বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সহিংসতায় বলি বিদ্যাসাগরের মূর্তি

জ্জ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর জ্জ মহামনীষীর মূর্তি ভাঙার নিন্দায় সরব বিশিষ্টজনরা

প্রকাশ | ১৬ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তির ভাঙা অংশ
যাযাদি ডেস্ক ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভোটের তান্ডবে ভাঙা হলো ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শো থেকেই তান্ডব চালানোর অভিযোগ উঠছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অধিকাংশের দাবি, শুধু দরজা, জিনিসপত্র ভাঙচুর নয়, অফিস ঘরে বসানো বিদ্যাসাগর-মূর্তিও বিজেপি-সমর্থকেরা আছাড় মেরে ভেঙে দেন। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, শাহের রোড শোয়ে ইট ছুড়ে আক্রমণ চালিয়ে প্রথমে গোলমাল বাধিয়েছে তৃণমূলই। তারাই এখন আমাদের বিরুদ্ধে দায় চাপাচ্ছে। এদিকে, ভাঙচুরের ঘটনায় অমিত শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি এদিকে, মহামনীষীর মূর্তি ভাঙার নিন্দায় সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে পুরো ঘটনার তদন্ত হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পুলিশ কমিশনার রাজেশ কুমার রাতে জানান, তদন্ত শুরু হয়ে গেছে। রাতেই মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলে যান। নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে মূর্তি ভাঙার খবর পান তিনি। এছাড়া পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ১৬ জন হাঙ্গামাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছে। আগুন জ্বালানো হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দলের এ-রকম হাঙ্গামা কখনো দেখিনি। বিহার-রাজস্থান থেকে গুন্ডা এনে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নিন্দার ভাষা নেই। আমি লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। বাংলার মানুষ হয়ে আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে সম্মান দিতে পারি না বিজেপির গুন্ডাদের জন্য।' এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বিধান সরণি দিয়ে শাহের রোড শো চলছিল। অভিযোগ, আচমকা এক দল সমর্থক পাঁচিল টপকে বিদ্যাসাগর কলেজের বিধান সরণি ক্যাম্পাসে ঢুকে হাঙ্গামা শুরু করেন। একটি মোটরসাইকেল ও একটি সাইকেলে আগুন ধরানো হয়। ওই কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নেতা অভিষেক মিশ্রের অভিযোগ, 'আমরা কিছু করিনি। ক্যাম্পাসের ভেতরে 'মোদি গো ব্যাক' লেখা পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওরা পাঁচিল টপকে ঢুকে ইট ছুড়তে শুরু করে।' বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুন্ডু বলেন, 'বিজেপির মিছিল থেকেই তান্ডব চালানো হয়েছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে ওরা। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করছি।' কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য দেবাশিস কর্মকার জানান, অফিসে রাখা তার ল্যাপটপও ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে বিজেপির অভিযোগ, অমিত শাহের রোড শোতে ইট ছুড়ে আক্রমণ চালিয়ে প্রথমে গোলমাল বাধিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রোড শো শুরুর আগেই পোস্টার ফেস্টুন খুলে ফেলে উসকানি দিয়েছে দলটি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গোলমাল শুরু হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাস থেকে। শাহকে কালো পতাকা দেখানোর জন্য গেটের বাইরে জড়ো হয় তৃণমূল সমর্থক। গোলমাল এড়াতে বিজেপির প্রচারের ব্যানার দিয়ে আড়ল করার চেষ্টা করেছিল পুলিশ। অভিযোগ, ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে মিছিল লক্ষ্য করে পানির বোতল, আইসক্রিমের কাপ ছোড়া হয়। এক পর্যায়ে বিজেপি-সমর্থকরা মারমুখী হয়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে ব্যারিকেড উল্টে দেয় তারা। রণক্ষেত্রে রূপ নেয় গোটা এলাকা। টিএমসিপি-সমর্থকদের আড়াল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ। বিজেপি-সমর্থকরা গালমন্দ করতে করতে ইট ছুড়তে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি নেতা মণিশঙ্কর মজুমদারের দাবি, 'ওরা ইট, পেরেক লাগানো লাঠি দিয়ে হামলা করেছে। আমাদের অনেকে আহত হয়েছে।' বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া : প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, 'বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা খুবই লজ্জাজনক ঘটনা। কলেজে ভাঙচুরও হয়েছে দেখলাম। এটা কী ধরনের ব্যাপার হলো? কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। যে-ই ভেঙে থাকুক, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত মর্মান্তিক একটি বিষয়।' শঙ্খ ঘোষ বলেছেন, 'কথা বলবার কোনও ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। অধঃপতনের আর কোন স্তর পর্যন্ত দেখতে হবে, জানি না।' কৃষ্ণা বসু বলেছেন, 'বিদ্যাসাগর মেয়েদের জন্য যা করেছেন, তার জন্য প্রতিদিন সকালে উঠে তাকে স্মরণ করা উচিত। তার মূর্তি ভাঙা হলো! তবে আমি মনে করি, এতে বিদ্যাসাগরের কিছু যায় আসে না।'