আগ্রাসনের ছয় মাস

গাজায় লক্ষ্য অর্জন হয়নি ইসরাইলের

হামাসের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংসের দাবি আদৌ সত্যি নয় ছয় মাসে নিহত ফিলিস্তিনির ৩৩ হাজার ছাড়িয়েছে পশ্চিম তীরের তান্ডব, শিশুসহ ১৫ ফিলিস্তিনি গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলার ছয় মাস পূর্তি হয়েছে ৭ এপ্রিল (রোববার)। এই সময়ের মধ্যে ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এই যুদ্ধে ইসরাইলের হাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেসামরিক নাগরিকরা। ছিটমহলে মৃতের সংখ্যা যতই বাড়ছে, ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, কীভাবে যুদ্ধ শেষ করা যায় বা পরবর্তী কী হবে, সে বিষয়ে ইসরাইলের কোনো কার্যকর পরিকল্পনা নেই। এসব দেখে ইসরাইলের মিত্রদের ধৈর্য্যও ফুরিয়ে আসছে। তথ্যসূত্র : সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা গত ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। ওই সময়, ইসরাইলি সরকার জানিয়েছিল, এই অভিযানের দুটি লক্ষ্য- হামাসকে নির্মূল করা এবং গাজায় হামাসের হাত থেকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা। তবে ছয় মাস সংঘর্ষের পরও কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি ইসরাইল। একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। এমনকি দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও এখন প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করছে। আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য ইসরাইলে অস্ত্রের চালান বন্ধ করার আহ্বান বাড়ছে। ইসরাইল দাবি করেছে, তারা হাজার হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং গাজার তলদেশে হামাসের সুড়ঙ্গের বিশাল নেটওয়ার্ক ধ্বংস করেছে। 'বিবিসি' ইসরাইলি বাহিনীর এই দাবি যাচাই করে দেখেছে, আদতে তা সত্য নয়। ৭ অক্টোবরের আগে গাজায় হামাসের প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা ছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল। হামাসের অনেক ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যেমন- ইসমাইল হানিয়াহর মতো শীর্ষ নেতারা বিদেশে থাকেন। তবে এর অনেক সামরিক নেতৃত্ব গাজার অভ্যন্তরে রয়েছেন বলে মনে করা হয়। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৩ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। অবশ্য, তারা এই সংখ্যাটি কীভাবে গণনা করেছে, তা জানায়নি। হামাস নেতাদের মধ্যে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের নাম প্রকাশ করেছে ইসরাইল। গত বছরের অক্টোবর থেকে মোট ১১৩ জন হামাস নেতার নামকরণ জানা গেছে, যাদের অধিকাংশই যুদ্ধের প্রথম তিন মাসে নিহত হয়েছেন। তবে ইসরাইলি বাহিনী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত গাজায় হামাসের কোনো সিনিয়র নেতা নিহত হওয়ার খবর জানায়নি। হামাস নেতা দাবি করে ইসরাইল এমন ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেছে, আদাতে তারা হামাসের সদস্য কিনা তা যাচাই করা যায়নি। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মুস্তাফা থুরায়া, যিনি দক্ষিণ গাজায় একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছিলেন। তালিকায় এমন নাম পাওয়া গেছে, যাদের একাধিকবার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। জেরুজালেমভিত্তিক আরব-ইসরাইল সংঘাতের বিশেষজ্ঞ নাথান থ্রাল বলেন, 'ইসরাইল হামাসকে নির্মূল করার তার নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। কারণ, হামাস পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনি সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গত কয়েক মাসে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে।' তিনি বলেন, 'ইসরাইল উত্তরে হামাসকে পরাজিত করার ঘোষণা দেওয়ার পর, আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, প্রতি সপ্তাহে তাদের সেনারা উত্তরে মারা যাচ্ছে। তাই এটা স্পষ্ট, এই যুদ্ধের পরও হামাসের অস্তিত্ব বজায় থাকবে। ইসরাইল রাফাহ আক্রমণ করুক বা রাফাহ আক্রমণ না করুক, হামাস মাটিতে একটি বড় শক্তি এবং এই যুদ্ধের শেষেও তাই থাকবে।' আগ্রাসনের ছয় মাসে নিহত ৩৩ হাজার ছাড়িয়েছে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ছয় মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ হাজার ১৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায়ও ৩৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। আর আহত হয়েছেন ৭৫ হাজার ৮৮৬ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এই ছয় মাসে ৯ হাজার ২২০ জন নারীকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। শুধু তাই নয়, ১৪ হাজার শিশু হত্যা করেছে তারা। ইসরাইলি আগ্রাসনের ছয় মাস পূর্তিতে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবিক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, 'আমরা একটি ভয়ানক মাইলফলকে পৌঁছেছি। এটি একটি লজ্জাজনক দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে।' গাজায় আরও ইসরাইলি আগ্রাসনের সম্ভাবনাকে 'অসংবেদনশীল' বলেছেন গ্রিফিথস। পশ্চিম তীরে শিশুসহ ১৫ ফিলিস্তিনি গ্রেপ্তার শুধু গাজা নয়, ইসরাইলি বাহিনী অধিকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও তাদের তান্ডব অব্যাহত রেখেছে। রোববার পশ্চিম তীরের হেবরন, জেরুজালেম, রামালস্না, বেথলেহেম ও জেনিন থেকে শিশুসহ অন্তত ১৫ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরাইলি বাহিনী। রোববার তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানিয়েছে 'ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটি'। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'টেলিগ্রামে' প্রিজনার্স সোসাইটি জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন শিশু, দুইজন সাবেক কারাবন্দি ও বিরজাইট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্নাতক ছাত্র রয়েছেন। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটি আরও জানিয়েছে, গ্রেপ্তার অভিযানের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপক হয়রানি করছে দখলদার বাহিনী। শুধু তাই নয়, আটক ব্যক্তিদের মারধর এবং তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে হুমকিও দিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এ ছাড়া হত্যা করার জন্য সরাসরি গুলি চালানোসহ, ব্যাপক নাশকতা ও নাগরিকদের বাড়িঘর ধ্বংস করছে দখলদাররা। প্রিজনার্স সোসাইটি জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত আট হাজার ১০০ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী।