হারিকেন 'হেলেন'র তান্ডবে ক্ষয়ক্ষতির রেশ না কাটতেই বুধবার রাতে আমেরিকার ফ্লোরিডায় ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়েছে ভয়াল ঝড় 'মিল্টন'। এতে আমেরিকার অঙ্গরাজ্যটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৩০ লাখের বেশি ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঝড়ের পর বৃহস্পতিবার ড্রোন থেকে এই ছবিটি তোলা হয়েছে ফ্লোরিডার মাতলাচা থেকে -রয়টার্স অনলাইন
ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি আর প্রবল জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সিয়েস্টা কিতে আছড়ে পড়েছে 'ভয়াল' হারিকেন মিল্টন। ঝড়ের তান্ডবে ফ্লোরিডায় ৩০ লাখের বেশি ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেইন্ট লুসি কাউন্টিতে হতাহতের খবরও এসেছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, সিএনএন
স্থানীয় সময় বুধবার রাত ১১টায় ক্যাটাগরি-৩ শক্তি নিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ে হারিকেনটি। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টার দিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'সিএনএন' জানায়, হারিকেন মিল্টনের মূল কেন্দ্রটি ফ্লোরিডা উপদ্বীপ অতিক্রম করছে এবং পূর্ব উপকূল থেকে সরে যাচ্ছে। তবে ক্যাটাগরি-১ হারিকেনের শক্তি ধরে রাখা মিল্টন এখনো উপকূলের বিভিন্ন জায়গায় ঝড়ো বাতাসসহ তান্ডব চালাচ্ছে। সিএনএনের আবহাওয়াবিদ ডেরেক ভেন ড্যাম জানিয়েছেন, হারিকেনের প্রভাবে ফ্লোরিডার ট্রেজার উপকূলে একাধিক টর্নেডো সৃষ্টি হতে পারে।
মহাশক্তিশালী এই হারিকেনের প্রভাবে এখন পর্যন্ত ৩০ লাখ মানুষ বিদু্যৎহীন হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে হারিকেনের প্রভাবে সৃষ্ট টর্নেডোর কারণে ঘরবাড়ি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে টর্নেডো আঘাত হেনেছে, সেখানকার প্রায় সব বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হারিকেন মিল্টন এতটাই শক্তি নিয়ে আঘাত হেনেছে যে, উদ্ধারকারীরাও তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। যখন ঝড়টি পুরোপুরি সরে যাবে তখন তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করবেন।
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস 'নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার সময় পেরিয়ে গেছে' বলে সতর্ক করার পরপরই হারিকেন মিল্টন উপকূলে আঘাত হানে। এর আগে বুধবার লাখ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান।
আমেরিকার 'ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার' জানিয়েছে উপকূল অতিক্রম করার সময় মিল্টন ছিল তিন মাত্রার হারিকেন। উপকূলে উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে তা দুই মাত্রার হারিকেনে পরিণত হয়। এখন তা এক মাত্রায় নেমে এসেছে। তবে মাত্রা কমলেও এই ঝড় এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী। প্রবল বৃষ্টি ঝরানোর কারণে বিভিন্ন স্থানে হড়কা বান আর জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পরে বলেও সতর্ক করেছে হারিকেন সেন্টার।
ফ্লোরিডার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অরল্যান্ডো এবং পূর্ব উপকূলের ডেটোনা বিচ শহরের আশপাশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একই ধরনের সতর্কতা জারি করা হয়েছে ফ্লোরিডার মধ্যভাগের পুরো এলাকাজুড়ে।
জাতীয় আবহাওয়া সার্ভিসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, আকস্মিক বন্যার সতর্কতার অর্থ একটি বন্যা 'আসন্ন বা ঘটছে' এবং লোকজনের অবিলম্বে উঁচু স্থানে সরে যাওয়া উচিত। আকস্মিক বন্যা আঘাত হানতে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা সময় নিতে পারে। এমনকি ওই সময় বৃষ্টি না হওয়া এলাকাগুলোতেও আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।
ফ্লোরিডার পূর্ব উপকূলের সেইন্ট লুসি কাউন্টির শেরিফ অফিস জানিয়েছে, ওই এলাকায় ঝড়ের মধ্যে একাধিক মানুষের মৃতু্যর বিষয়ে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তবে মৃতের সংখ্যা বা আর কোনো বিস্তারিত তথ্য শেরিফ অফিস তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পরেনি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর আগে সতর্ক করে বলেছিলেন, এটি 'শতাব্দীর অন্যতম ধ্বংসাত্মক হারিকেন' হতে যাচ্ছে এবং সরকার সেভাবে তা মোকাবিলার চেষ্টা করছে।
মিল্টন আঘাত হানার মাত্র দিন দশেক আগে হারিকেন 'হেলন'র তান্ডব দেখেছে ফ্লোরিডা। সেপ্টেম্বরের শেষে ওই ঝড়ে ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, সাউথ ক্যারোলাইনা, টেনেসি, ভার্জিনিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনায় অন্তত ২২৫ জনের প্রাণ গেছে।