কিছু ভুল হয়েছে বলেও স্বীকার হামাসের
ইসরাইলে হামলা ছিল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
গত বছরের অক্টোবরে ইসরাইলে চালানো নজিরবিহীন হামলাটি 'প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ' ছিল বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এছাড়া ইসরাইলে হামলার সময় 'কিছু ত্রম্নটির' কথাও স্বীকার করেছে গোষ্ঠীটি। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস বলেছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে পরিচালিত হামলায় কিছু 'ত্রম্নটি' ছিল। তবে হামাস যোদ্ধারা কেবল ইসরাইলি সেনা এবং অস্ত্র বহনকারী লোকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে বলেও দাবি করেছে গোষ্ঠীটি।
মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে 'অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড' (আল-আকসা তুফান) নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। হামাসের এই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে এক হাজার ২০০ ইসরাইলি। নিহতদের প্রায় ৩০০ জন সেনা সদস্যও ছিল। এছাড়া সেনা কর্মকর্তা ও সেনাসহ আরও দুই শতাধিক মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। হামাসের হাতে আটক বিপুল এস বন্দির মুক্তি দাবি করেছে ইসরাইল। আর এ লক্ষ্যে গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজা ভূখন্ডে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। টানা সাড়ে তিন মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এমন অবস্থায় গত অক্টোবরের সেই 'অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড' নামের অভিযানের পটভূমি ও নৈতিক ভিত্তি 'স্পষ্ট করতে' রোববার হামাস 'আওয়ার ন্যারেটিভ' শিরোনামে ১৬ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিস্ময়কর সেই হামলার পর প্রকাশিত প্রথম এই 'পাবলিক রিপোর্টে' হামাস বলেছে, 'ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করার জন্য সেই হামলা ছিল একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া'। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ হামলার সময় হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, ধর্ষণ ও অঙ্গহানিসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে। তবে হামাস দৃঢ়ভাবে যৌন সহিংসতা এবং অঙ্গচ্ছেদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
'হয়তো কিছু ভুল হয়েছে'
হামাস ইসরাইলি সামরিক স্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার এবং সেনাদের বন্দি করার পরিকল্পনা করেছিল। আর এটিকে ইসরাইলি কারাগারে বন্দি হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি বলেছে, হামলা বা সংঘাতের সময় বেসামরিক লোকদের ক্ষতি না করার বিষয়ে হামাসের সশস্ত্র শাখা তথা কাসাম ব্রিগেডসের যোদ্ধাদের ধর্মীয় এবং নৈতিক প্রতিশ্রম্নতি রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'যদি বেসামরিক লোকদের টার্গেট করার কোনো ঘটনা ঘটে থাকে; এটা ঘটনাক্রমে ঘটেছে এবং দখলদার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ঘটেছে।'
এতে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলি নিরাপত্তা ও সামরিক ব্যবস্থার দ্রম্নত পতনের কারণে এবং গাজার নিকটবর্তী অঞ্চলে বিশৃঙ্খলার কারণে আক্রমণের সময় 'সম্ভবত কিছু ত্রম্নটি ঘটেছে'। অনেক ইসরাইলি তাদের বিভ্রান্তির কারণে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এবং পুলিশের হাতে নিহত হয়েছে।
তবে হামাসের সেই হামলার পর ১৭ বছর ধরে ইসরাইলি অবরোধের অধীনে থাকা গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে ইসরাইল জবাব দিয়েছে। যার ফলে ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মতে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো গাজায় ইসরাইলের হামলায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে।
হামাসের প্রতিবেদনে যুদ্ধোত্তর গাজার ইসু্যটিও সামনে আনা হয়েছে। এর একদিন আগেই অবশ্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্বের বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন।