মন্তব্য পম্পেও ও খোমেনির

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান কেউই যুদ্ধ চায় না

জ্জ দুই দেশের উত্তেজনাকে 'আকাঙ্ক্ষার সংঘাত' হিসেবে আখ্যায়িত করেন খোমেনি জ্জ যুদ্ধ চাই না, তবে মার্কিন স্বার্থের ওপর আঘাত এলে ছাড় দেয়া হবে না : পম্পেও

প্রকাশ | ১৬ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ খোমেনি ও মার্কিণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও
যাযাদি ডেস্ক দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে উঠলেও কেউই যুদ্ধ চায় না বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ খোমেনি। মঙ্গলবার খোমেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনও যুদ্ধ চান না। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, তার দেশও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না। তিনি বলেন, 'ইরানের কাছ থেকে শুধু 'স্বাভাবিক দেশের' আচরণ চায় যুক্তরাষ্ট্র।' সংবাদসূত্র : রয়টার্স, এএফপি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইরানের নীতি-নির্ধারকদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে খোমেনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সংঘাত সামরিক পর্যায়ে যাবে না এবং আসলে কোনো যুদ্ধই হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মোকাবিলায় ইরানি জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এ সংঘাতে শেষ পর্যন্ত মার্কিনিরা পিছু হটতে বাধ্য হবে। আমরা কিংবা তারা, যারাই মনে করে যুদ্ধ তাদের অনুকূলে যাবে না তাদের কেউই যুদ্ধ চায় না।' এসময় দেশটির প্রেসিডেন্ট, স্পিকার, বিচার বিভাগের প্রধান, তিন বাহিনী প্রধান, বিপস্নবী গার্ড বাহিনীর প্রধান, প্রভাবশালী এমপি, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র এখন যে সরকার ক্ষমতায় আছে তার সঙ্গে আলোচনার অর্থ হবে বিষপান করা। আলোচনা মানে দর কষাকষি করা। কিন্তু তারা যেসব বিষয়ে দর কষাকষি করতে চায় সেগুলো আমাদের শক্তিমত্তার উৎস। আর ওয়াশিংটন এটাও জানে যে, ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ালে তা মার্কিন স্বার্থের অনুকূলে যাবে না।' দুই দেশের চলমান উত্তেজনাকে 'আকাঙ্খার সংঘাত' হিসেবে আখ্যায়িত করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। তিনি বলেন, এই সংঘাতে শেষ পর্যন্ত ইরান বিজয়ীর বেশে উন্নত শির নিয়ে বেরিয়ে আসবে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমাদের দূরপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে তাদের আপত্তি। তারা চায় আমরা আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের পালস্না কমিয়ে ফেলি যাতে তারা আমাদের ওপর হামলা করলে আমরা তাদের ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালাতে না পারি। কেউ বোকার স্বর্গে বাস করলে নিজের শক্তিমত্তার উৎস নিয়ে এমন আলোচনায় বসে। আয়াতুলস্নাহ খোমেনি বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে ইরান যে প্রভাব বিস্তার করেছে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা করতে চায়। এর অর্থ হচ্ছে, আলোচনায় বসে ইরান তার প্রভাব বলয় কমিয়ে ফেলুক। কাজেই দেখা যাচ্ছে, সুস্থ বোধসম্পন্ন মানুষের সঙ্গেও এসব বিষয় নিয়ে ইরান আলোচনায় বসতে পারে না। আর তাদের বর্তমান প্রশাসনে তো সুস্থ নয়। এরা কোনও প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা বা চুক্তি মেনে চলার ধার ধারে না। এদের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। গত বছর ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণার পর ইরানের ওপর চাপ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে ওয়াশিংটন। সেই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে উপসাগরীয় এলাকায় যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার আমিরাতের উপকূলে চারটি ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। মার্কিন তদন্তকারীদের বিশ্বাস ইরান অথবা তাদের সমর্থিত কোনও গ্রম্নপ এই বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত। তবে তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর তেহরান বিস্ফোরণে নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ায় সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও রুশ পররাষ্ট্রন্ত্রী সের্গেই ল্যাবরভের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে পম্পেও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র 'মৌলিকভাবে' ইরানের সঙ্গে কোনও সংঘাত