ফেসবুক পোস্ট নিয়ে 'লংকাকান্ড'

শ্রীলংকায় মসজিদে হামলা, বন্ধ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

পরিস্থিতি সামলাতে কারফিউ গ্রেপ্তার সেই পোস্টদাতাসহ বেশ কয়েকজন

প্রকাশ | ১৪ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মুসলমানদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা
শ্রীলংকার চিলো শহরের মসজিদে ও মুসলমানদের মালিকানাধীন দোকানপাটে পাথর নিক্ষেপের ঘটনার পর ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পরিস্থিতি সামাল দিতে শহরটিতে রাতভর কারফিউ জারি করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যার ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত্র সেই আবদুল হামিদ মোহাম্মদ হাসমারকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 'এক দিন তোমরা কাঁদবে'- অনলাইনে তার এমন মন্তব্যকে সহিংসতার হুমকি হিসেবে দেখেছিল স্থানীয়রা। সংবাদসূত্র : বিবিসি পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছেন, মুসলমানদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগে রোববার রাতে ও সোমবারের প্রথম কয়েক ঘণ্টায় কর্তৃপক্ষ কুলিয়াপিটিয়া ও ডুম্মালাসুরিয়ার নিকটবর্তী এলাকাগুলো থেকে একটি দলকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপর ওই এলাকার লোকজন গ্রেপ্তারদের ছেড়ে দেয়ার দাবি জানাতে থাকে বলে জানিয়েছেন সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র সুমিথ আতাপাত্তু। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতের জন্য পুলিশ কারফিউ জারি করা হয়েছে।' তিন সপ্তাহ আগে শ্রীলংকার ইসলামপন্থি আত্মঘাতী বোমারুরা চারটি হোটেল ও তিনটি গির্জায় হামলা চালিয়ে ২৫৩ জনকে হত্যা করে। তারপর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে হেনেস্তা করার বহু অভিযোগ পেয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির মুসলমান গোষ্ঠীগুলো। পুলিশের মুখপাত্র বলেন, 'উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চিলোর পুলিশ এলাকায় একটি পুলিশ কারফিউ জারি করা হয়েছে, যা আগামীকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।' পরে পুলিশ জানিয়েছে, ভোর ৪টায় কারফিউ তুলে নেয়া হবে। ফেসবুকে যে বিতর্কের ঘটনা নিয়ে পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার একটি স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, এক ব্যবহারকারী সিংহলিতে লিখেছেন, 'আমাদের কাঁদানো কঠিন'। এরপর সঙ্গে স্থানীয়ভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত অপমানজক একটি উক্তি জুড়ে দেন তিনি। বলা হয়, 'বেশি হেসো না, একদিন তোমরা কাঁদবে'। ইংরেজিতে এমন মন্তব্য করে জবাব দেন হামিদ হাসমার নামে শনাক্ত করা ওই ব্যক্তি। এই ব্যক্তিকেই পরে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন দুই স্থানীয়। হাসমার খ্রিষ্টান-প্রধান শহর চিলোর স্থানীয় বাসিন্দা। তার জবাবে হুমকি দেয়া হয়েছে এমনটি মনে করে তাকে মারধর করা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে হাসমারের কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। নিরাপত্তার কারণে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুসলমান ব্যক্তি বলেন, 'পরে তারা তিনটি মসজিদে ও মুসলমানদের মালিকানাধীন কয়েকটি দোকানে পাথর নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি এখন শান্ত থাকলেও রাত নিয়ে শঙ্কায় আছি আমরা।' পাথর নিক্ষেপে একটি মসজিদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কয়েক ডজন যুবক নিউ হাসমারস্‌ নামের একটি কাপড়ের দোকান লক্ষ করে পাথর ছুড়ছে আর চিৎকার করছে। ওই দোকানটি গ্রেপ্তার হাসমারের বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এসব ঘটনার পর সোমবার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েকটি সামাজিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ম্যাসেজিং অ্যাপ বন্ধ করে দেয় শ্রীলংকার কর্তৃপক্ষ। দেশটির সরকারি তথ্য বিভাগের মহাপরিচালক নালাকা কালুউয়িবা বলেন, 'দেশে শান্তিবজায় রাখার জন্য ফের সাময়িকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রাখা হয়েছে।' দেশটির কয়েকটি সম্প্রদায় জানিয়েছে, আসন্ন জঙ্গি হামলার সতর্কতা পেয়েও সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেনি এবং হামলার পর তারা সম্ভাব্য সব জঙ্গিকে ধরতেও পারেনি, এমন পরিস্থিতিতে শঙ্কিত হয়ে আছেন তারা।