ভারতে লোকসভা নির্বাচন-২০১৯

চৌকিদারি নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চেন্নাইয়ের রাস্তায় বিক্রি হচ্ছে রাহুল ও মোদির মুখোশ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত রোববার তার নামের আগে 'চৌকিদার' শব্দটি জুড়ে টুইটারে নিজের নতুন নামকরণ করেছেন 'চৌকিদার নরেন্দ্র মোদি'। এরপর ভারতের মন্ত্রী ও বিজেপি নেতাদের মধ্যেও নিজের নামের সঙ্গে চৌকিদার যোগ করার হিড়িক পড়ে গেছে। আর তারা বলছেন, যারাই দেশের দুর্নীতি ও সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়ছেন, তাদেরই উচিত হবে এই নতুন উপাধি গ্রহণ করা। দুর্নীতির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে লাগাতার আক্রমণ করে বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এর আগে যে 'চৌকিদার চোর হ্যায়' স্স্নোগান তোলা শুরু করেছিলেন, তার মোকাবেলায় বিজেপি এখন এভাবেই পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় যেতে চাইছে। কিন্তু ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে 'চৌকিদার' কীভাবে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এলো? আসলে রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনায় কথিত দুর্নীতির অভিযোগকে ঘিরে গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক জনসভায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। তিনি 'চৌকিদার' বলামাত্রই তার সমর্থকরা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠছেন 'চোর হ্যায়' বলে! কিন্তু এখন নিজে থেকেই নামের আগে সেই চৌকিদার যোগ করে পাল্টা আক্রমণে যেতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদি। তার দেখাদেখি টুইটার হ্যান্ডলে বিজেপির শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীরাও এখন 'চৌকিদার অমিত শাহ' বা 'চৌকিদার রাজনাথ সিং' নাম নিয়েছেন। বিজেপির মন্ত্রী ও মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর বলছেন, 'কংগ্রেস কিন্তু চৌকিদারকে সম্মান করে কিছু বলছে না- তারা তাদের চোর বলছে। আগেও তারা চা-ওয়ালা বা পকোড়া-ওয়ালার মতো; যারা মেহনত করে খেটে খায়, তাদের অপমান করেছিল। বেইমানির অর্থে যারা খাচ্ছে, শুধু তারাই কংগ্রেসের চোখে সম্মানিত, আর চা-ওয়ালা, পকোড়া-ওয়ালা, চৌকিদারের মতো মেহনতীরা অপমানের শিকার।' তাহলে কি মোদি এর আগে যেভাবে নিজের চা-ওয়ালা পরিচয়কে দারুণভাবে বিপণন করতে পেরেছিলেন, একইভাবে নিজেকে চৌকিদার বলে জাহির করে দুর্নীতির অভিযোগকেও ভোঁতা করে দিতে পারবেন? কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র ও শিলচরের এমপি সুস্মিতা দেব অবশ্য তা মনে করেন না। তিনি বলছিলেন, 'প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেকে ভারতের প্রধান সেবক ও চৌকিদার বলে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু সেই চৌকিদারের বিরুদ্ধেই এখন রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনায় চুরির অভিযোগ উঠেছে। আর সেই চুরির অভিযোগ ঠেকাতেই তিনি আক্রমণাত্মক খেলার স্ট্র্যাটেজি নিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না, ওনার রাফায়েল কেলেঙ্কারি ধরা পড়বেই। এর আগে তিনি নিজেকে চা-ওয়ালাও বলেছিলেন, কিন্তু তিনি কোনো দিন চা বিক্রি করেছেন, তার প্রমাণ মেলেনি। নিজেকে চৌকিদার বলে দাবি করে বিতর্কের ন্যারেটিভটা (আখ্যান) বদলে দেয়ার চেষ্টাও সফল হবে না। আর ভারতের যে সব মানুষ আধপেটা খেয়ে ঘুমাতে যায়, কিংবা মূল্যবৃদ্ধির আঁচ যাদের পকেটে লাগে, তারা টুইটারও ফলো করে না, ফেসবুকও দেখে না। কাজেই এসব গিমিকে (প্রতারণামূলক কৌশল) তাদের কিছু আসে যায় না।' দিলিস্নতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোমা চৌধুরী আবার বলছিলেন, 'সমাজে চৌকিদার আসলে যার হওয়া দরকার, সেটা হলো মিডিয়া। কিন্তু ভারতের মিডিয়াই ভয়ঙ্কর আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোর ওপর তারা সতর্ক নজর মোটেই রাখতে পারছে না। বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলোকে তো মনে হচ্ছে যেন কর্তৃপক্ষেরই একটা সম্প্রসারণ!' তাহলে চৌকিদার স্স্নোগান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এই টানাটানি কি আসন্ন নির্বাচনে কোনো প্রভাবই ফেলবে না? সোমা চৌধুরীর মতে, 'এগুলো আসলে দিলিস্ন-ভিত্তিক বা সোশ্যাল মিডিয়া-কেন্দ্রিক কিছু মানুষের জন্য তৈরি করা 'নয়েজ' বা গোলযোগ। কিন্তু দেশের মানুষ এসব দেখে ভোট দেয় না। আমরা আগে বারবার দেখেছি ভারতীয় ভোটাররা খুব পরিণত, নিজেদের প্রয়োজন বুঝেই তারা কখনো অমুক দলকে সাজা দিয়েছে, আবার তমুক দলকে পুরস্কৃত করেছে। আর তার আগে এই চৌকিদার-বিতর্কটা নির্বাচনী রাজনীতির বিনোদনেরই অংশ বলে আমার ধারণা।' পাঁচ বছর আগে ভারতে নির্বাচনের সময় চা-ওয়ালা বা চা-বিক্রেতারা যে রকম আইকনে (প্রতিমূর্তি) পরিণত হয়েছিলেন, রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্র ধরে এবারেও সেই একই জিনিস ঘটছে বাড়ি বা অফিসের নিরাপত্তারক্ষী, অর্থাৎ চৌকিদারদের সঙ্গে! সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