গাজায় যুদ্ধবিরোধী
হামাসের প্রস্তাবে 'না' নেতানিয়াহুর
'আর কয়েক মাসের মধ্যেই গাজায় সম্পূর্ণ বিজয় সম্ভব হবে', ইসরাইলকে অমানবিকতা চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হয়নি : বিস্নংকেন
প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
ম যাযাদি ডেস্ক
গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, আর কয়েক মাসের মধ্যেই গাজায় সম্পূর্ণ বিজয় সম্ভব হবে। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হামাসের প্রস্তাব বিভ্রান্তিকর। ইসলামপন্থি আন্দোলনকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রম্নতি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, হামাসের পতন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই ইসরাইলের হাতে। তিনি বলেন, একটি সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত বিজয় ছাড়া অন্য কোনো সমাধান নেই। হামাস যদি গাজায় টিকে থাকে, তবে আবারও তারা হুমকি হয়ে উঠবে। এদিকে হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেন, নেতানিয়াহুর মন্তব্য রাজনৈতিক বাহাদুরির একটি রূপ। এ থেকেই বোঝা যায় যে, তিনি ওই অঞ্চলে সংঘাত চালিয়ে যেতে চান। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে তিন ধাপে ১৩৫ দিনের চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, হামাসের হাতে জিম্মি সব ইসরাইলিকে ছেড়ে দেওয়া হবে। বিনিময়ে অবরুদ্ধ উপত্যকা থেকে ইসরাইলকে সব সেনা ফিরিয়ে নিতে হবে এবং বন্দি ফিলিস্তিনি নারী-শিশুদের মুক্তি দিতে হবে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে গত সপ্তাহে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা যে প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটির জবাবেই এসব শর্ত দিয়েছে হামাস। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর গত পাঁচ মাসের মধ্যে সংঘাত বন্ধে এটিই সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বলে উলেস্নখ করা হচ্ছে। সমঝোতাকারীদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছেন, হামাসের প্রস্তাবে শুরুতেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির গ্যারান্টির কথা বলা হয়নি। তবে সবশেষ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার আগে অবশ্যই যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হতে হবে। দ্বিতীয় একটি সূত্র জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি বহাল থাকবে ও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুক্তিটি ভেঙে পড়বে না, সে বিষয়ে কাতার, মিসরসহ অন্য বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর কাছে গ্যারান্টি চায় হামাস।
ইসরাইলকে অমানবিকতা চালানোর
লাইসেন্স দেওয়া হয়নি : বিস্নংকেন
এদিকে ইসরাইলকে সতর্ক করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন বলেছেন, তাদের অমানবিকতা চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। বুধবার তিনি ইসরাইল সফর করেন। সেখানে তিনি হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে গাজায় জনসাধারণকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে তিরস্কার করেন।
এদিন তেল আবিবে সংবাদ সম্মেলনে বিস্নংকেন বলেন, ৭ অক্টোবর ইসরাইলিদের ওপর অমানবিক আচরণ করা হয়েছিল। গাজায় থাকা জিম্মিদের ওপরও অমানবিকতা দেখানো হচ্ছে। তবে এটি অন্যদের ওপর অমানবিকতা পরিচালনার লাইসেন্স হতে পারে না।
'টাইমস অব ইসরাইল'র খবরে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস গাজা উপত্যকায় বেসামরিক হতাহত এবং যুদ্ধের সময় সেখানে মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলের প্রতি অসন্তোষ গোপন করেনি। তবে বুধবারের সমালোচনা ছিল আজ পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর।
বিস্নংকেন ইসরাইলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর এমন মন্তব্য করেন। বিস্নংকেন বলেন, 'গাজার সিংহভাগ মানুষের সঙ্গে ৭ অক্টোবরের হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, গাজার পরিবারগুলো নির্ভর করছে সাহায্যের ওপর। তারা আমাদের মতোই পরিবার। তারা হলেন- বাবা, মা, ছেলে এবং মেয়ে। তারা একটি ভালো জীবিকা অর্জন করতে চান। তারা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চান এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চান।
বিস্নংকেন বলেন, 'তাদের ওপর থেকে দৃষ্টি সরানো উচিত নয়। আমরা আমাদের সাধারণ মানবিকতার দৃষ্টি হারাতে পারি না। এটি করা উচিত নয়।' মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আমেরিকা গাজায় বেসামরিক সুরক্ষা শক্তিশালী করতে সুনির্দিষ্ট উপায়ে এবং অভাবীদের সহায়তা পৌঁছে দিতে ইসরাইলকে চাপ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। বিস্নংকেন বলেন, ইসরাইল এ বিষয়ে সম্মত হওয়ায় গাজায় নভেম্বরের শেষদিক থেকে সাহায্য প্রবেশ করছে। এটি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে প্রবেশ করছে।
গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইরেজ ক্রসিং চালু করার আহ্বান জানান বিস্নংকেন। তিনি বলেন, ইসরাইলকে নিশ্চিত করতে হবে যে, গাজায় জীবন রক্ষাকারী সহায়তা বিতরণ কোনো কারণে কারও দ্বারা অবরুদ্ধ হবে না।
গাজায় প্রবেশের জন্য মিসরের রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং ছাড়া বাকি সবগুলো ইসরাইলের ভেতর দিয়ে রয়েছে। বিস্নংকেন বলেন, গাজায় ইসরাইলের অভিযানে নিরীহ বেসামরিক লোকদের হতাহতের সংখ্যা এখনও অনেক বেশি।
এ দিন বিস্নংকেন ইসরাইলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় পথ তৈরির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এটি হলে উভয়েই শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। এছাড়া ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর কেন্দ্রিক সরকারের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গেও বৈঠক করেন অ্যান্টনি বিস্নংকেন। এ সময় তিনি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি মার্কিন সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও মাহমুদ আব্বাস সরকারের ক্ষমতা বাস্তবে খুব বেশি নয়। তারা ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
এদিকে মার্কিন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ইসরাইলের নেতানিয়াহুর জন্য 'বস্ন্যাঙ্ক চেক' বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারকে 'বস্ন্যাংক চেক' দেওয়া বন্ধ করতে হবে আমেরিকাকে। সিনেটর ওয়ারেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্সে' বলেন, 'নেতানিয়াহুর জন্য আর কোনো বস্ন্যাংক চেক নেই। আমাদের শর্তসাপেক্ষে সাহায্য করতে হবে। যুদ্ধবিরতি আবার শুরু করতে হবে এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমে শান্তির অগ্রগতি করতে হবে।' ওয়ারেন এর আগে নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে গাজায় একটি 'মানবিক বিপর্যয়' তৈরির অভিযোগ করেন।
প্রায় চার মাস আগে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা সাড়ে ২৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এর মধ্যে সাড়ে ১১ হাজারই শিশু এবং ৮ হাজারের বেশি নারী। হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৮০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।