বোমা হামলায় নিহত যারা

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
একজনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় 'সন্ত্রাসী' হামলার পর শোকের সাগরে ভাসছে শ্রীলঙ্কা। রোববারের সিরিজ বোমা হামলা কেড়ে নিয়েছে ২৯০ জনের প্রাণ। লঙ্কানদের পাশাপাশি ৩২ বিদেশি হামলায় নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ভারত, ডেনমার্ক, বাংলাদেশ, চীনসহ আরও কয়েকটি দেশের নাগরিক আছেন। হামলার পর গুজব রোধে শ্রীলংকা সরকার দেশটিতে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারণে হতাহতদের সম্পর্কে তেমন তথ্য এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও নিহত কয়েকজনের পরিচয় জানা গেছে। সংবাদসূত্র: বিবিসি শান্তা মায়াদুন্নে শ্রীলংকার জনপ্রিয় শেফ শান্তা মায়াদুন্নে। হামলার পর রোববার রাতে যে অল্প কয়েকজন নিহতের পরিচয় জানা গেছে তাদের একজন শান্তা। শাংরি লা হোটেলে হামলার ঠিক কিছুক্ষণ আগে তার মেয়ে নিসানগা মায়াদুন্নে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পারিবারিক ছবি পোস্ট করেছিলেন। যেখানে একটি টেবিলের চারপাশে বসে সাত জনকে হাসিমুখে খাবার খেতে এবং ছবির জন্য পোজ দিতে দেখা যায়। পরে মানিক মায়াদুন্নে নামে তাদের এক স্বজন ওই ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করে শান্তা ও নিসানগার মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেন। ডেনিশ ধনকুবেরের তিন সন্তান অনলাইন খুচরা পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান 'এএসওএস'-এর সবচেয়ে বড় অংশীদার এবং ক্লথিং চেইন 'বেস্টসেলার'-এর মালিক ডেনমার্কের ধনকুবের অ্যান্ডারস হচ পভ্‌লসেনের তিন সন্তান বোমা হামলায় মারা গেছেন। তার এক মুখপাত্র এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য দেননি। শোকের এ সময়ে পভ্‌লসেন পরিবারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান জানাতে অনুরোধও করেছেন তিনি। ডেনিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পভ্‌লসেন পরিবার ছুটি কাটাতে শ্রীলংকা গিয়েছিলেন। চারদিন আগে তাদের এক সন্তান ইনস্টাগ্রামে শ্রীলংকায় ছুটি কাটানোর একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। রাসিনা ভারতের কেরালা রাজ্যের রাসিনা স্বামীর সঙ্গে দুবাইয়ে বসবাস করেন। স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এ দম্পতি কলম্বো গিয়েছিলেন। রোববার সকালে রাসিনার স্বামী দুবাই চলে যান। ৫৮ বছরের রাসিনার রাতের ফ্লাইটে কলম্বো ছাড়ার কথা ছিল। শাংরি লা হোটেল থেকে তিনি চেক-আউটও করেছিলেন। পরে তার এক স্বজন তার মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেন। ভারতের দুই রাজনীতিক নিহতদের মধ্যে ভারতের কর্ণাটকের দল জনতা পার্টির (জেডিপি) দুই সদস্য কেজি হনুমানথারাইয়াপ্পা ও এম রনগাপ্পা রয়েছেন। এক টুইটে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী তাদের মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে দুই রাজনীতিককে চিনতেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আরও তিন ভারতীয়র মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছেন। তারা হলেন- লক্ষ্ণী, নারায়ণ চন্দ্রশেখর ও রমেশ। নাম ছাড়া তাদের সম্পর্কে আর কিছু এখনো জানানো হয়নি। তুরস্কের দুই প্রকৌশলী নিহতদের মধ্যে তুরস্কের দুই নাগরিক আছেন। তাদের মধ্যে প্রকৌশলী সেরহান সেকুক নারিচি ২০১৭ সালের মার্চ থেকে কলম্বোতে বসবাস করছেন, তার ফেসবুক প্রোফাইল সেই কথা বলছে। সেরহান তড়িৎ প্রকৌশলী ছিলেন বলে জানান তার বাবা। যিনি শ্রীলংকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসেও কাজ করেছেন। তার বাবা বলেন, 'আজ (রোববার) ভোর ৫টায় সে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে শুভ সকাল জানিয়েছে। আমাকে বলা এটাই তার শেষ কথা।' নিহত ইজিত আলি কাভুসও একজন প্রকৌশলী। এক পরিবারের দুই অস্ট্রেলীয় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন তার দেশের দুই নাগরিকের মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছেন। তারা একই পরিবারের এবং বর্তমানে শ্রীলংকায় বসবাস করছিলেন। এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য তিনি দেননি। বাংলাদেশের রাজনীতিক শেখ সেলিমের নাতি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি আট বছরের জায়ান চৌধুরী হামলায় নিহত হয়েছে। শিশুটির বাবা হামলায় আহত হয়েছেন। জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স কলম্বোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সাংসদ শেখ সেলিম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই। সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলের চার কর্মী পাঁচ তারকা এ হোটেলের পক্ষ থেকে হামলায় তাদের রেস্তোরাঁর চার কর্মী নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। হোটেলের মুখপাত্র বলেন, 'ব্যস্ত সকাল ছিল। রোববার সকালে রেস্তোরাঁয় বুফে ব্রেকফাস্ট চলার সময় আমরা সবচেয়ে ব্যস্ত থাকি।'