গাজায় আগ্রাসন

রাফাহতে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরাইল

রাতভর বিমান হামলায় ১৮ শিশুসহ ২২ ফিলিস্তিনি নিহত ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ ইসরাইলের গোয়েন্দা প্রধানের

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সামরিক গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল আহারন হালিভা
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে স্থল অভিযান এখনো শুরু না হলেও হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরাইল। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতভর ইসরাইলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৮ শিশুসহ ২২ জন নিহত হয়েছে। রাফাহতে প্রায় প্রতিদিনই বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। তবে এখনকার মাত্রা বেশি। যেখানে গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ যুদ্ধ থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছেন। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সংযমের আহ্বান সত্ত্বেও মিশর সীমান্তবর্তী শহরটিতে স্বাধীনতাকামী হামাসের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করেছে দখলদার ইসরাইল। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'আগামী দিনগুলোয় আমরা হামাসের ওপর রাজনৈতিক ও সামরিক চাপ বাড়াব, কারণ জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা ও বিজয় অর্জনের এটাই একমাত্র পথ। শিগগিরই আমরা হামাসের ওপর আরও বেদনাদায়ক আঘাত হানব।' তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। নিকটবর্তী কুয়েতি হাসপাতাল জানিয়েছে, রাফাহতে প্রথম ইসরাইলি হামলায় এক ব্যক্তি, তার স্ত্রী ও তাদের তিন বছর বয়সি সন্তান নিহত হন। হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং চিকিৎসকরা শিশুটিকে বাঁচিয়েছেন। দ্বিতীয় হামলায় একটি বড় পরিবারের ১৭ শিশু ও দুই নারী নিহত হন। উম্মে করিম নামে এক আত্মীয় প্রশ্ন করে বলেন, 'এই শিশুরা ঘুমিয়েছিল। তাদের কী দোষ ছিল?' মোহাম্মদ আল-বেহেইরি বলেন, নিহতদের মধ্যে তার মেয়ে রাশা ও ১৮ মাস বয়সি শিশুসহ তার ছয় সন্তানও রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো এক নারী ও তিন শিশু রয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ইসরাইলের আগ্রাসনে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ শিশু ও নারী। এতে গাজার দুটি বড় শহরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। অঞ্চলটির প্রায় ৮০ শতাংশ জনসংখ্যা অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার অন্যান্য অংশে পালিয়ে গেছেন। ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইসরাইলের গোয়েন্দা প্রধানের পদত্যাগ এদিকে, ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে নতুন গোয়েন্দা প্রধান নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করবেন বলে সোমবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে চালানো হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সোমবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রধান গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন।' বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, চিফ অব জেনারেল স্টাফের সঙ্গে আলোচনায় মেজর জেনারেল আহারন হালিভা তার পদের মেয়াদ শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রধান হিসেবে ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার ঘটনায় নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে এই আহ্বান জানান তিনি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মেজর জেনারেল আহারন হালিভা তার পদের মেয়াদ শেষ করার এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিয়ম ও পেশাদারিত্বের প্রক্রিয়া অনুযায়ী নতুন করে সামরিক বাহিনীর নতুন গোয়েন্দা প্রধান নিয়োগ করা হবে। এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের শত শত যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরাইলে ঢুকে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়। ওই হামলায় অন্তত এক হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত ও ২৫০ জনের বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রাখে হামাস। হামাসের হামলার দিন থেকেই গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইল। সপ্তম মাসে পৌঁছানো ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর এই আগ্রাসনে গাজা উপত্যকায় নজিরবিহীন মানবিক সংকট তৈরি করেছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর নির্বিচার হামলায় ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। পদত্যাগপত্রে জেনারেল আহারন হালিভা লিখেছেন, 'গোয়েন্দা অধিদপ্তর আমার নেতৃত্বাধীন কমান্ডের ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিল, তা সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।'