চায় না। তিনি বলেন, 'আমরা ইরানিদের কাছে স্পষ্ট করতে চাই, যদি মার্কিন স্বার্থের ওপর আক্রমণ করা হয় তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে যথাযথ উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানাবো।' এদিকে, ইরানকে মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যে এক লাখ ২০ হাজার সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠকের খবরকে 'ফেইক নিউজ' আখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, মার্কিন বাহিনীর ওপর ইরানের হুমকি মোকাবিলা ও তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন কার্যক্রমে গতি আনা ঠেকাতে মধ্যপ্রাচ্যে সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা পর্যালোচনা করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে মঙ্গলবার রয়টার্স জানিয়েছে, এই খবরকে অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। এর আগে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছে হালনাগাদ করা সামরিক পরিকল্পনা হস্তান্তর করেছেন এক জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা। এই পরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে ইরানের হামলা ঠেকাতে মধ্যপ্রাচ্যে এক লাখ ২০ হাজার সেনা পাঠানো অথবা পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদারের প্রস্তাব। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ সমুদ্রবন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনায় ইরানকে যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে বলেও খবর চাউর হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমগুলো ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পরিকল্পনার বিষয়ে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার মার্কিন ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্যাট্রিক শ্যানন ট্রাম্পের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছে এই পরিকল্পনা হস্তান্তর করেছেন। হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। আর পেন্টাগন এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। উলেস্নখ্য, ২০১৭ সালে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে করা ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। এরপরই তিনি ইরানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি ইরানের সব ধরনের তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। চলতি সপ্তাহে সামরিক চাপ সৃষ্টির জন্য পারস্য উপসাগরে যুদ্ধজাহাজ এবং মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েনের জন্য প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে হামলার বিষয়ে গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন, সিআইয়ের পরিচালক জিনা হ্যাসপেল, ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক ড্যান কোটস এবং জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে একাধিক পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল এক লাখ ২০ হাজার সেনা মোতায়েন, যা শেষ করতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস লাগতে পারে। এদিকে, আমিরাতের ফুজাইরাহ বন্দরে চারটি বাণিজ্যিক জাহাজকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সোমবার সৌদি কর্তৃপক্ষ জানায়, এর মধ্যে তাদের দুটি তেল ট্যাংকার রয়েছে। দুটি সৌদি ট্যাংকারের মধ্যে একটির অপরিশোধিত তেল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাওয়ার কথা ছিল। এছাড়া বিস্ফোরণের লক্ষ্যবস্তু হওয়া চারটি জাহাজের একটি নরওয়েজিয়ান পতাকাবাহী ও একটি আমিরাতের। এ বিস্ফোরণকে 'অন্তর্ঘাতমূলক হামলা' বলে উলেস্নখ করেছে আমিরাত কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সহায়তাও চেয়েছে তারা। মার্কিন একটি সামরিক দলের প্রাথমিক ধারণা, ইরানের ইন্ধনেই ওই হামলা চালানো হয়েছে। গত সোমবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এ বিস্ফোরণের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ট্রাম্প ইরানি সংশ্লিষ্টতার প্রশ্নে বলেন, তেমন 'কিছু ঘটলে তাতে ইরান বাজে ধরনের সমস্যায় পড়বে। আমি আপনাদের তা বলতে পারি। তারা আনন্দে থাকতে পারবে না।' 'বাজে সমস্যা' বলতে ট্রাম্প ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন; জানতে চাইলে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, 'আপনারা নিজেরাই তা বের করে নিতে পারবেন। তারা (ইরান) জানে, আমি কী বোঝাতে চেয়েছি।'