লোকসভা নির্বাচন-২০১৯

প্রিয়াঙ্কা চমক হলেও মোদিকে হারাতে যথেষ্ট নন :জরিপ

প্রিয়াঙ্কার নির্বাচনী প্রচার উত্তরপ্রদেশের ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করলেও ৮০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস মাত্র চারটিতে জিতবে : জরিপ ম কংগ্রেসের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেরই অভিমত, দল তাকে ভুল সময়ে মাঠে নামিয়েছে

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনী প্রচারে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
হঠাৎ করেই গত জানুয়ারিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রর রাজনীতিতে আগমন কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারের গতি বৃদ্ধি করলেও ভোটের যুদ্ধে ক্ষমতাসীন বিজেপি জোটকে হারাতে তা যথেষ্ট নয় বলে এক জরিপ প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভারতজুড়ে মোট সাত দফায় ভোটগ্রহণ হবে। ১১ এপ্রিল হবে প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ। ১৯ মে শেষ দফা ভোটগ্রহণের পর ২৩ মে ফল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। ৪৭ বছর বয়সি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রাজনীতির মাঠে নামলেও এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হননি। বরং তিনি দলের প্রচারে দিন-রাত ছুটে বেড়াচ্ছেন। কখনো গাড়িতে, কখনো ট্রাকে; এমনকি নৌকায় চড়েও তিনি কংগ্রেসের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশে দুটি রোডশো'তে প্রিয়াঙ্কার জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি যে পথ দিয়ে গেছেন, সেই সব পথে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে কংগ্রেসের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে এবং প্রিয়াঙ্কার নামে স্স্নোগান দিতে দেখা যায়। এক সমাবেশে দেয়া ভাষণে কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা বলেন, 'যদি কেউ আপনার জন্য কাজ না করে, তবে তাকে কীভাবে শিক্ষা দেবেন? তাদের পক্ষেই ভোট দিন, যারা কাজ করতে চায়।' প্রিয়াঙ্কার কারণে সাধারণ ভোটাদের মধ্যে কংগ্রেসের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। অযোধ্যার এক দোকানি মহেশ গুপ্তা বলেন, 'প্রিয়াঙ্কার কারণেই এখানকার মানুষ কংগ্রেসকে সমর্থন করছে।' তিনি আরও বলেন, 'গতবারের নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রিয়াঙ্কার নির্বাচনী প্রচার ভালো লাগায় এবার তিনি কংগ্রেসে ভোট দেবেন।' বাবরি মসজিদ ভাঙা এবং সেখানে রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে অযোধ্যায় হিন্দু ও সংখ্যালঘু মুসলমানদের মধ্যে ?উত্তেজনা বিরাজ করছে। হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি নগরীতে বেশ শক্তিশালী। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রতিপক্ষের শক্তঘাঁটি অযোধ্যা দিয়েই উত্তরপ্রদেশে তার নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। মিলন বৈষ্ণব নামে একজন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলেন, 'প্রিয়াঙ্কার নির্বাচনী প্রচারের কারণেই কংগ্রেস এখানকার বাসিন্দাদের মনযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে, নতুবা এখানে তাদের কিছু করার ছিল না। তবে প্রিয়াঙ্কাকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করেও কংগ্রেস এখানে জিততে পারবে না বলেই অনুমান তার।' কংগ্রেসের অনেক নেতাই বলছেন, প্রিয়াঙ্কার প্রচার ২০২২ সালের নির্বাচন বা তারপরের জন্য দলের ভাবমূর্তির উন্নয়নে কাজে লাগবে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশটিতে সাম্প্রতিক জনমত জরিপও একই কথা বলছে। গত মাসে 'সিভোটার' ও 'সিএনএক্স'র পৃথক জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, উত্তরপ্রদেশে ৮০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস মাত্র চারটিতে জিতবে। এর