আইএসের পতন

সাম্রাজ্য হারালেও রয়ে গেছে হুমকি

ইরাকের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে জঙ্গিরা :জাতিসংঘ

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস বা এসডিএফের দাবি, সিরিয়ার বাঘুজে পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে ইসলামিক স্টেটের পাঁচ বছরের 'খিলাফত' বা সাম্রাজ্যের অবসান হয়েছে। এটি ছিল আইএসের শেষ ঘাঁটি। তবে অবস্থান হারালেও আইএসের স্থায়ী নির্মূলের নিশ্চয়তা কতটা বাস্তবসম্মত, সে শঙ্কা রয়েই গেছে। আপাতত হারলেও তাদের পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যেও। হোয়াইট হাউস আগেই জানিয়েছে, তারা ৪০০ শান্তিরক্ষী সিরিয়ায় রাখবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। ইরাকে গোপন ভাবে জিহাদিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, এমন তথ্য এসেছে জাতিসংঘ মহাসচিবের ফেব্রম্নয়ারিতে দেয়া প্রতিবেদনে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংগঠিত হচ্ছে আইএস জঙ্গিরা। আইএস এক সময় প্রায় ৮৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত, যেখানে বাস করত প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। মরুভূমি ও পার্বত্য এলাকাগুলোতে তারা কাজ করে, যেখানে যাতায়াত ও হামলার পরিকল্পনা তাদের জন্য সহজ। আইএস নেটওয়ার্ক সিরিয়াতেও ইরাকের মতো করেই দেখা দিতে পারে। ইউফ্রেটিস উপত্যকায় ইদলিব প্রদেশের উত্তর পশ্চিমে তাদের কিছুটা উপস্থিতি আছে। এমনকি রাজধানী দামেস্কের দক্ষিণে ও দক্ষিণ পূর্ব সিরিয়াতেও। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ধারণা, জঙ্গিদের হাতে এখনো ভারি অস্ত্র আছে এবং তারা দেশজুড়ে হত্যাকান্ড ঘটাতে সক্ষম। এমনকি জঙ্গিদের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব আছে তাদের নেতাদের। তাদের মূল নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির অবস্থান এখনো অজানা। অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ আয়ও তাদের হচ্ছে এবং পাশাপাশি পাচ্ছে নানা অনুদানও। আইএসের বড় ধরনের পরাজয় হলেও জাতিসংঘ মহাসচিবের দেয়া তথ্য মতে, এখনো ১৪ থেকে ১৮ হাজার জঙ্গি আছে ইরাক ও সিরিয়ায়। এর মধ্যে বিদেশি আছে তিন হাজারের মতো। যদিও মার্কিন হিসাবে এ সংখ্যা ১৫ থেকে ২১ হাজার। যাদের অনেকেই কাজ করে 'স্স্নিপার সেল' হিসেবে। সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ প্রায় এক হাজার বিদেশি যোদ্ধা আটক করেছে। আরও এক হাজার ইরাকে আটক আছে। যুক্তরাষ্ট্র এসব যোদ্ধার নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের কথা বললেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। ২০১৭ সালের অক্টোবরেই প্রায় পাঁচ হাজার যোদ্ধা নিজ দেশে ফিরে গেছে। এছাড়া আইএসের সহযোগী জঙ্গি ছড়িয়ে আছে আফগানিস্তান, লিবিয়া, মিসর ও আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায়ও। সুন্নি আরব জঙ্গিরা ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পর আইএস গঠন করেছিল এবং পরে এটিই বৃহৎ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২০১১ সালে তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেয়। ফলে সেখানেই তারা বেশ বড় আশ্রয় পেয়ে যায় এবং অস্ত্র পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যায়। আবার পরে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হলে সেটিও তাদের জন্য সহায়ক হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৩ সালে তারা সিরিয়ায় ভূখন্ড দখল করে এবং পরের বছরই নানা জায়গায় খিলাফত ঘোষণা করে। ইরাক ও সিরিয়া থেকে আইএস বিতাড়ন ছিল একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীকে এজন্য ইরান ও রাশিয়ার সহায়তা নিতে হয়েছে। আর এসডিএফকে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালে ইরাকের রামাদি পুনরুদ্ধার করেছিল ইরাকি বাহিনী ও তাতে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী। মসুল উদ্ধার হয় ২০১৭ সালে এবং এটি ছিল আইএসের জন্য বড় ধাক্কা। ওই বছরই অক্টোবরে সিরিয়ার রাকা হারায় আইএস। এটি ছিল তাদের তথাকথিত খিলাফতের রাজধানী। পরের মাসেই সিরিয়ার সেনাবাহিনী পূর্বাঞ্চলীয় দেইর আজ-জৌর নিয়ন্ত্রণে নেয় আর ইরাকে সরকারি বাহিনী দখল করে সীমান্ত শহর আল-কাইম। আইএসবিরোধী লড়াইয়ে কত হাজার মানুষ মারা গেছে, তার কোনো হিসাব নেই। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের মতে, সিরিয়ায় ২০১১ সালের পর থেকে প্রায় তিন লাখ ৭১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আর জাতিসংঘ বলছে, কমপক্ষে ৩০ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে ইরাকে। আর ইরাকের একটি সংস্থার হিসাবে এ সংখ্যা ৭০ হাজার। একই সঙ্গে বাস্তুচু্যত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। সিরিয়া থেকে বাস্তুচু্যত হয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ। আরও ৫৬ লাখ বিদেশে পালিয়েছে। তুরস্কে শরণার্থী হিসেবে আছে ৩৫ লাখ মানুষ। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