লোকসভা নির্বাচন-২০১৯

উত্তরপ্রদেশ ছাড়িয়ে প্রিয়াঙ্কা এবার উত্তর-পূর্বেও

দলীয় প্রচারণায় অংশ নিতে ডাক আসছে পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য রাজ্য থেকেও

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলেও এখনো প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন লড়াইয়ে অংশ নেয়া দলগুলোর প্রার্থী ও নেতৃস্থানীয়রা। এই প্রথম দলের প্রচারে উত্তরপ্রদেশের বাইরে পা রাখলেন কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। উত্তরপ্রদেশের পর এবার 'রোড শো' করলেন আসামের শিলচরে। এদিন প্রচারণা চলাকালে তিনি সড়কের দু'পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সমর্থকদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানান -আউটলুক ইনডিয়া
খাতা কলমে তিনি উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলের কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু লোকসভা ভোটের যুদ্ধ এগোতেই স্পষ্ট হয়ে গেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে লড়াইটাকে আর উত্তরপ্রদেশের পূর্ব ভাগে বেধে রাখছেন না প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম অংশে প্রচার চালানোর পরে তিনি এবার 'রোড-শো' করলেন আসামের শিলচরে। এই প্রথম প্রচারে উত্তরপ্রদেশের বাইরে পা রাখলেন সোনিয়া-কন্যা। ডাক আসছে পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য রাজ্য থেকেও। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ প্রিয়াঙ্কা নিজের ব্যাপারে বড় মুখচোরা। কিন্তু মোদিকে আক্রমণে কেনো রকম ছাড় দিচ্ছেন না। এদিন শিলচরেও তার মূল নিশানা ছিলেন মোদিই। এখানে মানুষকে তিনি জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর সংসদীয় কেন্দ্রে অনেকবার গিয়েছেন তিনি। ঘুরেছেন বারানসীতেও। সাধারণ মানুষ মোদির ওপর ক্ষিপ্ত। দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ালেও মোদি নিজের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার সময় পান না। বারানসী নিয়ে প্রিয়াঙ্কার এই আক্রমণ কংগ্রেসের ভেতরে-বাইরে জল্পনাটা উসকে দিল আরও। তবে কি প্রিয়াঙ্কা বারানসীতেই মোদির বিরুদ্ধে প্রার্থী হবেন? গত বৃহস্পতিবার শিলচরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রামনগরের সভায় ভালো ভিড় হয়েছিল। রোববার এলেন প্রিয়াঙ্কা। তাকে দেখতেও শহরে মানুষের ঢল। কংগ্রেস জানিয়েছিল, রোড-শো শুরু হবে বেলা দশটায়। তার অনেক আগেই রাস্তায় ভিড় বাড়তে থাকে। অনেকে ছুটে এসেছেন দূর-দূরান্তের গ্রাম থেকে। চৈত্র সংক্রান্তির খাঁ খাঁ রোদে ঘাম ঝরছে। তবু কেউ জায়গা ছাড়তে রাজি নন। এদিন প্রিয়াঙ্কা বেরোলেন বেলা ১টায়। হুডখোলা গাড়িতে শিলচরের দলীয় প্রার্থী সুস্মিতা দেব ও এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক হরিশ রাওয়াত। পেছনে জনতা। কেন তার প্রতি মানুষের এত আকর্ষণ, প্রিয়াঙ্কা তা ভালো বোঝেন। জানেন, চেহারা-ছবি, চালচলন ও কথাবার্তায় অনেকে তার মধ্যে ইন্দিরা গান্ধীর আদল খুঁজে পান। সুস্মিতার জন্য ভোট চাইতে গিয়ে তিনি টেনে আনেন ইন্দিরার কথাই। তিনি বলেন, 'সুস্মিতা দেব আমার ঠাকুমারই মতো। সেই কাজকর্মের ধরন, সেই মানুষের জন্য দরদ! ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন দিল সে সাচ্চে। সুস্মিতাও তাই। দু'জনেই সত্যনিষ্ঠ এবং কাজের মানুষ।' ১৯৭৯ সালে শিলচরে এসে ইন্দিরা এই অঞ্চলকে 'শান্তির দ্বীপ' বলেছিলেন। এই অঞ্চলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল রাজীবেরও। তিনিই সুস্মিতার বাবা সন্তোষমোহন দেবকে মন্ত্রিসভায় নেন। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। রাহুল সুস্মিতাকে মহিলা কংগ্রেস সভাপতি পদে বেছে নিয়েছেন। প্রিয়াঙ্কার পাশে দাঁড়িয়ে সে সব কথা মনে করাচ্ছিলেন সুস্মিতা। মোদিকে আক্রমণের ব্যাপারে প্রিয়াঙ্কার ধরনটা দাদা রাহুলের থেকে আলাদা প্রথম থেকেই। শান্ত ভাবে ছোট ছোট মন্তব্য বা প্রশ্নেই যা বলার বলেন। এদিন পুরো ভাষণে একবারও চৌকিদার শব্দটার উলেস্নখ করেননি। তিনি বলেছেন, বেকারি, কৃষকদের সঙ্কট, মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা। প্রতিটি একবাক্যে। এরপরেই মন্তব্য করেন, 'সমস্যার কথা আপনাদের আর কী বলব! এই অঞ্চলেও তো কত সমস্যা। সেসবের সমাধান কি হয়েছে? মোদির প্রচার আর বাস্তবে কতটা ফারাক, সেসবের বড় উদাহরণ তো আপনারাই।' সংবিধানপ্রণেতা বি আর অম্বেডকরের জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রিয়াঙ্কা সংবিধান টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কা জানান। তিনি বলেন, 'যা চলছে, সংবিধানকে কে তোয়াক্কা করে! নীতি ও উদ্দেশ্য এক বিন্দুতে মিললেই কাজ হয়। সেখানেই মোদিকে নিয়ে সমস্যা, আর কংগ্রেসের কাছে প্রত্যাশা।' সেই প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার করলেন প্রিয়াঙ্কা।