সুদানে গণজাগরণ

রাস্তা ছাড়েনি বিক্ষোভকারীরা সেনাপ্রধানের পদত্যাগ

দেশটির নতুন নেতা ফাত্তাহ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগ্রহ দেখিয়েছেন বেসামরিক নেতৃত্বের হাতে শাসনভার তুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না বিক্ষোভকারীরা

প্রকাশ | ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জেনারেল আওয়াদ ইবনে অউফ
যাযাদি ডেস্ক তিন দশক ধরে দেশ শাসন করা ওমর আল-বশিরকে উৎখাতের একদিন পরই বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের তোড়ে পদত্যাগে বাধ্য হলেন সুদানের সামরিক পরিষদের প্রধান ও বশিরবিরোধী অভু্যত্থানের নেতা জেনারেল আওয়াদ ইবনে অউফ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ঘোষণায় শুক্রবার এ প্রতিরক্ষামন্ত্রী তার সরে যাওয়ার কথা জানান। উত্তরসূরি হিসেবে তিনি এদিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আবদেলরহমান বুরহানের নামও ঘোষণা করেছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এএফপি এর আগে বশিরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে আউফের নেতৃত্বাধীন সামরিক পরিষদ দেশ পরিচালনার ভার নেয়ার কথা জানালেও বিক্ষোভকারীরা রাস্তা থেকে সরেনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডিসেম্বর থেকে সুদানজুড়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, পরে তা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহের শেষদিকে অভু্যত্থানে শেষ হয় বশিরের ৩০ বছরের শাসনামল। কিন্তু নতুন সামরিক পরিষদের জেনারেলরা বশিরের 'খুবই ঘনিষ্ঠ' দাবি করে বিক্ষোভকারীরা একে আগের শাসনামলের ধারাবাহিকতা হিসেবেই অভিহত করে এবং বিক্ষোভ চালিয়ে যায়। পদত্যাগ করা সেনাপ্রধান আউফ গত দশকে দারফুরের সংঘাতের সময় সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ২০০৭ সালে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল। তার পদত্যাগের খবরে দেশটির রাজধানী খার্তুমের রাস্তায় থাকা আন্দোলনকারীরা উলস্নাসিত হয়ে 'ফের পতন' স্স্নোগান দিতে থাকে। বশিরবিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয়া সুদানের 'প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন' আউফের পদত্যাগকে 'আন্দোলনকারীদের বিজয়' হিসেবে অভিহিত করেছে। বেসামরিক নেতৃত্বের হাতে শাসনভার তুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত ঘরে ফেরা হবে না বলেও জানিয়েছে তারা। সামরিক পরিষদ বলেছিল, দুই বছর দেশ শাসনের পর তারা নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। পরিষদের নতুন নেতা ফাত্তাহ আবদেলরহমান বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসারও আগ্রহ দেখিয়েছেন। আউফের পদত্যাগের আগে শুক্রবার সামরিক পরিষদের এক মুখপাত্র বলেছিলেন, সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের অভিপ্রায়ে শাসনভার তুলে নেয়নি। তিনি আরও বলেন, 'সুদানের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা আন্দোলনকারীরাই ঠিক করবে। কিন্তু বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না।' অভু্যত্থানের পরপরই সুদানজুড়ে তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, স্থগিত হয়েছিল সংবিধান। বশির 'গ্রেপ্তার' হলেও, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পরোয়ানা মেনে তাকে অন্য কোথাও বহিঃসমর্পণ করা হবে না বলেও জানিয়েছিল সামরিক পরিষদ। এদিকে, সামরিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আবদেলরহমান বুরহান এখন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। তার রেকর্ড ও ইমেজ দুটোই ভালো। তিনি বিক্ষোভকারীদের মতামত জানার জন্য তাদের সঙ্গে কথাও বলছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৭৫ বছর বয়সী বশিরকে গ্রেপ্তারের খবরে সড়কজুড়ে উলস্নাস শুরু হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সামরিক পরিষদের ক্ষমতা গ্রহণের ঘোষণায় ওই আনন্দ মাটি হয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা পরে সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরের বাইরে অবস্থানের কর্মসূচি দেয়। সুদানের প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশনের সারা আবদেলআজিজ বলেন, 'এটা আগের শাসনেরই ধারাবাহিকতা। তাই আমাদের প্রয়োজন লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো।' রাষ্ট্র পরিচালিত গণমাধ্যম পরে এক ঘোষণায় সুদানজুড়ে স্থানীয় সময় রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারির কথা জানায়। এরপরও খার্তুমের রাস্তা ছাড়েনি আন্দোলনকারীরা। তাদের সুদানের পতাকা নেড়ে 'পতন আবারও' স্স্নোগান দিতে দেখা গেছে। বশিরের পতন দাবি করে এর আগে তারা 'পতন, এটাই সব' স্স্নোগান দিত। গত সপ্তাহে দেশটির সেনাবাহিনীকে গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর উর্দি পরা সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা খার্তুমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টা করলে সেনা সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। মঙ্গলবারের ওই সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে ছয় জনই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। উলেস্নখ্য, সুদানে যে গণবিক্ষোভে বৃহস্পতিবার ৩০ বছরের একনায়ক শাসনের অবসান হয়েছে তার নেতৃত্ব কোনো রাজনৈতিক দলের হাতে নেই। বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে সুদানিজ প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন (এসপিএ) নামে একটি পেশাজীবী সংগঠন। প্রধানত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং আইনজীবীরা মিলে এই সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন। গণ-বিক্ষোভে নারীদের যে রকম ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা গেছে, তা দেশটির ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বলা হচ্ছে, বিক্ষোভকারীদের ৭০ শতাংশই নারী। সমাজের সব অংশ থেকেই নারীরা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন। রাস্তায় যেমন তারা সোচ্চার, সোশ্যাল মিডিয়াতেও একইভাবে তৎপর। এই নারীদের বিরাট একটি অংশ যে শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন চাইছেন তা নয়, সুদানে শরিয়া আইনের বদলও দাবি করছেন তারা। দেশটির রক্ষণশীল সমাজে নারীদের বিরুদ্ধে নানা বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে স্স্নোগান তুলছেন তারা। সামাজিক সংস্কারের দাবিতে তোলা এক নারীর স্স্নোগানের ভিডিও টুইটারে এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ বার শেয়ার হয়েছে। সারা নামের ওই নারী এখন সুদানের গণ-আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনি 'কানদাকা' খেতাব কুড়িয়েছেন। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের সিংহভাগই তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী। তবে বিভিন্ন বয়সের লোকজনও অংশ নিয়েছেন।