গাজায় ইসরাইলি হামলা : বিস্নংকেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের ফল শূন্য

প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এই সময়ে মধ্যে চারবার ইসরাইলসহ মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন। চলতি সপ্তাহে সর্বশেষ সফর করেছেন তিনি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ও ইসরাইল সফর করেও তেমন কোনো ফল বয়ে আনতে পারেননি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিস্নংকেন বুধবার ইসরাইল থেকে পশ্চিম তীর এবং তারপর বাহরাইন ভ্রমণ করেন। এটি তার সর্বশেষ মধ্যপ্রাচ্যের সফরের শেষ অংশ ছিল। এর আগে তিনি তুরস্ক, গ্রিস, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব ও মিশর সফর করেন। বরাবরের মতো বিস্নংকেনের এই সফরে বেশিরভাগ মনোযোগ ছিল ইসরাইলের প্রতি আমেরিকার অব্যাহত সমর্থনের দিকে। ইসরাইলকে থামাতে দেশটি কী পদক্ষেপ নেয়, সেটি জানতে সবাই আগ্রহী। কারণ ইসরাইলের নির্বিচারে হামলায় প্রায় ২৪ হাজার মানুষের মৃতু্য হয়েছে গাজায়। সেখানে একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। এমন উদ্বেগের মধ্যে আমেরিকার পদক্ষেপ দেখতে চায় বিশ্ব। গত মঙ্গলবার তেল আবিবে দাঁড়িয়ে বিস্নংকেন বলেন, আমেরিকা ও বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলের সঙ্গে আছে। তবে তিনি ইসরাইলকে গাজায় বেসামরিক হতাহতের বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, সেখানে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি রয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা বিস্নংকেনের সর্বশেষ সফরকে 'মুখরক্ষার সফর' হিসেবে অভিহিত করেছেন। কারণ গাজায় হামলার শুরু থেকেই ইসরাইলের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে এবং বাস্তবে কোনো পদক্ষেপের বিষয়ে ব্যর্থ হয়েছেন বিস্নংকেন। এরপর তিনি একটি সূক্ষ্ণ লাইনে হাঁটতে চেয়েছিলেন। মঙ্গলবার তেল আবিবে বিস্নংকেন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা এই যুদ্ধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে চাই।' তবে 'ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ' (ডিএডবিস্নউএন)-এর ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিষয়ক গবেষণা পরিচালক মাইকেল শেফার ওমের ম্যান বলেন, 'যুদ্ধের তিন মাস পার হওয়ার পরও একটি শেষ খেলা অধরা রয়ে গেছে।' তিনি জানান, এখনো কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি যুদ্ধের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূল করার ইসরাইলের মিশন নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। এই গবেষক বলেন, 'ইসরাইলিরা এখনো স্বপ্নের জগতে বাস করছে, যাতে তারা মনে করে যে, তারা অসম্ভবকে অর্জন করতে পারে। আর আমেরিকানরাও এমন স্বপ্নের জগতে রয়েছে। দেশটি মনে করছে, ইসরাইলিদের এমন কোনো স্থানে তারা নিয়ে যেতে পারবে, যেটি বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।' সমালোচকরা সতর্ক করেছেন, আমেরিকা ও ইসরাইলও যুদ্ধের পরে এগিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছে। যেমন তেল আবিব সফরে বিস্নংকেন ইসরাইলকে ফিলিস্তিনের দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান প্রত্যাখ্যান করে বলেন, যুদ্ধের পর ইসরাইল গাজার ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। এছাড়া ইসরাইলি উগ্রপন্থি একাধিক মন্ত্রী গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। বিশ্লেষকরা এটিকে জাতিগত নির্মূলের জন্য একটি চাপ হিসেবে দেখছেন। ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সেন্টার অব মিডল ইস্ট স্টাডিজ'র পরিচালক জোশুয়া ল্যান্ডিসের মতে, সাম্প্রতিক বক্তৃতাটি গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার জন্য ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইসরাইলের সরকার যা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, তার মধ্যে 'ব্যবধান'কে বোঝায়। ল্যান্ডিস বলেন, নেতানিয়াহু বহুবার বলেছেন, আমেরিকাকে মানানো খুব সহজ। তিনি যত অস্ত্র চাচ্ছেন, তার সবটুকুই পাচ্ছেন। এসব অস্ত্র দিয়েই নেতানিয়াহু গাজায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো আমেরিকাকে বিশ্বের সামনে বিব্রত করছে।