ওয়েলসের কর্তৃপক্ষ গ্রাফটনের নিকটবর্তী স্যান্ডি বিচ ও লরেন্সের দুটি বাড়িতে তলস্নাশি চালিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের পুলিশের তদন্তে সহায়তা করতে এ তলস্নাশি চালানো হয়েছে বলে নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে। যে দুইটি বাড়িতে তলস্নাশি চালানো হয়েছে, তার মধ্যে একটি ট্যারেন্টের বোনের বাড়ি বলে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অভিযানের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে, এমন কিছু উপাদান খুঁজে বের করা, যা নিউজিল্যান্ড পুলিশকে তাদের চলমান তদন্তে সহায়তা করতে পারে। তবে অভিযানে 'বর্তমান বা আসন্ন হুমকির' কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অস্ট্রেলিয়ায় থাকা তার পরিবার তদন্তে সহযোগিতা করছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। রোববার গ্রাফটনে ট্যারান্ট পরিবারের দুই সদস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নির্বিচার এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় তারা 'স্তম্ভিত' হয়ে গেছেন। ট্যারান্টের চাচা টেরি ফিটজেরাল্ড 'নাইন নিউজ'কে বলেছেন, 'নিহত ও আহতদের জন্য এবং তাদের পরিবারগুলোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি আমরা।'