নিহত ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছে

দশম মাসে গড়াল গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইলি হামলায় ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়েছে গাজার বেশিরভাগ এলাকা
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ইসরাইলি আগ্রাসন গড়িয়েছে দশম মাসে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ভূখন্ডটিতে ইসরাইলের আগ্রাসন চলছে এবং চলমান এই যুদ্ধ দশম মাসে প্রবেশ করার এই দিনে গাজায় আরও বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। রোববার দশম মাস পূর্তির দিনে গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা শহরের পশ্চিমে বাস্তুচু্যত লোকদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত একটি স্কুলকে লক্ষ্য করে চালানো হামলায় অন্তত চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি মধ্য গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী আল-জাওয়াইদা এলাকার একটি আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়েছে এবং এতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলকে লক্ষ্যবস্তু করার একদিন পর এই হত্যাকান্ড ঘটে, গত শনিবারের সেই হামলায় কমপক্ষে ১৬ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছিলেন। প্যারামেডিকরা জানিয়েছেন, গাজা শহরের আরেকটি বাড়িতে হামলায় আরও ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি 'ওয়াফা নিউজ এজেন্সি' অনুসারে, ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো শহরের স্ট্রিট ৮-এ সাবরা পাড়ায় বেসামরিক নাগরিকদের একটি দলকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালায়, এতে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা রাতের আঁধারে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের একটি পৌরসভা ভবনে হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, হামাস এটি 'সামরিক কার্যকলাপের' জন্য ব্যবহার করছিল। খান ইউনিসের হামলায় হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে হামাসের যোদ্ধারা স্কুল ও হাসপাতালসহ বেসামরিক এলাকা ও অবকাঠামোতে আশ্রয় নেয় না বলে বরাবরই জানিয়েছে। এদিকে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ হাজার ১৫৩ জনে পৌঁছেছে বলে অঞ্চলটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে। ইসরাইলি এই আগ্রাসন গাজার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশকে বাস্তুচু্যত করেছে, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে 'বিপর্যয়কর' ক্ষুধার সম্মুখীন করেছে এবং উপত্যকাটির বেশিরভাগ হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান হতাহতের ঘটনা গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-আকসা হাসপাতালের ওপরও চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। যদিও এই হাসপাতালটি এরই মধ্যে ইসরাইলি বাহিনীর অবিরাম হামলার কারণে আহত ফিলিস্তিনিদের দ্বারা পরিপূর্ণ। জাবালিয়ার আল-আওদা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মুহাম্মদ সালহা জানিয়েছেন, 'সেখানকার পরিস্থিতি খুবই কঠিন'। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তারা হামলা অব্যাহত রেখেছে। উলেস্নখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের হামলার কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। ইসরাইলি হামলায় হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিহত গাজায় একটি স্কুলে ইসরাইলি বিমান হামলায় হামাসের জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ চারজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, নিহত ওই কর্মকর্তার নাম ইহাব আল-গুসেইন। গাজা সিটি এবং উত্তর গাজায় কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য তিন মাস আগে হামাস সরকার তাকে নিয়োগ দিয়েছিল। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রোববার গাজা সিটির একটি স্কুল ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। সেখানে হামাসের অনেক সদস্য লুকিয়ে ছিল এবং কার্যকলাপ চালাতো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, পশ্চিম গাজা শহরে অবস্থিত হলি ফ্যামিলি গির্জার পাশেই হলি ফ্যামিলি স্কুলে হামলা চালানো হয়। এই ভবনটিতে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ইহাব আল-গুসেইন এর আগে হামাস প্রশাসনের উপ-শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসেবে নিযুক্ত হন। তার দূরদর্শী কাজের ফলে তাকে হামাসের প্রশাসনিক পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল। গত ৯ মাসে গাজায় ইসরাইলি হামলায় হামাস প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। গত বছরের সালের নভেম্বরে ইসরাইলি বিমান হামলায় হামাসের ডেপুটি সাংস্কৃতিক মন্ত্রী এবং ডেপুটি স্পিকার নিহত হন। রাফাহতে সংঘর্ষে ইসরাইলি বাহিনীর মেজর নিহত এদিকে, গাজার দক্ষিণে রাফাহ এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) এক মেজর নিহত হয়েছেন। দেশটির সেনাবাহিনী তার নিহতের কথা ঘোষণা করেছে। নিহত মেজরের নাম জালা ইব্রাহিম (২৫)। তিনি কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ৬০১তম ব্যাটালিয়নের একজন কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন।