মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা
হুতির ৩৬ লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন জোটের হামলা
হুতিদের ঘাঁটিতে ৪৮টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বদলা নেওয়া হবে : আমেরিকা ও ব্রিটিশ হামলার জবাবে জানাল হুতি ব্রিদ্রোহীরা
প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতিদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে শনিবার রাতে নতুন করে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য। লোহিত সাগরে আক্রমণে ব্যবহৃত হুতিদের ভূগর্ভস্থ অস্ত্রাগার, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ সরঞ্জাম এবং আক্রমণে সক্ষম- এমন ব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করে ৩৬টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় দেশ দুটি। শুক্রবার রাতে সিরিয়া-ইরাকে হামলার পর মার্কিন হামলার পর এ ঘটনা ঘটল। গত ২৮ জানুয়ারি জর্ডানে সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইরাক ও সিরিয়ায় এই হামলা চালিয়েছিল আমেরিকা। এসব হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তথ্যসূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স
লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা বিশ্ব বাণিজ্যকে ব্যাহত করেছে এবং অনেকের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে বলে দাবি পশ্চিমাদের। আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য এই অভিযানে সহায়তা দেওয়া অন্য দেশগুলো এক বিবৃতিতে বলেছে, আন্তর্জাতিক ও বাণিজ্যিক জাহাজের পাশাপাশি লোহিত সাগরে চলাচলকারী নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে হুতিদের ক্রমাগত আক্রমণের জবাবে ইয়েমেনের ১৩টি স্থানে ৩৬টি হুতি লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা চালানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, 'এই নিখুঁত হামলার উদ্দেশ্য ছিল- বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং নিরপরাধ নাবিকদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলার জন্য হুতিদের ব্যবহৃত সক্ষমতাকে ব্যাহত ও অবনমিত করা।' শনিবার রাতের এই হামলায় 'হুতিদের সু-সংরক্ষিত অস্ত্র-গুদাম, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও লঞ্চার, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং রেডারগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত স্থাপনাগুলোকে' লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) বলেছে, এর আগে শনিবার পৃথকভাবে হুতিদের ছয়টি জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। এসব ক্ষেপণাস্ত্র 'লোহিত সাগরে বিভিন্ন জাহাজের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল'। সামরিক কমান্ড শনিবার আরও বলেছে, মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনের কাছে আটটি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে এবং উৎক্ষেপণ করার আগেই আরও চারটি ড্রোন ধ্বংস করেছে।
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সন্দেহে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হুতিদের হামলা লোহিত সাগরে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী হুতিদের বিরুদ্ধে হামলার জবাব দিয়েছে। এর বিপরীতে হুতিরা আমেরিকান এবং ব্রিটিশ স্বার্থকেও হামলার বৈধ লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া হুতিদের বিরুদ্ধে হামলার পাশাপাশি আমেরিকা একটি বহুজাতিক নৌ টাস্কফোর্সও গঠন করেছে, যার লক্ষ্য লোহিত সাগরের ট্রানজিট রুটে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা রক্ষা করা।
বদলা নেওয়া হবে : হামলার জবাবে জানাল হুতি
এদিকে, ইয়েমেনে মার্কিন জোটের হামলার জবাবে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক পরিষদের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-বুখাইতি বলেছেন, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত লোহিত সাগরে হামলা চলবে। এ ছাড়া আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের হামলার জবাবও দেওয়া হবে।
বদলা নেওয়ার হুমকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'এক্সে' তিনি বলেন, 'উত্তেজনার জবাব উত্তেজনা দিয়েই মেটানো হবে। আমাদের ঘাঁটিতে ৪৮টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। তবে এই হামলা গাজায় ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দিতে পারবে না। আমরা তাদের সমর্থন করবই।' তিনি আরও বলেন, 'এই হামলার শাস্তি হবেই। আমরা চুপ করে বসে থাকব না।' মোহাম্মদ আল-বুখাইতি বলেন, 'ইয়েমেনের বিভিন্ন প্রদেশে মার্কিন জোটের হামলায় আমাদের অবস্থান পরিবর্তন হবে না। গাজায় গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।'
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইলের লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ওই অঞ্চলে আমেরিকার অন্যতম বিরোধী ইরানের মিত্ররাও লেবানন, সিরিয়া ও ইরাক থেকে মার্কিন স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু বানানোয় এতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এরই মাঝে হুতিদের সঙ্গে আমেরিকাসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হুতিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু 'জাইদি' নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুতির নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা ও ইয়েমেনের উত্তরে হুতিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এদিকে, বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুতিদের এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর অনেক প্রভাব পড়েছে। লোহিত সাগর থেকে মিশরের সুয়েজ খাল হয়ে যেসব জাহাজ ইউরোপ যেত, সেসব জাহাজকে এখন আফ্রিকা ঘুরে যেতে হচ্ছে।