সেনা-বিদ্রোহী লড়াই

বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা মিয়ানমারের জান্তা

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মিয়ানমারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণ্যিজ্যিক শহর মিয়াবতী। গত সপ্তাহেই জান্তা শাসকের কাছ থেকে এটি দখল করেছে দেশটির বিদ্রোহী যোদ্ধারা। সেখানে তুমুল লড়াইয়ের স্পষ্ট ছাপ রয়ে গেছে। সোমবার বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এই অঞ্চলে বিরল প্রবেশাধিকার পেয়েছিল ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রয়টার্সের সাংবাদিকরা সেখানকার সাতজন প্রতিরোধ কর্মকর্তার দেওয়া সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি সংঘর্ষের বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞান আছে, এমন তিন থাই কর্মকর্তা এবং চার নিরাপত্তা বিশ্লেষকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শহরটির একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুমুল লড়াই হওয়া এই স্থানটি সীমান্ত শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত। সেখানে পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর দেয়ালে বুলেটের গর্ত রয়ে গেছে। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্যাস স্টেশন। বিমান হামলায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ভবনগুলো। মিয়াবতীতে জান্তা সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিদ্রোহীরা বলেছে, তারা এমন একটি আশাহত সামরিক বাহিনী সঙ্গে লড়েছে, যারা ভূমি রক্ষায় কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত একটি বিদ্রোহী ইউনিটের কমান্ডার সাও কাও বলেন, 'খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা তিনটি ঘাঁটি দখল করতে এবং এলাকাটি নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হই। এরপরই তারা পালিয়ে যায়।' সম্প্রতি সামরিক প্রশাসনের প্রতি অনুগত জাতিগত মিলিশিয়া প্রহরীরা শহরের রাস্তায় রাস্তায় টহল দিয়ে বেড়াত। এপ্রিলের শুরুতে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) নেতৃত্বে বিদ্রোহী বাহিনী অবরোধ করলে সেই সেনারা একপাশে দাঁড়িয়েছিল। সাক্ষাৎকার দেওয়া ব্যক্তিরা রয়টার্সকে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতাসহ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সূক্ষ্ণ কূটনীতির বিষয়টি জানিয়েছিল। তারা বলছিলেন, মূল জনসংখ্যা কেন্দ্রগুলো ধরে রাখতে এবং জান্তার পতন ঘটাতে চায় বিদ্রোহীরা। মিয়াবতীর পতন মানে মিয়ানমারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু'টি স্থল সীমান্ত ক্রসিং প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে চলে যাওয়া। এর আগে, গত বছর চীনা সীমান্তের কাছের মিউজ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছিল বিদ্রোহীরা। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, বিদ্রোহীরা বর্তমানে দেশটির প্রায় সব প্রধান স্থল সীমান্ত থেকে জান্তাকে বিচ্ছিন্ন করেছে। একটি সমীক্ষায় থাইল্যান্ড-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি-মিয়ানমার (আইএসপি) থিংক-ট্যাংক বলেছে, মিয়াবতীর পতনের পর ভূমি-ভিত্তিক শুল্ক রাজস্বের ৬০ শতাংশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে জান্তা। বিশ্লেষকদের মতে, ২০২১ সালে অং সান সু চি'র নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভু্যত্থানের পর এ-ই প্রথম জান্তাকে তাদের সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে ফেলেছে বিদ্রোহীরা। অক্টোবরের পর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বড় ধরনের কোনো আক্রমণই প্রতিহত করতে পারেনি জান্তা। জান্তার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী থাইল্যান্ডের মতো প্রতিবেশীরা এখন সংঘাতের বিষয়ে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করেছে। থাই ভাইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাস্ক ফুয়াংকেটকিও বুধবার বলেছেন, থাই নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কেএনইউ এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং তারা বিশেষ করে মানবিক ইসু্যতে 'আরও সংলাপের জন্য উন্মুক্ত' রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, 'মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে আমরা অন্ধভাবে সমর্থন করছি না। তবে আমরা যেহেতু শান্তি চাই, তাই তাদের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে।' এ বিষয়ে জান্তার এক মুখপাত্রের কাছে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে মিয়ানমারের ঐক্যকে ক্ষুণ্ন করার জন্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে অভিযুক্ত করেছেন জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এ সময় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের 'সন্ত্রাসী' বলেও অভিহিত করেছে তার সরকার। জান্তা চলে যাওয়ার পরও মিয়াবতী এবং এর আশপাশের কিছু অংশে টহল দিচ্ছে ডেমোক্রেটিক কারেন বৌদ্ধ আর্মি এবং কারেন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) বাহিনী। তবে দলগুলো প্রতিরোধ বিদ্রোহীদের কাছেও আনুগত্য স্বীকার করেনি। তথ্যসূত্র : রয়টার্স