গির্জা-হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা

গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা স্বীকার শ্রীলংকার

ম সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না : প্রধানমন্ত্রী রনিল ম সহিংসতার আশঙ্কায় প্রাণভয়ে পালাচ্ছে শত শত মুসলমান শরণার্থী ম আবারও বিস্ফোরণ, কেউ হতাহত হয়নি

প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
শ্রীলংকার গির্জা ও পাঁচ তারকা হোটেলসহ আট স্থানে গত রোববার 'ইস্টার সানডে' উদযাপনের দিন আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলার পর দেশটির সরকার 'বড় ধরনের গোয়েন্দা ব্যর্থতা'র কথা স্বীকার করেছে। চলতি মাসের শুরুতে, এমনকি হামলার দুই ঘণ্টা আগেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে সতর্ক করেছিল শ্রীলংকাকে। কিন্তু সেটি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়নি বলে দেশটির পার্লামেন্টে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এদিকে, রাজধানী কলম্বো থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্বে পুগোদা শহরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার শহরটির হাকিম আদালতের পেছনের খোলা মাঠ থেকে বিস্ফোরণের শব্দটি আসে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মুখপাত্র রাভান গুনাসেকেরা। এই বিস্ফোরণে কেউ হতাহত হয়নি জানিয়ে পুলিশ বলেছে, তারা বিস্ফোরণের কারণ তদন্ত করে দেখছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স এ ঘটনার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব ও পুলিশ-প্রধানকে সরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাবন ভিয়েওয়ার্দেনে বলেন, 'আমাদের দায়িত্ব নিতেই হবে। কারণ যে সতর্কবার্তা পাওয়া গিয়েছিল, তা সঠিকভাবে যথাযথ ব্যক্তিদের জানালে এই ঘটনা এড়ানো যেত বা অন্তত ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব ছিল।' পার্লামেন্ট দস্য লক্ষ্নণ কিরয়েলা বলেন, 'সিনিয়র কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই সম্ভাব্য হামলার বিষয়টির গোয়েন্দা তথ্য ঝুলিয়ে রেখেছিলেন।' তিনি আরও বলেন, 'কিছু শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করেছেন। এদিকে, রাজধানী কলম্বোতে আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সব ক্যাথলিক গির্জা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সিনিয়র যাজক ফাদার এডমন্ড তিলেকারত্নে। তিনি বলেন, 'নিরাপত্তা বাহিনীর পরামর্শ অনুযায়ী, তারা গির্জাগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।' তবে দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, ২১ এপ্রিলের হামলার পর এরই মধ্যে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না : প্রধানমন্ত্রী ২১ এপ্রিলের ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আগেই থেকেই নজরদারিতে রেখেছিল লংকান গোয়েন্দারা। তবে তখন পর্যন্ত তাদের হেফাজতে নেয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ সরকারের হাতে ছিল না। বৃহস্পতিবার 'সিএনএন'কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। এরই মধ্যে ওই হামলার ঘটনায় শ্রীলংকার শীর্ষস্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সন্তানদের নাম এসেছে। মোহাম্মদ ইউসুফ ইব্রাহিম নামের খ্যাতনামা ওই মসলা ব্যবসায়ী এক সময় বামপন্থি রাজনৈতিক দল জনতা ভিমুখী পেরামুনা পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। শ্রীলংকার বর্তমান শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ঋষথ বাথিউডেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অভিজাত পরিবারের সন্তানদের এভাবে হামলায় অংশ নেয়ার বিষয়েও কথা বলেছেন লংকান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'হামলাকারীরা মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। তারা দেশের বাইরে পড়াশোনা করে এসেছে। সমাজে তাদের অভাবনীয় অবস্থান রয়েছে।' প্রাণভয়ে পালাচ্ছে মুসলমান শরণার্থীরা এদিকে, শোকার্ত মানুষ যখন হামলায় নিহত খ্রিস্টানদের শেষকৃত্য করছে, তখনই প্রাণভয়ে পশ্চিম উপকূলের নেগোম্বো শহর ছেড়ে পালাচ্ছে শত শত মুসলমান শরণার্থী। কলম্বো থেকে এক ঘণ্টা দূরের এ বন্দর শহরে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন সম্প্রদায় মিলেমিশে বাস করলেও গত কয়েকদিনে সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা অনেক বেড়ে গেছে। রোববার দ্বীপ দেশটির বিভিন্ন গির্জা ও হোটেলে একযোগে যে বোমা হামলা হয়, তার মধ্যে নেগোম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চও ছিল। প্রায় একই সময়ে ছয়টি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটলেও এ গির্জাটিতে হওয়া হামলাই ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের পর থেকেই নেগোম্বোর মুসলমানরা স্থানীয়দের কাছ থেকে 'প্রতিশোধের হুমকি' পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। বুধবারও কয়েকশ পাকিস্তানি মুসলমান কলম্বোর উত্তরের এ শহরটি ছেড়ে পালিয়ে যান। আইএসকে বিস্ফোরক সরবরাহ করে ৭ ভারতীয় প্রতিষ্ঠান! মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) বিস্ফোরকদ্রব্য সরবরাহ করেছিল ভারতের সাতটি প্রতিষ্ঠান। আইএসের কাছে মোট ২০টি থেকে দেশ অস্ত্র বিস্ফোরক এবং বিভিন্ন সামরিক রসদ যায়। অস্ত্র সরবরাহে সবচেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তুরস্কের। এরপরই ভারতের অবস্থান। শ্রীলংকায় ভয়াবহ হামলার ঘটনায় এই সংগঠনটি দায় স্বীকার করেছে। যদিও ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলো এমন তথ্য অস্বীকার করেছে।