আগে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ থেকে কংগ্রেস মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল। আর বিজেপি জেতে ৭১টি আসনে। উত্তরপ্রদেশ থেকেই ভারতের পার্লামেন্টে সবচেয়ে বেশি এমপি যায়। যে কারণে প্রদেশটিতে বিজেপির একচ্ছত্র আধিপত্য ৫৪৫ আসনের পার্লামেন্টে মোদির দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠা পাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিল। জরিপ সংস্থা 'সিভোটার' জানুয়ারি থেকে দৈনিক ভিত্তিতে জরিপ চালাচ্ছে। তারা জানায়, প্রিয়াঙ্কা দলীয় পদ গ্রহণের পর উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সমর্থন এক লাফে ১০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে তা আবার হ্রাস পায়। আর মার্চের শেষ দিকে রাজ্যের প্রায় ৯ শতাংশ ভোটার কংগ্রেসকে, প্রায় ৪৩ শতাংশ বিজেপিকে এবং ৪৪ শতাংশ ভোটার জোট বাঁধা দুই আঞ্চলিক প্রভাবশালী দলকে সমর্থন জানিয়েছে। ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম 'দ্য হিন্দু' পত্রিকায় শুক্রবার প্রকাশিত অন্য একটি জনমত জরিপে ২০১৪ সালের তুলনায় এবার ভারতজুড়ে মোদির গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়েছে বলে জানানো হয়। ওই জরিপে অংশ নেয়া ৪৩ শতাংশ ভোটার মোদিকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। অন্যদিকে, ২৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চান। ভুল সময়ে প্রিয়াঙ্কা এদিকে, সোনিয়া-রাজিব তনয়া প্রিয়াঙ্কা দিন-রাত এক করে দলের প্রচার চালালেও নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতি ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে কংগ্রেসকে বেগ পেতে হচ্ছে বলে মত দলের অনেকেরই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন বলেন, 'দল তাকে খুব ভুল সময়ে এনেছে।' আমাদের উচিত ছিল তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পরপরই ডিসেম্বরে প্রিয়াঙ্কাকে রাজনীতিতে নিয়ে আসা। তাহলে তিনি প্রস্তুতির জন্য আরও সময় পেতেন।' যদিও দলের অনেক নেতার মতে, কয়েক বছর আগেই প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে অভিষেক হওয়া উচিত ছিল। এছাড়া কৃষিপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যহ্রাসের কারণে কৃষকদের সড়কে কৃষিপণ্য ঢেলে প্রতিবাদ, হাজার হাজার কৃষকের পার্লামেন্ট অভিমুখে যাত্রা এবং ঋণগ্রস্ত কৃষকদের আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি বর্তমান মেয়াদের শেষ সময়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। একেই অস্ত্র বানিয়ে কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতিতে ভারতজুড়ে প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের জন্য মাসে ছয় হাজার রুপি ভাতা প্রদানের প্রকল্প চালুর কথা বলেছে। গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে ভোটারদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরপ্রদেশের ছয় ভোটার এমন কিছু শোনেননি বলে জানান। অন্যদিকে, কংগ্রেসের তুরুপের তাস হয়ে আর্ভিবাব ঘটা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী উত্তরপ্রদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপিকে টক্কর দিতেই দিন-রাত ভুলে গিয়ে একের পর এক রোড শো করে চলেছেন। আর প্রিয়াঙ্কা উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি মুম্বাইয়েও রোড শো করুক- এমনটাই চাইছে কংগ্রেস। বলিউড অভিনেত্রী ঊর্মিলা মাতন্ডকরও একই ইচ্ছা পোষণ করেছেন। এছাড়া অন্যান্য রাজ্যের নেতারাও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে তাদের রাজ্যে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারে চাইছেন। একের পর এক অনুরোধ আসতে শুরু করেছে প্রিয়াঙ্কার দপ্তরে। তবে তিনি যে রাহুলের পেছনেই থাকবেন, তা পুনরায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, দ্য হিন্দু, এবিপি নিউজ