শেষ ঘাঁটি 'বাঘুজে' হাতছাড়া

আইএসের খিলাফতের অবসান

ভূখন্ডের নিয়ন্ত্রণ চলে গেলেও আইএস এখনো বিশ্ব নিরাপত্তার প্রধান হুমকি জঙ্গিগোষ্ঠীটির ১৫ থেকে ২০ হাজার সশস্ত্র সদস্য সক্রিয় রয়েছে

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আইএসপ্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি
যাযাদি ডেস্ক শেষ পর্যন্ত সিরিয়ায় সর্বশেষ ঘাঁটি হাতছাড়া হলো ইসলামিক স্টেটের (আইএস)। এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটল তথাকথিত খিলাফতের। মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ শনিবার বলছে, 'বাঘুজে' ঘাঁটিতে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ইসলামিক স্টেটের পাঁচ বছরের 'খিলাফতের' পতন হয়েছে। সিরিয়ার ছোট্ট একটি গ্রাম বাঘুজে ছিল আইএসের শেষ ঘাঁটি এবং সেখানে তারা এতদিন নিজেদের পতাকা উড়িয়েছিল। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা এসডিএফের মিডিয়া অফিসের প্রধান মুস্তাফা বালি এক বিবৃতিতে 'তথাকথিত খিলাফতের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ' এবং আইএসের দখল করা সব এলাকা শতভাগ মুক্ত করার খবর জানান। একসময় আইএসের শক্তি যখন তুঙ্গে, তখন তারা সিরিয়া এবং ইরাকের ৮৮ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূখন্ড নিয়ন্ত্রণ করত। আয়তনের দিক থেকে সেটি ছিল যুক্তরাজ্যের সমান। সেখানকার এক কোটি লোকের ওপর তারা জঙ্গি ধর্মীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তেল বিক্রি, চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং ডাকাতি করে তারা শত শত কোটি ডলার আয় করেছিল। তিনি আরও বলেন, 'এই বিশেষ দিনে যেসব শহীদদের প্রচেষ্টায় এই বিজয় সম্ভব হয়েছে, আমরা তাদের স্মরণ করছি।' বিজয় উদযাপনের জন্য এসডিএফের যোদ্ধারা তাদের নিজস্ব হলুদ রঙের পতাকা উত্তোলন করে বিশ্বকে বিজয়ের খবর জানান দিয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা আইএসের পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং কুর্দি-প্রধান এসডিএফ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে হারতে হারতে তারা শেষ অবস্থান নিয়েছিল পূর্ব সিরিয়ার বাঘুজেতে। এখন তাদের সেই ঘাঁটিরও পতন ঘটল। এর আগে এসডিএফ আইএসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াই শুরু করে গত মার্চ মাসে। কিন্তু সেই অভিযানের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে, যখন জানা যায়, আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিভিন্ন ভবন, তাঁবু আর সুড়ঙ্গগুলোতে বহু বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছে। লড়াই থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাজার হাজার নারী ও শিশু সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ভূখন্ডের নিয়ন্ত্রণ চলে গেলেও আইএস বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য প্রধান হুমকি হয়ে থাকবে। আইএসের প্রভাব ওই এলাকায় এখনো নিঃশেষ হয়ে যায়নি। নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান এবং ফিলিপাইনে এখনো বহু আইএস অনুসারী রয়ে গেছে। লড়াই যে শিগগিরই শেষ হতে চলেছে, তা কদিন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। একের পর এক ঘাঁটি হারিয়ে শেষমেশ দোর্দন্ড প্রতাপ খিলাফত আশ্রয় নেয় বাঘুজের ধ্বংসস্তূপে। কিন্তু ততদিনে সিরিয়ার এই প্রান্তিক শহরটি যেন মৃতু্যপুরী। মার্কিন বোমারু বিমান ও এসডিএফের গোলাবর্ষণে পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছিল বহুতল ভবনগুলো। না ছিল পানির ব্যবস্থা, না বিদু্যৎ। আহতদের জন্য চিকিৎসা বলতে ছিল শুধু মরফিন। তাও ফুরিয়ে এসেছিল শেষের দিকে। মাঝ সমুদ্রে পালতোলা নৌকাকে যেভাবে ঘিরে ধরে হাঙররা, সেভাবেই শহরের চারপাশে টহল দিচ্ছিল এসডিএফ যোদ্ধারা। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইরাক সীমান্তে অবস্থিত বাঘুজে দখল করার জন্য লড়াই করছিল এসডিএফ। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিষয়টি জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা সচিব প্যাট্রিক শ্যানন। তিনি বলেন, সিরিয়ায় আরও কোনো জায়গা দখল করে নেই ইসলামিক স্টেট। ইরাকে ২০০৩ সালের মার্কিন অভিযানের পরবর্তীকালে 'ইরাকি আল-কায়েদা' থেকে ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক-এর জন্ম হয়। ২০১১ সালে তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগ দেয়। সিরিয়ার রাকা হয় তাদের রাজধানী। তাদের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি গোষ্ঠীটির নতুন নাম দেন 'ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট' (সিরিয়া); যা সংক্ষেপে আইসিস বা আইসিল। তারা মসুল এবং তিকরিতসহ অনেক ইরাকি শহর এবং সিরিয়ার বৃহত্তম হোমস তেলক্ষেত্র দখল করে নেয়। এরপর ২০১৪ সালে জিহাদি গ্রম্নপটি 'খিলাফত' প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়- যার নাম হয় ইসলামিক স্টেট। আইএস যোদ্ধারা ইরাকের ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যা এবং ইয়াজিদি নারীদের যৌনদাসীতে পরিণত করে। তারা পশ্চিমা জিম্মিদের শিরশ্ছেদের বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রচার করে। ওই বছর সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন বাহিনী তাদের ওপর বিমান হামলা শুরু করে। তবে বাঘুজে পরাজয়ের পরও মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, আইএসের ১৫ থেকে ২০ হাজার সশস্ত্র সদস্য ওই অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। এর অনেকগুলোই 'স্স্নিপার সেল' অর্থাৎ তারা এখন গোপনে অবস্থান করছে এবং আইএস পুনর্গঠিত হওয়া শুরু করলেই তারা আবার রবরিয়ে আসবে। কারণ বাঘুজের পতন যখন অত্যাসন্ন, তখনও আইএস তাদের কথিত মুখপাত্র আবু হাসান আল-মুহাজিরের একটি অডিও বার্তা প্রচার করেছিল। তাতে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন খিলাফত শেষ হয়ে যায়নি।