মুসলমান-বিরোধী সংঘাত

দাঙ্গা রুখতে সব কিছু করবে শ্রীলংকা

ফেসবুকে শুরু হওয়া বিরোধের জেরে সৃষ্ট দাঙ্গায় নিহত ১ গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ | ১৫ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
একটি মসজিদে সংঘাত সৃষ্টিকারীদের হামলা
শ্রীলংকায় চলমান মুসলমান-বিরোধী দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে জারিকৃত কারফিউ সত্ত্বেও সোমবার সেখানকার মসজিদ ও দোকানে হামলা থামানো যায়নি। এদিন এক মুসলমান ব্যক্তি হত্যার শিকারও হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছে শ্রীলংকা সরকার। বলা হয়েছে, দাঙ্গা রুখতে প্রয়োজনে সব কিছু করবে সরকার। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এএফপি দেশটিতে চলমান মুসলমান-বিরোধী সংঘাত থামানোর অঙ্গীকারের কথা জানাতে গিয়ে সোমবার দেশটির প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র এবং পুলিশপ্রধান এমন আভাস দিয়েছেন। এদিকে, সংঘাতকবলিত এলাকায় সেনা ও পুলিশি টহল জোরালো করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে তিন জেলায় এবং পরে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে দেশটির সরকার। তা সত্ত্বেও সহিংসতা থামানো যায়নি। মুসলমান-বিরোধী সহিংসতায় শ্রীলংকাজুড়ে জারি থাকা রাতভর কারফিউ আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে কারফিউ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সে দেশের পুলিশ। এক টেলিভিশন ভাষণে সে দেশের পুলিশপ্রধান চন্দনা বিক্রমারত্নে সতর্ক করেছেন, 'সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে দাঙ্গাবাজদের প্রতিহত করা হবে'। পুলিশের দাবি, কলম্বো থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের ক্যাথলিক খ্রিস্টান অধু্যষিত শহর চিলাওয়ের এক দোকানদারের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। 'হাসাহাসি করো না। একদিন তোমাদেরও কাঁদতে হবে'; মুসলমান ব্যক্তির দেয়া এই ফেসবুক পোস্টকে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের প্রতি দেয়া বার্তা হিসেবে নেয়। এরপর তার দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকেই দাঙ্গার সূত্রপাত। মূলত, কলম্বোর উত্তরের তিনটি শহরে এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। কিনিয়ামায় মসজিদের দরজা-জানালা ভেঙে দেয়া হয়েছে। মেঝেতে ছুড়ে ফেলা হয়েছে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন। তিন সপ্তাহ আগে ইস্টার সানডে'র দিনে দেশটির তিনটি গির্জা ও কয়েকটি হোটেলে সিরিজ বোমা হামলায় ২৫৩ জন নিহত হয়েছিল। হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস বিবৃতি দেয়ার পর থেকেই দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে হয়রানি ও হুমকির শিকার হয়ে আসছে মুসলমান সম্প্রদায়। সেই ধারাবাহিকতায় রোববার ফেসবুকে শুরু হওয়া বিরোধের জেরে রাজধানী কলম্বোর উত্তরের কয়েকটি জেলায় মুসলমান-বিরোধী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সহিংসতা কবলিত অঞ্চলগুলোর রাস্তায় রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরালো করা হয়েছে। মুসলমানরা যেন প্রতিশোধের শিকার না হয়, সে ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে। শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা সিরাল লাখতিলাখা বলেন, 'আমরা যা বলতে চাইছি, তা হলো- সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং শিগগিরই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে।' পুতালাম জেলায় এক কাঠমিস্ত্রি তার নিজের কর্মস্থলেই দুর্বৃত্তদের উন্মত্ত হিংসার বলি হয়েছেন। একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছে, 'দাঙ্গাকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে তার কারখানায় গিয়ে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে তাকে আহত করে। হাসপাতালে নেয়ার অল্প সময়ের মধ্যে ওই ব্যক্তির মৃতু্য হয়।' ওই কর্মকর্তা জানান, দাঙ্গায় এটিই প্রথম প্রাণহানির ঘটনা। দেশটির অন্য আরেকটি এলাকায় ফেসবুকে সৃষ্ট বিরোধকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো ম্যাসেজিং অ্যাপগুলোর ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। সিংহলি বৌদ্ধপ্রধান শ্রীলংকার দুই কোটি ২০ লাখ লোকের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ। গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রীর : এদিকে, চলমান দাঙ্গার মধ্যে দেশের সব নাগরিকের কাছে সহিষ্ণু আচরণের প্রত্যাশা জানিয়েছেন শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। এর পাশাপাশি গুজব এড়িয়ে চলার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেয়া এক পোস্টের মাধ্যমে দেশের জনগণকে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি। ইস্টারে হামলার ঘটনা সম্পর্কে টুইটে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করতে নিরাপত্তা বাহিনী অব্যাহত প্রচেষ্টা জারি রেখেছে।